ব্রিসবেনকে পেছনে ফেলে কুলিয়ারচরের বিশ্বরেকর্ড!

Looks like you've blocked notifications!
বিশ্বের সবচেয়ে বড় ব্যবহারিক বিজ্ঞান ক্লাস পরিচালনা করেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল। ছবি : এনটিভি

বিজ্ঞানের ব্যবহারিক ক্লাস করে অস্ট্রেলিয়ার ব্রিসবেনকে পেছনে ফেলে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে নাম লেখাল কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর উপজেলার শিক্ষার্থীরা।

আজ বুধবার দুপুর ১২টার দিকে তিন হাজার দুইশর বেশি শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে কুলিয়ারচরে নতুন এ বিশ্বরেকর্ড তৈরি হয়েছে।

এর আগে অস্ট্রেলিয়ার ব্রিসবেনের কুইন্সল্যান্ডে অনুষ্ঠিত এক ব্যবহারিক ক্লাসে দুই হাজার ৯০০ শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছিল। সেই রেকর্ড পেছনে ফেলে নতুন রেকর্ড হলো কুলিয়ারচরে। 

কুলিয়ারচর উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ‘স্কুল পর্যায়ের ছাত্রছাত্রীদের জন্য বিজ্ঞানবিষয়ক বিশ্বের সবচেয়ে বড় ব্যবহারিক ক্লাস’-এর আয়োজন করা হয়। ক্লাস পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল। এর পাশাপাশি এ ক্লাসে সহায়তা করার জন্য কুলিয়ারচর উপজেলার ৮০ জন শিক্ষককে নিযুক্ত করা হয়।

আর এই পুরো আয়োজনে সহযোগিতা করেছে শাবিপ্রবির বিজ্ঞানবিষয়ক সংগঠন ‘বিজ্ঞানের জন্য ভালোবাসা’। 

‘বিশ্বের সবচেয়ে বড় ব্যবহারিক ক্লাস’ আয়োজনে নেতৃত্ব দেন শাবিপ্রবির কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের কর্মকর্তা ও ক্লাসের ব্যবহারিক ক্লাসের স্বেচ্ছাসেবী সমন্বয়ক মো. জয়নাল আবেদিন। তাঁর নেতৃত্বে শাবিপ্রবি থেকে অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থীর একটি প্রতিনিধিদল এসে স্বেচ্ছাসেবীর দায়িত্ব পালন করে।

কুলিয়ারচর উপজেলা থানার মাঠে আন্তর্জাতিক মানের সুবিধাসম্পন্ন শ্রেণিকক্ষে অনুষ্ঠিত বিজ্ঞানের সবচেয়ে বড় এ ব্যবহারিক ক্লাসে পঞ্চম থেকে সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ব্যাটারি, ইলেকট্রিক ওয়্যার, লোহা, সুই ইত্যাদি ব্যবহার করে চুম্বক ধর্মের ব্যবহার শিক্ষা দেওয়া হয়। পাশাপাশি ই-মেইল এবং তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তির (আইসিটি) ওপর প্রাথমিক শিক্ষা দেওয়া হয়।

সকাল ১০টা থেকে এক ঘণ্টার ট্রায়াল ক্লাসের পর দুপুর ১২টায় মূল পর্ব শুরু করার জন্য ক্লাসে আসেন অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল। এর আগে কুলিয়ারচরের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে তিন হাজার দুইশর বেশি শিক্ষার্থী এসে ক্লাসে প্রবেশ করে। 

দুপুর ১২টার আগে বৃহৎ এ ব্যবহারিক ক্লাসের আয়োজক ও কুলিয়ারচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ড. ঊর্মি বিনতে সালাম এক স্বাগত বক্তব্যে বলেন, ‘আজ কুলিয়ারচর ও বাংলাদেশিদের জন্য এক গর্বের দিন। আমরা সবাই আজ এ অনুষ্ঠানের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি। আমাদের লক্ষ্য এখান থেকে আগামীর স্টিফেন হকিং কিংবা মার্ক জাকারবার্গদের বের করে নিয়ে আসা।’

ইউএনও বলেন, ‘এখানে স্কুল পর্যায়ের  তিন হাজার দুইশর অধিক ছাত্রছাত্রীকে স্বনামধন্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালের তত্ত্বাবধানে পাঠদান করা হচ্ছে। প্রথম পর্বে ব্যবহারিক ক্লাসের পর দ্বিতীয় পর্বে আলোচনা সভা। আমার বিশ্বাস, উপজেলা প্রশাসনের এ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হওয়ার পাশাপাশি এ দেশের আগামী প্রজন্মের একটি বড় অংশ বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তিতে উৎসাহিত হবে।’

বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক ব্যবহারিক ক্লাসের পর এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সংসদ সদস্য (এমপি) ও বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনসহ জেলা প্রশাসনের বিভিন্ন কর্মকর্তা।

অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় বিজ্ঞান সপ্তাহ উপলক্ষে দেশটির ব্রিসবেনে ২০১৬ সালের ১৬ আগস্ট একসঙ্গে দুই হাজার ৯০০ স্কুল ছাত্রছাত্রীকে নিয়ে ব্যবহারিক বিজ্ঞান ক্লাসের আয়োজন করা হয়েছিল। আর সেই আয়োজন তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক বিশ্বের সবচেয়ে বড় ব্যবহারিক ক্লাসের স্বীকৃতিও পেয়েছিল। মাত্র সাড়ে চার মাসের ব্যবধানে ব্রিসবেনকে পেছনে ফেলে বিশ্বরেকর্ড গড়ল কুলিয়ারচর।