পাস করলেন বাসিরন, বললেন ‘খুব শান্তি লাগছে’

Looks like you've blocked notifications!
প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় পাস করে উৎফুল্ল বাসিরন খাতুন। ছবি : এনটিভি

‘আমার খুব ভালো লাগছে। আশা যা কইরুনু সবটুকুনই পূরণ হয়েছে। মনে খুব আরাম লাগছে। আমার সাথে যারা পরীক্ষা দিয়েছিল তারাও সবাই পাস করেছে শুনে খুব শান্তি লাগছে।’

আজ বৃহস্পতিবার প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ হওয়ার পর এভাবেই নিজের আনন্দের কথা জানান ৬৩ বছর বয়সী বাসিরন খাতুন।

চলতি বছর মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার হোগলবাড়িয়া পূর্বপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় অংশ নেন বাসিরন। জিপিএ ৩ পেয়ে ওই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন তিনি। ওই স্কুল থেকে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় ছয়জন অংশ নেয়। তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি নম্বর পেয়েছেন তিনি। বাসিরন জানিয়েছেন, তিনি পড়াশোনা চালিয়ে যাবেন। ভর্তি হবেন ষষ্ঠ শ্রেণিতে।

মেহেরপুর জেলা শহর থেকে ৩৫ কিলোমিটার পূর্বদিকে গাংনী উপজেলার হোগলবাড়িয়া গ্রামের মাঠপাড়ার বাসিন্দা বাসিরন খাতুন। স্বামী রহিল উদ্দিন মারা গেছেন আগেই। এক ছেলে ও দুই মেয়ের মা তিনি। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয়ের তথ্য মতে, প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বয়স ছিল বাসিরনের।

হোগলবাড়িয়া পূর্বপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, স্কুলের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা অপেক্ষা করছেন ফলাফলের জন্য। প্রধান শিক্ষক হেলাল উদ্দিন ফলাফল নিয়ে কখন স্কুলে পৌঁছাবেন সে অপেক্ষায় সময় কাটতে থাকে সবার। প্রধান শিক্ষক ফলাফল হাতে পেয়ে মোবাইলের মাধ্যমে স্কুলে জানিয়ে দিলে শুরু হয় উল্লাস। বাসিরন বনে যান তারকা। চেনা-অচেনা সবাই বাসিরনের সঙ্গে সেলফি ও ছবি তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন।

এরপরই বাসিরনকে অভিনন্দন জানাতে স্কুলে ছুটে যান সংরক্ষিত মহিলা সংসদ সদস্য (মেহেরপুর ও চুয়াডাঙ্গা আসন) সেলিনা আখতার বানু, মেহেরপুর জেলা পরিষদের ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের নবনির্বাচিত সদস্য মোহাম্মদ আলী, বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির কমিটির সভাপতি আহসানুল্লাহ মোহনসহ গ্রামের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা।

সংসদ সদস্য সেলিনা আখতার বানু বাসিরনের মুখে মিষ্টি তুলে দেন। পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘বাসিরন মেহেরপুরের গর্ব। তাঁকে দেখে বয়স্ক মানুষ লেখাপড়ায় আগ্রহী হবে। তাঁকে দেখে যাতে বয়স্করাও লেখাপড়া শিখে বলতে পারে আমরাও পারি।’ তিনি আরো বলেন, ‘তাঁর ফলাফল হবে জানতে পেরে আমি তাঁর কাছে ছুটে এসেছি। এর আগে পরীক্ষার সময় একদিন এসেছিলাম। তখন তিনি তাঁদের স্কুলের ভবনের জন্য আমাকে বলেছিলেন। আমি এরই মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রীকে বিষয়টি জানিয়েছি। খুব শিগগিরই বাসিরনের স্কুলের ভবন তৈরি হবে।’

বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি আহসান উল্লাহ মোহন বলেন, ‘বাসিরন পাস করায় আমি খুবই আনন্দিত।’

হোগলবাড়িয়া পূর্বপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘আমার মতো খুশি আর কে হবে। এত বয়স্ক একজন মানুষকে আমার স্কুলে ভর্তি করেছিলাম। পারে কি পারে না এ ভয়েই কেটেছে ছয় বছর। তাঁর একাগ্রতা আর নিষ্ঠায় আজ তিনি প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করেছেন।’

‘আজ সত্যিই আমাদের গর্বের দিন। তাঁকে শেখাতে পেরেছি। লেখাপড়ার কাছে বয়স কিছুই না সেটা আজ বাসিরনের মাধ্যমে আমরা সবার সামনে তুলে ধরতে পেরেছি।’ বলছিলেন বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আনারকলি।

বাসিরনের সঙ্গে পাশ করা সিয়াম উদ্দিন জানায়, ‘বাসিরন দাদি খুব মনোযোগী ছাত্রী। তাঁকে লেখাপড়া করতে দেখে আমরাও লেখাপড়ার প্রতি মনোযোগ দিয়েছি।’

এদিকে বাসিরনের পাস করার খবর শুনে তাঁর ভাই, ছেলে মহির উদ্দিন, নাতি জাহিদ হোসেন, জসিম উদ্দিন মিষ্টি নিয়ে স্কুলে যান সবাইকে মিষ্টি মুখ করাতে।

ছেলে মহির উদ্দিন বলেন, ‘মা পাস করেছেন। এতে আমার খুব আনন্দ লাগছে। সেই খুশিতে স্কুলের সবাইকে মিষ্টি খাওয়াতে এসেছি। মা যত দূর ইচ্ছা লেখাপড়া করবেন। আমরা তাঁর লেখাপড়ার জন্য সাহায্য করব।’

বাসিরনকে নিয়ে গত ১২ নভেম্বর ‘৬৩-তেও অদম্য, পিএসসি দেবেন বাসিরন’ শিরোনামে ছবিসহ খবর প্রকাশিত হয়। এরপর ১৬ নভেম্বর এনটিভিতে খবর প্রচার করা হয়।