কুবির উপাচার্যকে নিজ কার্যালয়ে প্রবেশে বাধা

Looks like you've blocked notifications!

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) শিক্ষক মাহবুবুল হক ভূঁইয়াকে এক মাসের ছুটিতে পাঠানোর সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবিতে উপাচার্যকে তাঁর কার্যালয়ে প্রবেশে করতে দেননি শিক্ষক সমিতি ও বঙ্গবন্ধু পরিষদের নেতারা। আজ রোববার বেলা ১১টায় নিজ কার্যালয়ে যাওয়ার সময় প্রশাসনিক ভবনের নিচতলায় তাঁকে বাধা দেন শিক্ষক নেতারা।

এদিকে ওই শিক্ষকের বাধ্যতামূলক ছুটির সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার চেয়ে উপাচার্যকে আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে। একই সঙ্গে প্রত্যাহারের বিষয়ে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তা ১২ ঘণ্টার  মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও রেজিস্ট্রারকে জানাতে বলা হয়েছে। শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রশাসনের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবিতে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থীরা অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন কর্মসূচি শুরু করেছে।

গত ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসে কুবির গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন মাহবুবুল হক ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে ক্লাস নেওয়ার অভিযোগ করে ছাত্রলীগ। এর তিনদিনের মাথায় ১৭ আগস্ট মাহবুবুল হক ভূঁইয়াকে এক মাসের বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। গঠন করে চার সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি।

সরেজমিনে দেখা যায়, মাহবুবুল হক ভূঁইয়াকে এক মাসের বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানোর সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবিতে আজ সকাল ৯টার দিকে প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন শুরু করে বঙ্গবন্ধু পরিষদ। এর দুই ঘণ্টা পর উপাচার্য তাঁর কার্যালয়ে যেতে চাইলে প্রশাসনিক ভবনের নিচতলায় তাঁকে বাধা দেয় বঙ্গবন্ধু পরিষদ ও শিক্ষক সমিতি। এ সময় শিক্ষক সমিতি ও বঙ্গবন্ধু পরিষদের নেতারা উপাচার্যের কাছে এ সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি জানান। তখন উপাচার্যপন্থী শিক্ষকদের সঙ্গে শিক্ষক সমিতি ও বঙ্গবন্ধু পরিষদভুক্ত শিক্ষকদের তুমুল বাগবিতণ্ডা হয়। পরে উপাচার্য ও শিক্ষক নেতারা দিনভর প্রশাসনিক ভবনের নিচতলায় করিডরে অবস্থান করেন।

এ সময় উপাচার্যপন্থী শিক্ষক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর মো. খলিলুর রহমানকে আন্দোলনরত শিক্ষকদের উদ্দেশ করে কটূক্তিমূলক বাক্য প্রয়োগ এবং শিক্ষকদের দিকে তেড়ে আসতে দেখা যায়।

দিনভর কার্যালয়ে প্রবেশ করতে না পেরে বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে প্রধান প্রকৌশলীর কক্ষে শিক্ষক সমিতি ও বঙ্গবন্ধু পরিষদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন উপাচার্য। প্রায় এক ঘণ্টা আলোচনা শেষে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আলী আশরাফ সাংবাদিকদের বলেন, ‘পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনা চলছে। আশা করি ইতিবাচক কিছু হবে।’

শিক্ষার্থীদের ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন : এদিকে মাহবুবুল হক ভূঁইয়ার শাস্তিমূলক বাধ্যতামূলক ছুটি প্রত্যাহার এবং তাঁকে হত্যার হুমকি দেওয়া শিক্ষার্থী সাঈদ ইবনে সাদের বহিষ্কারের দাবিতে ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন শুরু করেছেন তাঁর গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থীরা। এ বিষয়ে তাঁরা আজ উপাচার্য বরাবর একটি স্মারকলিপি দিয়েছেন।

স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে, ‘গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান মাহবুবুল হক ভূঁইয়া (তারেক) স্যারের বিরুদ্ধে জাতীয় শোক দিবসে ক্লাস নেওয়ার যে অভিযোগ তোলা হয়েছে তা মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। আমরা বিভাগের সব শিক্ষার্থী এ বিষয়ে জ্ঞাত যে সেদিন যে ব্যাচের ক্লাস নেওয়ার অভিযোগ তোলা হচ্ছে তাদের সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা চলছে এবং ইতিমধ্যে একটি পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে ক্লাস নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। শুধু কিছু শিক্ষার্থী পড়া বুঝিয়ে দেওয়ার অনুরোধ করলে তিনি শিক্ষকদের রুমে জায়গা না পেয়ে পাশের শ্রেণিকক্ষে অবস্থান করছিলেন।

অথচ বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্তৃপক্ষ মাহবুবুল হক ভূঁইয়া স্যারের কিংবা সেদিন উপস্থিত শিক্ষার্থীদের কোনো প্রকার মন্তব্য গ্রহণ ছাড়াই তাঁকে এক মাসের বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠিয়েছে। যা একান্তই একপক্ষীয় সিদ্ধান্ত। আমরা এমন একপক্ষীয় সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।

অন্যদিকে ১১তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সাঈদ ইবনে সাদ ফেসবুকে প্রকাশ্যে স্যারকে হত্যার হুমকি দিয়েছে। একজন শিক্ষককে এভাবে প্রকাশ্যে হুমকি দেওয়ায় আমরা নিজেদের এবং স্যারের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন।

অনতিবিলম্বে স্যারের বিরুদ্ধে নেওয়া এই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা প্রত্যাহার এবং প্রকাশ্যে হুমকি দেওয়া ছাত্ররূপী সন্ত্রাসীর বহিষ্কারের দাবিতে বিভাগের ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দিচ্ছি।’  

আইনি নোটিশ : শিক্ষক মাহবুবুল হক ভূঁইয়াকে বাধ্যতামূলক ছুটি প্রত্যাহারে কী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে জানতে চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও রেজিস্ট্রারকে ১২ ঘণ্টার সময়সীমা বেঁধে দিয়ে আইনি নোটিশ দেওয়া হয়েছে। মাহবুবুল হক ভূঁইয়ার পক্ষে আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া ফ্যাক্স ও ডাকযোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও রেজিস্ট্রারকে আইনি নোটিশটি পাঠান। তিনি বলেন, ১৭ আগস্ট এক চিঠিতে মাহবুবুল হক ভূঁইয়াকে এক মাসের জন্য বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানো হয়। এ ক্ষেত্রে কোনো ধরনের কারণ দর্শানোর নোটিশও দেওয়া হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের সংবিধি ও বিধান অনুসারে এভাবে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানোর নিয়ম নেই। তাই এ ছুটি প্রত্যাহার চেয়ে নোটিশ দেওয়া হয়েছে। যদি উপাচার্য ও রেজিস্ট্রার নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে জানাতে ব্যর্থ হন, তাহলে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

আইনি নোটিশ বিষয়ে উপাচার্য বলেন, ‘এই নোটিশ আমি এখনো পাইনি।’

উপাচার্য ও প্রক্টরের বিরুদ্ধে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ : গত ১৭ আগস্ট দুর্নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলনরত নৃবিজ্ঞান বিভাগের এক শিক্ষক উপাচার্য ও প্রক্টরের হাতে লাঞ্ছিত হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। আজ রোববার এই মর্মে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বরাবর অভিযোগ করেন ওই শিক্ষক। অভিযোগে ওই শিক্ষক উল্লেখ করেন, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের  শিক্ষককে অন্যায়ভাবে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানোর প্রতিবাদ করায় উপাচার্য তাঁকে ‘হারামজাদা’ বলে গালি দেন। একই সময়ে প্রক্টর ড. কাজী মো. কামাল উদ্দিন অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করেন।

অভিযোগের বিষয়ে কুবির রেজিস্ট্রার মো. মজিবুর রহমান মজুমদার বলেন, ‘আমার দপ্তরে অভিযোগ গেছে, কিন্তু এখনো ওটা হাতে পাইনি।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি মো. আইনুল হক বলেন, ‘আলোচনা শুরু হয়েছে। তবে আমাদের আন্দোলন চলবে।’

এদিকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে ষষ্ঠ দিনের মতো রোববার বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের সামনে নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. আসাদুজ্জামান ও তাঁর শিক্ষার্থীরা অবস্থান করেছেন।