সাক্ষাৎকার : শফিউল আলম ভূঁইয়া

‘নীল দল আওয়ামী লীগের সাথে সম্পৃক্ত নয়’

Looks like you've blocked notifications!

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টেলিভিশন, চলচ্চিত্র ও ফটোগ্রাফি বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আ জ ম শফিউল আলম ভূঁইয়া। তিনি  বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সিনেট সদস্য। একই সঙ্গে বিজয় একাত্তর হলের প্রাধ্যক্ষ ও নীল দলের জ্যেষ্ঠ নেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক বিষয় নিয়ে এনটিভি অনলাইনের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন এনটিভি অনলাইনের বিশ্ববিদ্যালয় সংবাদদাতা মামুন তুষার

এনটিভি অনলাইন : গত ২২ মে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট প্রতিনিধি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে আওয়ামী লীগ সমর্থিত  নীল দলের ৩৩ জন এবং বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী সমর্থিত দুজন সিনেট প্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছেন। প্রতিনিধিদের নিয়ে আপনাদের মধ্যে কোনো আলাপ আলোচনা হয়েছে কি না?

শফিউল আলম ভূঁইয়া : এটা একটা রুটিন বিষয়। আমরা নির্বাচিত হয়েছি। আমাদের মধ্যে অবশ্যই আলাপ-আলোচনা হয়েছে।

এনটিভি অনলাইন : আলোচনায় কোন বিষয়টি গুরুত্ব পেয়েছে বা কী নিয়ে আলোচনা হয়েছে?

শফিউল আলম ভূঁইয়া : বিশ্ববিদ্যালয়ের পলিসি কী হবে, তার মান কী হবে; এ নিয়ে সিনেট সদস্যদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা হয়েছে। আমাদের সভা হবে। এখানে অবশ্যই সিনেট সদস্যরা তাঁদের নিজ নিজ মতামত ব্যক্ত করবেন। বাজেট কোন খাতে বরাদ্দ করা উচিত তা নিয়ে অবশ্যই আলোচনা হবে।

এনটিভি অনলাইন : নীল দলের কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে চলতি বছরের এপ্রিলে। দীর্ঘ এই সময়ে কমিটি না হওয়ার বিষয়টি কীভাবে দেখছেন?

শফিউল আলম ভূঁইয়া : নীল দলের কোনো সংবিধান নেই। এটা একটা ইনফরমাল বডি। আমাদের একটা প্রাকটিস যে আমরা প্রতিবছর কমিটি চেঞ্জ করি। তো এ বছর নানা কারণে কমিটি চেঞ্জ করা হয়নি। তবে গত মাসখানেক আগে আমরা অধ্যাপক আব্দুল আজিজকে তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে মনোনীত করেছি।

এনটিভি অনলাইন : সিনেট নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নীল দলের বিরোধ প্রকাশ্য হয়ে উঠেছিল। এটা কি দলীয় বৈষম্য নাকি ভুল বোঝাবুঝি?

শফিউল আলম ভূঁইয়া : এটা অবশ্যই ভুল বোঝাবুঝি। কারণ নীল দল একটা বড় দল। বড় দলের নানা ধরনের মত থাকবে, তর্ক-বিতর্ক থাকবে। এটা খুব একটা স্বাভাবিক ঘটনা। সেই তর্ক-বিতর্কের জের ধরে আমরা একটা প্যানেলে উপনীত হয়েছি। তো এটা ভুল বোঝাবুঝি। আমরা এক প্যানেলে নির্বাচন করেছি। এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে আমরা অভূতপূর্ব বিজয় অর্জন করেছি।

এনটিভি অনলাইন : বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাডার-কেন্দ্রিক ছাত্ররাজনীতি কিংবা ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের বিষয়ে নীল দলের ভূমিকা কী হওয়া উচিত?

শফিউল আলম ভূঁইয়া : কোনো ছাত্র সংগঠন বা দলের মধ্যে নীল দলের কোনো সম্পর্ক নেই। নীল দল কোনো রাজনৈতিক দল না। নীল দল হচ্ছে প্রগতিশীল শিক্ষকদের একটা প্লাটফর্ম। প্রগতিশীল শিক্ষকরা বা নীল দলের সঙ্গে যাঁরা আছেন, তাঁরা সবাই বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী। নীল দল আওয়ামী লীগ বা কোনো ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়। তবে নীল দলের কোনো সদস্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে পারে।

এনটিভি অনলাইন : বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রাজনীতি কি শিক্ষার সার্বিক পরিবেশ নষ্ট করছে? নীল দলের একজন জ্যেষ্ঠ নেতা হিসেবে আপনার অভিমত কী?

শফিউল আলম ভূঁইয়া : শিক্ষক রাজনীতি ছাত্রদের শিক্ষার পরিবেশ ব্যাহত করছে তা আমার মনে হয় না। আমি বিশ্বাস করি, শিক্ষকরা তাঁদের রাজনীতিটাকে ক্লাসে নিয়ে যান না। শিক্ষকরা তাঁদের মতো করে রাজনীতি করেন। আমি তো নিয়মিত ক্লাস নিই। আমার বিশ্বাস, এটা অন্য শিক্ষকরাও তাই করেন। তবে দেখার বিষয় যে, কোনো শিক্ষক যদি ক্লাস না নিয়ে রাজনীতি করেন তবে তাঁর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।

এনটিভি অনলাইন : আপনার চালু করা বিভাগ নিয়ে কিছু বলুন।

শফিউল আলম ভূঁইয়া : আমরা গর্বের সঙ্গে বলতে পারি যে, আমাদের বিভাগের বয়স পাঁচ বছরের একটু বেশি হয়েছে। এর মধ্যেই টেলিভিশন ও চলচ্চিত্র অঙ্গনে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। আমাদের শিক্ষার্থীরা চলচ্চিত্র নিয়ে শুধু বাংলাদেশে নয়; বিভিন্ন দেশ থেকেও পুরস্কার নিয়ে আসছে। আমরা জুলাইয়ের মাঝামাঝি সময়ে এক কোটি ১০ লাখ টাকা ব্যয়ে অ্যানিমেশন ল্যাব তৈরি করতে যাচ্ছি। সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ষষ্ঠ তলায় একটি টেলিভিশন স্টুডিও তৈরি করতে যাচ্ছি। আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস টেলিভিশন চালু করব, যা হবে অনলাইনভিত্তিক। সেখানে আমাদের ছাত্ররা হাতে-কলমে টেলিভিশনের পড়াশোনা শিখতে পারবে।

এনটিভি অনলাইন : বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক কেমন হওয়া উচিত?

শফিউল আলম ভূঁইয়া : বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৃতিটা সবাইকে বুঝতে হবে। এটা কোনো কলেজ বা স্কুলের মতো নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা হচ্ছে স্কলার আর শিক্ষকরা হচ্ছে সিনিয়র স্কলার। এখানে জুনিয়র (ছাত্র) ও সিনিয়রদের (শিক্ষক) মধ্যে তর্ক-বিতর্ক হবে। এখানে সম্পর্কটা অনেকটা অভিভাবক আবার কখনো বন্ধুর মতো। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যেও একটা চমৎকার সম্পর্ক রয়েছে। এই সম্পর্কটা আরো নিবিড় করতে হলে দুই পক্ষকেই ভূমিকা রাখতে হবে।

এনটিভি অনলাইন : সিনেট প্রতিনিধি নির্বাচনের দিনে শিক্ষার্থীরা ছাত্র সংসদ বা ডাকসু নির্বাচন নিয়ে আন্দোলন করেছিল। তো ডাকসু নির্বাচন নিয়ে আপনারা কী ভাবছেন?

শফিউল আলম ভূঁইয়া : আমি মনে করি, ডাকসু নির্বাচন দেওয়া উচিত। এ জন্য ছাত্র সংগঠনগুলোর নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করতে হবে। আবার একটা জিনিস মাথায় রাখতে হবে যে, এ নির্বাচন করতে গেলে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। কেননা আমাদের গত আট বছরের মধ্যে একদিনের জন্যও ক্যাম্পাস বন্ধ হয়নি। সেশনজট নেই। সেই অবস্থানটা যদি ধরে রেখে ডাকসু নির্বাচন করা যায়, তবে আমরা ডাকসু নির্বাচনের পক্ষে। প্রশাসন বিষয়টি নিয়ে নিশ্চয়ই ভাবছে।

এনটিভি অনলাইন : আপনাকে অনেক ধন্যবাদ,

শফিউল আলম ভূঁইয়া : আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ।