রোহিঙ্গাদের ওপর হত্যাযজ্ঞ বন্ধের আহ্বান ঢাবি সাদাদলের

Looks like you've blocked notifications!

মিয়ানমারের সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের ওপর হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করা ও তাদের ফিরিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) বিএনপি সমর্থিত শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দল।

আজ রোববার সকাল ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে আয়োজিত মানববন্ধনে শিক্ষকরা এ আহ্বান জানান।

মনববন্ধনে শিক্ষকরা মিয়ানমার সরকারের রোহিঙ্গা নিপীড়নের কঠোর সমালোচনা করেন। তাঁরা রোহিঙ্গাদের মুসলমান হিসেবে না দেখে মানুষ হিসেবে বিবেচনা করার পাশাপাশি অবিলম্বে রোহিঙ্গা নিপীড়ন বন্ধ করে তাদের মিয়ানমারে ফিরিয়ে নেওয়ার দাবি জানান।

বাংলাদেশ সরকারকে একলা চলা নীতি পরিহার করে সবাইকে সঙ্গে নিয়ে সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসার এবং রোহিঙ্গাদের জন্য মিয়ানমারে নিরাপদ অঞ্চল গঠন করার দাবি জানানো হয় মানববন্ধন থেকে।

সাদাদলের আহ্বায়ক ড. মো. আখতার হোসেনের সভাপতিত্বে এবং সদস্য সচিব ড. লুৎফর রহমানের সঞ্চালনায় মানববন্ধনের শুরুতেই রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে ঐতিহাসিক বিষয় তুলে ধরে বক্তব্য দেন ঢাবি সাদাদলের সদস্য ও ইসলামের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান খান। এ সময় আরো বক্তব্য দেন সাদা দলের সাবেক আহ্বায়ক ও কলা অনুষদের সাবেক ডিন অধ্যাপক ড. সদরুল আমিন, সাদাদলের বর্তমান যুগ্ম আহ্বায়ক ড. আবদুর রশিদ, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদ, অধ্যাপক ড. এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম, অধ্যাপক ড. সুকোমল বড়ুয়া, ড. দিলীপ বড়ুয়া।

অধ্যাপক ড. সদরুল আমিন বলেন, রোহিঙ্গাদের ওপর অমানবিক নির্যাতন করা হচ্ছে। মিয়ানমার সরকার বর্বর এবং অমানুষের মতো আচরণ করছে। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থেকে এই সংকট মোকাবিলা করতে হবে। সরকারের উচিত হবে কূটনৈতিক তৎপরতা বৃদ্ধির মাধ্যমে মিয়ানমার সরকারকে চাপ প্রয়োগ করা এবং রোহিঙ্গাদের সে দেশে ফিরিয়ে নিতে বাধ্য করা।

ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে রোহিঙ্গাদের ওপর নিপীড়ন রেকর্ড ছাড়িয়েছে। তারা প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে আশ্রয় নিচ্ছে। এমতাবস্থায় সকলের উচিত তাদের পাশে দাঁড়ানো। সেই সঙ্গে সরকারকে কূটনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত নেওয়ার ব্যবস্থা করা জরুরি। এর কোনো বিকল্প নেই। এছাড়া মিয়ানমার সরকারের প্রতি রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

অধ্যাপক ড. সুকোমল বড়ুয়া বলেন, ‘আমরা মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর নিপীড়নের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। আজকে বাংলাদেশের সবাই এবং বিশ্ব বিবেক রোহিঙ্গাদের পক্ষে ও মিয়ানমারের বিরুদ্ধে। আজকে মানবতার চরম বিপর্যয় চলছে। মানবতা দ্বিখণ্ডিত করতে চাই না। আজকে গৌতমবুদ্ধের বাণী প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘আমি বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের লোক হিসেবে ক্ষমা প্রকাশ করছি।’

সূচনা বক্তব্যে অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান খান বলেন, মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। কি আজ তাদের ওপর গণহত্যা চালাচ্ছে এবং মিয়ানমার তাদের সেখান থেকে বের করে দেওয়ার অপচেষ্টা করছে। আজকে সারা বিশ্ব ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠন খুবই সোচ্চার। তারা গণহত্যা বন্ধের দাবি জানাচ্ছে। আমরাও বলব অবিলম্বে জাতিসংঘের কফি আনান কমিশনের রিপোর্ট বাস্তবায়ন করা হোক। রোহিঙ্গাদের স্থায়ী সমাধানের জন্য অবিলম্বে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।

পালি অ্যান্ড বুদ্ধিস্ট স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. দিলীপ বড়ুয়া বলেন, মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের একসঙ্গে ১০ লাখ মানুষকে বাস্তুচ্যুত করা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। আমরা সকলে রোহিঙ্গাদের পক্ষে এবং হত্যাযজ্ঞের বিরুদ্ধে।

সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক ড. আখতার হোসেন খান বলেন, বাংলাদেশের নাফ নদীর ওপারে রোহিঙ্গাদের গ্রামে জ্বলছে, নাফ নদীতে নারী শিশু পুরুষের লাশ ভাসছে। শরণার্থী শিবিরে খাবারের জন্য অসহায় রোহিঙ্গাদের আহাজারি চলছে। তারপরও তথাকথিত বিশ্ব মোড়লদের কোনো বিবেক জাগ্রত হয় না।

আরো উপস্থিত ছিলেন সাদাদলের যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খান, অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান, অধ্যাপক আতাউর রহমান বিশ্বাস, আবুল কালাম আজাদ, ড. মোহাম্মদ আল মোজাদ্দেদী আলফেছানী, ইসরাফিল প্রামাণিক রতন, ড. মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম, মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, মুহাম্মদ মিজানুর রহমান, মুহাম্মদ সাইফুল্লাহসহ অনেক শিক্ষক।