শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন হয়নি ৪ বছরেও, শিক্ষক মাত্র ১১
নেত্রকোনায় শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয় উদ্বোধনের চার বছর পেরিয়ে গেলেও অবকাঠামোগত তেমন কোনো উন্নয়ন হয়নি। সরকারি এক প্রতিষ্ঠানের ভবনকে অস্থায়ী ক্যাম্পাস হিসেবে ব্যবহার করে চলছে প্রশাসনিক কার্যক্রম ও পাঠদান। এদিকে, চার শতাধিক শিক্ষার্থীর জন্য রয়েছেন ১১ জন শিক্ষক। নতুন নিয়োগ ঝুলে আছে বিজ্ঞপ্তির মধ্যে। অন্যদিকে, মাত্র ৮৭ জন শিক্ষার্থীর জন্য দুটি ভবন ভাড়া নিয়ে পরিচালিত হচ্ছে ছাত্র-ছাত্রী নিবাস। অন্যরা থাকছেন নিজ খরচে মেসে। রয়েছে নানা অব্যবস্থাপনার অভিযোগ। সব মিলিয়ে ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষাকার্যক্রম।
নেত্রকোনার শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর গত অক্টোবরে চার বছর পূর্ণ হয়েছে। জানা গেছে, গত ২০১৭ সালের ৩০ জানুয়ারি মন্ত্রিসভায় শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন নীতি পাস হয়। পরের বছর ২০১৮ সালের ১১ অক্টোবর ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর নামে বিশ্ববিদ্যালটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এরপর নেত্রকোনা পৌর সভার রাজুর বাজার এলাকায় টিটিসির একটি তিনতলা ভবনে যাত্রা শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়টি। যদিও সদর উপজেলার নেত্রকোনা-মোহনগঞ্জ সড়কের রাজুর বাজার এলাকায় ৫০০ একর জমির ওপর চলছে স্থায়ী ক্যাম্পাস তৈরির কাজ।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়টির নির্মাণ কাজ চলছে কচ্ছপগতিতে। বিশ্ববিদ্যালয়টির জনসংযোগ কর্মকর্তা এনামুল হকের দাবি, ৫০০ একর বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় মাটি ভরাটের কাজ এরই মধ্যে ৪৬ ভাগ শেষ হয়েছে। ১০তলা একাডেমিক ভবন, অ্যাডমিন ও টিএসসি ভবনের নির্মাণ কাজ চলছে। যদিও তার অবয়ব মাটির ওপর পর্যন্ত এখনও ওঠেনি।
কাজের গতি সম্বন্ধে জানতে চাইলে এনামুল হক এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘করোনার কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্মাণকাজ কিছুটা পিছিয়েছে।’
এদিকে, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া সম্প্রতি প্রকল্প এলাকায় কাজের অগ্রগতি ও কাজের মান পরিদর্শন করেন। এ সময় ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনার শফিকুর রেজা বিশ্বাস, নেত্রকোনার জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ উপস্থিত ছিলেন। জ্যেষ্ঠ সচিব পরিদর্শনের সময় কাজের গতি বাড়ানোর জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন।
শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয় নির্মাণ প্রকল্পসূত্রে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পরই বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নে একনেকে দুই হাজার ৬৩৭ কোটি ৪০ লাখ ৯৯ হাজার টাকা অনুমোদন দেওয়া হয়। সদর উপজেলার রামপুর, সাহিলপুর, গোবিন্দপুর, কান্দুলিয়া ও রায়দুমরুহি মৌজায় ২৭৭ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রায় ৫০০ একর জায়গা অধিগ্রহণ করা হয়। অধিগ্রহণ হওয়া ওই জায়গা নিচু হওয়ায় ৬৫ লাখ ঘন মিটার বালু ভরাটের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয় প্রায় ২৪০ কোটি টাকা।
গত বছরের ২৮ সেপ্টেম্বর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স নুরুজ্জামান খানকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। আগামী বছরের ২৭ মার্চের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা। কিন্তু এখন পর্যন্ত কাজের গড় অগ্রগতি মাত্র ৪৬ শতাংশ।
গত ১ জানুয়ারি ১১৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ১০ তলাবিশিষ্ট একাডেমিক ভবন এবং ১০৪ কোটি টাকা ব্যয়ে চার তলাবিশিষ্ট প্রশাসনিক ভবন নির্মাণের কার্যাদেশ দেওয়া হয়। আগামী বছরের জুনের মধ্যে দুটি ভবনের কাজ শেষ হওয়ার কথা। একাডেমিক ভবনের কাজ পায় ই-ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড তাহের ব্রাদার্স লিমিটেড নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। প্রশাসনিক ভবনের কাজ পায় বিশ্বাস ট্রেডিং অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন। প্রতিষ্ঠান দুটি পাইলিংয়ের কাজ শুরু করেছে মাত্র।
জানতে চাইলে শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকল্প পরিচালক ও অতিরিক্ত সচিব মো. আনিস মাহমুদ এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘করোনার কারণে কাজের সময়সীমা কিছুটা বিলম্বিত হয়েছে। প্রকল্প এলাকায় বালুভরাট, একাডেমিক ও প্রশাসনিক ভবন নির্মাণ কাজ চলমান। ওই সমস্ত কাজ এগিয়ে চলছে। আশা করি, আগামী বছরের জুন মাস নাগাদ কাজের অগ্রগতি দৃশ্যমান হবে। এ ছাড়া ছয়টি প্রকল্প অনুমোদনের জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।’
বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম কবীর এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘দুমাস হলো আমি এখানে যোগদান করেছি। নিয়মিত তদারকি করছি। প্রকল্প এলাকায় স্থাপনা নির্মাণের কাজ চলছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান, কনসালটেন্টসহ সংশ্লিষ্টদের নিয়ে বসা হয়েছিল। ভবন নির্মাণের পাইলিংয়ের কাজ চলছে। আশা করছি, আগামী বছরের মাঝামাঝি সময়ে কয়েকটি ভবন নির্মাণ হয়ে যাবে।’
অন্যদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়সূত্র বলছে, ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষে বাংলা, ইংরেজি, অর্থনীতি বিভাগে শিক্ষার্থী ভর্তি হন। এর পরের বছর থেকে খোলা হয় কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং। সব মিলিয়ে এখন বিশ্ব বিদ্যালয়টিতে অধ্যয়ন করছেন ৩১২ জন। এ ছাড়া এ বছর নতুন শিক্ষাবর্ষে আরও ১২০ জন ভর্তির প্রক্রিয়া চলমান। সব মিলিয়ে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা হবে ৪৩২ জন।
জানা গেছে, এই চার শতাধিক শিক্ষার্থীর জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ভবন ভাড়া নিয়ে একটি ছাত্র ও একটি ছাত্রীনিবাস পরিচালনা করছে। ৪৬ ছাত্রের জন্য জেলা শহরের সাতপাইয়ে এবং ৪১ ছাত্রীর জন্য নাগড়া এলাকায় এই ভবন ভাড়া নেওয়া হয়েছে। বাকিরা থাকছেন মেসে কিংবা ভাড়া বাসায়।
বিশ্ববিদ্যালয়সূত্রে আরও জানা গেছে, নতুন ভর্তি হলে চার শতাধিক শিক্ষার্থীর জন্য শিক্ষক থাকছেন মাত্র ১১ জন। আর কর্মকর্তা ও কর্মচারী আছেন ৪৫ জন। গত চার বছরে নতুন করে কোনো শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়নি। আর শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, প্রধানমন্ত্রীর নামে গড়া বিশ্ববিদ্যালয়টি দ্রুততার সঙ্গে সব সুবিধা দেবে বলে মনে করেছিলেন তাঁরা। কিন্তু, এখানে পর্যাপ্ত শিক্ষক তো নেই, নেই গবেষণাগারও। ক্যান্টিন, খেলাধুলা, শিল্প-সংস্কৃতিচর্চাসহ বিনোদনের কোনো সুযোগই পাচ্ছেন না তাঁরা।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার সুব্রত কুমার আদিত্য এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘অধ্যাপক, সহকারী অধ্যাপক পদে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে। উপযুক্ত প্রার্থী আবেদন করেননি।’