‘সৃজনশীল পড়ানোর মতো শিক্ষক স্বল্প’
এ বছর উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) ও সমমানের পরীক্ষায় পাস করেছে ৬৯ দশমিক ৬০ শতাংশ শিক্ষার্থী। জিপিএ ৫ পেয়েছেন ৪২ হাজার ৮৯৪ জন। তার পরও এ ফল গত বছরগুলোর তুলনায় কিছু খারাপ। গত বছর এ পরীক্ষায় পাসের হার ছিল ৭৮ দশমিক ৩৩ শতাংশ আর জিপিএ ৫ পেয়েছিলেন ৭০ হাজার ৬০২ জন।
বিগত বছরগুলোতে যে পরিমাণ পাসের হার ছিল, তার সঙ্গে তুলনা করে এ বছরের পাসের হারকে খারাপ বলতে রাজি নন শিক্ষাবিদরা; বরং শিক্ষার মান বাড়ানোর জন্যই সৃজনশীল প্রশ্ন গ্রহণ করা হচ্ছে। সৃজনশীল প্রশ্নের মাধ্যমে শিক্ষার মান বাড়বে বলে তাঁরা মনে করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘কিছুদিন আগে শিক্ষার মান বাড়ানো নিয়ে নানা ধরনের প্রশ্ন ছিল। ফলাফলের সীমাবদ্ধতার মাধ্যমে শিক্ষার মান বাড়ানো হচ্ছে বলে আমি মনে করি, যাতে সবাই পাস না করে। যারা পাস করার মতো, তারা যেন পাস করে। এ বছর প্রশ্ন ফাঁস বা নকল হয়নি। এ জন্য যারা পাস করেছে, তাদের অবশ্যই ভালো ছাত্র হিসেবে ধরে নিতে হবে।’
‘সিলেবাস মুখস্থের দিন শেষ হয়ে আসছে’ উল্লেখ করে সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, ‘এখন সৃজনশীলতার সময় চলছে। কিন্তু সৃজনশীল পদ্ধতি পড়ানোর মতো শিক্ষকের সংখ্যা কম। সৃজনশীল বিষয়ের ওপর শিক্ষকরা সঠিক শিক্ষা দিতে পারছেন না বলেই পাসের হারের এ অবস্থা।’
সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম আরো বলেন, ‘আমাদের দেশে শিক্ষকদের সঠিক সম্মান ও ভাতার ব্যবস্থা করা উচিত, যাতে করে তাঁদের প্রাইভেট না পড়াতে হয়। কিন্তু দেখা যায়, যারা ভালো ছাত্র, তারা কেউ শিক্ষক হতে চায় না। কিন্তু তাদের সম্মান দিয়ে শিক্ষকতার দিকে নিয়ে আসা সরকারে দায়িত্ব।’
পরীক্ষায় সব বোর্ডের সমন্বয়ের মাধ্যমে প্রশ্ন এক হওয়া উচিত বলেও মনে করেন এ শিক্ষাবিদ।
এ ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমাজউদ্দীন আহমদ বলেন, ‘বিগত বছরে শিক্ষার্থীদের যে পরিমাণ পাস করনো হয়েছে, এতে শিক্ষার মান বেশি ছিল বলে মনে করা যাবে না। আবার যদি আমরা মনে করি, এ বছর পাসের হার কম, তাহলে মনে হয় শিক্ষার মান কমেছে। এটাও মনে করা ঠিক নয়। শিক্ষার্থীদের পাস-ফেলের ওপর শিক্ষার মান নির্ভর করে না; বরং পাস করে তারা যখন উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করে, তখন ফল বিশ্লেষণ করে বোঝা যায়, মান কমেছে না বেড়েছে।’
‘এ বছর যে পরিমাণ পাসের হার, তাকে কম বলা ঠিক নয়; বরং এটাই স্বাভাবিক পাসের হার,’ যোগ করেন এ রাষ্ট্রবিজ্ঞানী।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সাবেক চেয়ারম্যান এ কে আজাদ চৌধুরী বলেন, ‘এ বছরের পাসের হার আমরা কম বলতে পারি না। যারা পাস করছে, তারা ভালো লেখাপড়া করেই পাস করেছে। আসলে যারা ভালো, তারা সব সময় ভালো করবে। আমি মনে করি, পাসের হার যা হয়েছে, তাতে করে কোনো প্রভাব পড়বে না।’