ছুটিতে রাবির হল বন্ধ, শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ

Looks like you've blocked notifications!

জামায়াত-শিবিরের হরতাল-অবরোধসহ কয়েক বছর ধরে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে বন্ধ করে দেওয়া হতো রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) আবাসিক সব হল। তবে বর্তমানে কোনো রাজনৈতিক অস্থিরতা নেই। নেই কোনো বড় ধরনের সংকট। তবুও রাবির আবাসিক সব হল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে এই রোজা ও ঈদের ছুটিতে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান প্রশাসন দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে ধারাবাহিকভাবে চলছে এই হল বন্ধের প্রহসন। ফলে থিসিস, মনোগ্রাফ কিংবা পরীক্ষাসহ পড়াশোনার চাপ থাকলেও বাধ্য হয়ে আগেই বাড়ি ফিরে যেতে হয় শিক্ষার্থীদের। এতে সাধারণ শিক্ষার্থীরা যেমন ক্ষতির শিকার হচ্ছে, তেমনি তাঁদের মধ্যে বাড়ছে ক্ষোভ।

গত ৯ জুন ক্লাস ও ১১ জুন সব আবাসিক হল বন্ধ করে দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কিন্তু প্রশাসনিক কাজ চলে ১৪ জুন পর্যন্ত। প্রশাসনিক কার্যক্রম চালু রেখে হল বন্ধ করে দেওয়ায় ভোগান্তির শিকার হয়েছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

এদিকে, হল বন্ধ হলেও গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে মনোগ্রাফ জমা নেওয়া হয় ১২ জুন পর্যন্ত। ফলে যেসব শিক্ষার্থী মনোগ্রাফ জমা দিয়েছেন, হল বন্ধ হওয়ায় তাঁরা পড়েন বিপাকে। এতে ক্ষোভ দেখা দেয় তাঁদের মধ্যে।

এমনই একজন শিক্ষার্থী হুমায়ুন কবির তাঁর ফেসবুক পেজে লেখেন, ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে ফালতু সিস্টেম হলো আবাসিক হল বন্ধ করে দেওয়া। এখন রাজনৈতিক গোলযোগ নাই, ক্যাম্পাসে অস্থিরতা নাই, তাহলে আবাসিক হল বন্ধ করার যৌক্তিকতা কি? বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল বন্ধ হচ্ছে ১১ তারিখে, আমাদের গবেষণা মনোগ্রাফ জমা দেওয়ার তারিখ ১২। বিশ্ববিদ্যালয়ের যতসব ফালতু সিস্টেম। দুই দিন পর পর হল বন্ধ। যতসব ফালতু সিস্টেম।’

সোহরাওয়ার্দী হলের আবাসিক শিক্ষার্থী এমদাদুল এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘বাসায় গেলে একদম পড়াশোনা হয় না। সামনে পরীক্ষা, তাই কয়েক দিনের জন্য মেসে উঠেছি। ঈদের দু-একদিন আগে বাড়ি যাব। হল ভ্যাকান্ট দেওয়া ঠিক নয়। তার পরও দেয়, কী করব?’

এ ব্যাপারে ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক মো. ছাদেকুল আরেফিন মাতিন এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘হলের অফিস খোলা আছে। অফিস খোলা থাকার মাত্র তিন দিন আগে হল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আর প্রভোস্ট কাউন্সিল মিটিং করে প্রশাসনের কাছে হল বন্ধ করে দেওয়ার ব্যাপারে সুপারিশ করেছেন। তবে হল বন্ধের পেছনে নিরাপত্তা সমস্যা নয়, হল ব্যবস্থাপনা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার মতো বিষয়গুলো কাজ করেছে।’

তবে প্রশাসনিক কাজকর্ম চলার তিন দিন আগেই হল বন্ধ করে দেওয়ার মতো এমন সিদ্ধান্ত প্রভোস্ট কাউন্সিল কেন নিল—সে ব্যাপারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক এস এম জাহিদ হোসেন বলেন, ‘দেশের হালচাল, ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি ভালো নয়। ঈদের ছুটির সময় পুলিশ থাকবে না। ছাত্রনেতাদের স্বভাব কেমন, তা সবার জানা। অল্প কিছু সাধারণ শিক্ষার্থীর জন্য বড় ধরনের কোনো দুর্ঘটনা ঘটে যাক, এটা আমাদের কাম্য নয়।’

এ ব্যাপারে উপাচার্য অধ্যাপক মুহম্মদ মিজানউদ্দিন বলেন, ‘যখন ক্লাস বন্ধ হলো, তখন সবাই চলে যেতে শুরু করল। ভিন্ন ছুটির সময় শিক্ষার্থীরা কম থাকায় ক্যাম্পাস অনেকটাই ফাঁকা থাকে। এতে চুরি হয়, ছিনতাই হয়। তাই সার্বিক নিরাপত্তার স্বার্থে প্রভোস্ট কাউন্সিলের সুপারিশে আমরা হল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিই।’

হল বন্ধের ব্যাপারে পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষক ড. মোহাম্মদ নাসের বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে সব ধরনের হল বন্ধের বিরুদ্ধে। এমনকি ঈদের দিনও হল খোলা থাকা উচিত। ভালো শিক্ষক যাঁরা আছেন, তাঁরা সব সময়ই গবেষণা নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। তাই হল বন্ধ হলে শিক্ষার্থীরা বাড়ি চলে যায়, আর ওই শিক্ষকদেরও পড়তে হয় বিপাকে। এতে রিসার্চের ক্ষতি হয়। হল বন্ধ করে দেওয়া অসুস্থ সমাজের লক্ষণ, যা শিক্ষাব্যবস্থাকে ধ্বংস করে।’