৩৮ বছরে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ৩৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আগামীকাল বুধবার। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের হাত ধরে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু হয়। আগামীকাল ৩৯ বছরে পা রাখবে এই বিশ্ববিদ্যালয়টি।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ১৯৭৯ সালের ২২ নভেম্বর কুষ্টিয়া শহর থেকে ২৪ কিলোমিটার ও ঝিনাইদহ থেকে ২২ কিলোমিটার দূরে শান্তিডাঙ্গা-দুলালপুরে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। কিন্তু প্রতিষ্ঠার পর থেকেই স্থানান্তর জটিলতায় পড়ে ইবি। ১৯৮৩ সালের ১৮ জুলাইয়ের এক সরকারি আদেশে শান্তিডাঙ্গা-দুলালপুর থেকে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় গাজীপুরের বোর্ড বাজারে স্থানান্তর করা হয়। ১৯৮০ সালের ২৭ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাক্ট ১৯৮০ (৩৭) পাস হলে শিক্ষা ও প্রশাসনিক কার্যাবলী পরিচালনায় স্বায়ত্তশাসন দেওয়া হয়। ১৯৮১ সালের ১ জানুয়ারি প্রথম উপাচার্য হিসেবে ড. এ এন এম মমতাজ উদ্দীন চৌধুরীকে নিযুক্ত করা হয়। ১৯৮৫-৮৬ শিক্ষাবর্ষে তিনটি বিভাগে আটজন শিক্ষক ও ৩০০ শিক্ষার্থী নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হয়। ১৯৮৯ সালের ৩ জানুয়ারি তৎকালীন মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১৪ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের সব কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়। ১৯৯০ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়টি গাজীপুর থেকে পুনরায় শান্তিডাঙ্গা-দুলালপুরে স্থানান্তর করা হয়।
এভাবে বারবার স্থান বদলের কবলে পড়ে শুরুতেই বড় ধরনের একটি হোঁচট খায় ইবি। এরপর এক পা দু পা করে অগ্রসর হতে শুরু করে। শিক্ষার মান উন্নত হলেও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার মূল লক্ষ্যে কতটুকু অগ্রসর হয়েছে তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েই যায় বিজ্ঞমহলে।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় আইন ১৯৮০-এর ৫ (ক) ধারা অনুযায়ী, ‘ধর্মতত্ত্ব ও ইসলামী শিক্ষার অন্যান্য শিক্ষণ-শাখাসমূহ এবং তুলনামূলক আইন বিজ্ঞান ও অনুরূপ অন্যান্য শিক্ষণ শাখা স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে শিক্ষা চর্চার উদ্দেশে বিশ্ববিদ্যালয় যে রূপ উপযুক্ত মনে করিবে সেই রূপ ব্যবস্থা গ্রহণ এবং গবেষণা ও উচ্চতর গবেষণার ব্যবস্থা গ্রহণসহ জ্ঞানের অগ্রসরতা ও বিকিরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করিবে।’
এই লক্ষ্য নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়। এক এক করে প্রতিষ্ঠার ৩৮ বছর অতিক্রম করেছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়টি সম্পূর্ণ আবাসিক এবং আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু রাজনৈতিক, স্থানীয়সহ নানা সমস্যার কারণে সে রকম হয়ে উঠতে পারেনি এই বিশ্ববিদ্যালয়টি।
বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে পাঁচটি অনুষদের অধীনে ৩৩টি বিভাগ রয়েছে। গত ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষ থেকে তিনটি ও ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষ থেকে আটটি বিভাগ বৃদ্ধি করা হয়। সর্বশেষ ১৯৯১-৯২ শিক্ষাবর্ষ থেকে আল-হাদিস অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ চালু করা হয়। এর পর থেকে ইসলামী শিক্ষা বিষয়ক আর কোনো বিভাগ চালু হয়নি ।
ইবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মাহবুবুর রহমান বলেন, সময়ের প্রয়োজনে অনেক কিছু পরিবর্তন হতে পারে। দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে তাল মিলিয়ে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় এগিয়ে যাচ্ছে। লক্ষ্য উদ্দেশ্য নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কতটুকু অগ্রসর হতে পেরেছে সেটা আপেক্ষিক ব্যাপার। তবে, সবার সহযোগিতায় সামনের দিকে বিশ্ববিদ্যালয়টি আরো অগ্রসর হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. হারুন-উর-রশিদ আসকারী বলেন, ‘ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামী গবেষণা হয় না। এ বিশ্ববিদ্যালয়কে আমরা সম্পূর্ণ আবাসিক ও গবেষণা নির্ভর এবং ওর্য়াল্ড ক্লাস বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে তৈরি করব।’
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কেন্দ্রীয় জিয়া পরিষদের মহাসচিব অধ্যাপক ড. এমতাজ হোসেন বলেন, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হয়েছে সাধারণ শিক্ষার সাথে ইসলামী শিক্ষার সমন্বয় ঘটিয়ে শিক্ষা প্রদান করার লক্ষ্যে। যে শিক্ষার মাধ্যমে নৈতিকতা সম্পন্ন ও দক্ষ দেশপ্রেমিক জনশক্তি তৈরি হবে। ধর্মীয় শিক্ষা দিয়ে নৈতিক শক্তি বৃদ্ধি করা যায়। একজন শিক্ষার্থীকে নৈতিক দিক দিয়ে সামনে অগ্রসর হতে হবে।
ড. এমতাজ আরো বলেন, তৃতীয় উপাচার্য অধ্যাপক ড. আব্দুল হামিদের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর থেকে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় তার মূল লক্ষ্য থেকে ছিটকে পড়েছে। বর্তমানে এ বিশ্ববিদ্যালয়কে সেক্যুলার বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে। আগামী দিনে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেউ দায়িত্বে এলে প্রতিষ্ঠার মূল লক্ষ্যে ফিরে যেতে হবে।
বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ১৬ হাজার শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত। এতে পাঁচটি অনুষদের অধীনে ৩৩টি বিভাগ রয়েছে। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩৫৪ জন শিক্ষক, ৪০৬ জন কর্মকর্তা, ২১৬ জন সহায়ক কর্মচারী এবং ২০৪ জন সাধারণ কর্মচারী রয়েছে। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছয়টি একাডেমিক ভবন (একটি নির্মাণাধীনসহ) আটটি আবাসিক হল (একটি নির্মাণাধীনসহ) রয়েছে। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের চিকিৎসার জন্য মেডিকেল, শরীর চর্চার জন্য ব্যয়ামাগার, একটি কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি এবং বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান কেন্দ্রীয় মিলনায়তন রয়েছে।
কর্মসূচি : এদিকে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে নানা কর্মসূচি নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে জাতীয় পতাকা ও বিশ্ববিদ্যালয় পতাকা উত্তোলন, বর্ণাঢ্য আনন্দ শোভাযাত্রা এবং আলোচনাসভা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য প্রকাশনা ও জনসংযোগ দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ৩৯তম বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উপলক্ষে কাল বুধবার সকাল ৯টা ৩০ মিনিটে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনের সামনে উপাচার্য অধ্যাপক ড. হারুন-উর-রশিদ আসকারী জাতীয় পতাকা এবং উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. শাহিনুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়ের পতাকা উত্তোলন করবেন। সকাল ১০টায় প্রশাসন ভবন চত্বরে শান্তি ও আনন্দের প্রতীক পায়রা ও বেলুন উড়িয়ে আনন্দ শোভাযাত্রার উদ্বোধন এবং এরপর আনন্দ শোভাযাত্রা শুরু হবে।
শোভাযাত্রাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবন চত্বর থেকে ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান মিলনায়তনে আলোচনা সভায় সমাবেত হবে। শোভাযাত্রায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সব বিভাগ, হল, অফিসের এবং ইবি ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করবেন।
বেলা ১১টা ৩০ মিনিটে বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান মিলনায়তনে আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হবে। সভায় উপাচার্য অধ্যাপক ড. হারুন-উর-রশিদ আসকারী প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. শাহিনুর রহমান, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. সেলিম তোহা ও ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এস.এম আব্দুল লতিফ উপস্থিত থাকবেন। আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করবেন ৩৯তম বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উদ্যাপন উপ-কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. রুহুল কে এম সালেহ। আলোচনাসভা শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নতি, শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে দোয়া ও মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে।