ঢাবিতে আন্দোলনকারীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলা
ছাত্রী নিপীড়নে অভিযুক্তদের বহিষ্কারসহ চার দফা দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের অবরোধের মুখে প্রায় চার ঘণ্টা আটকে ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা করে উদ্ধার করে উপাচার্যকে।
আজ মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে এই ঘটনা ঘটে। এতে অন্তত ৪০ জন আহত হন।
এদিকে, শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে বুধবার সারাদেশে বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনগুলো।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের ওপর হামলায় জড়িতদের বিচারের দাবিতে গত কয়েক দিন ধরেই বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আন্দোলন করে আসছে সাধারণ শিক্ষার্থীসহ প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনগুলো।
দাবি আদায়ে ‘নিপীড়নবিরোধী শিক্ষার্থী’দের ব্যানারে আজ দুপুর ১২টার দিকে অপরাজেয় বাংলার পাদদেশ থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি সড়ক প্রদক্ষিণ করে। তারপর উপাচার্যের কার্যালয়ের সামনে যায়।
সাড়ে ১২টার দিকে উপাচার্যের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেয় শিক্ষার্থীরা। পরে প্রশাসনিক ভবনের ফটক ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে তারা। কিছুক্ষণের মধ্যেই দ্বিতীয় ফটকটির তালা ভেঙে উপাচার্যের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেয় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বিকেল পৌনে ৪টার দিকে একটি সভায় অংশ নিতে সিনেট ভবনে যেতে নিজের কার্যালয়ের পেছনের ফটক দিয়ে বের হন উপাচার্য আখতারুজ্জামান। তখন উপাচার্যের চারপাশ ঘিরে অবরোধ করে আন্দোলনকারীরা। তাঁকে ৩৫ মিনিটের মতো আটকে রাখে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। এ সময় বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দিতে থাকে তারা।
এরপর সেখানে ছাত্রলীগের নেতারা এসে উপাচার্যকে তাঁর কক্ষে নিয়ে যান। ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইনের নেতৃত্বে শতাধিক নেতাকর্মী আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালায়। এ সময় রড, লাঠি, হকি দিয়ে দফায় দফায় হামলা চালানো হয় আন্দোলনকারীদের ওপর।
আহতদের মধ্যে রয়েছেন ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক লিটন নন্দী, বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি তুহিন কান্তি দাশ, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সভাপতি ইভা মজুমদার, বিশ্ববিদ্যালয় নেতা প্রগতি বর্মণ তমা, ছাত্র ফেডারেশনের বিশ্ববিদ্যালয় সভাপতি উম্মে হাবিব বেনজীর, ‘নিপীড়নবিরোধী শিক্ষার্থী’র সমন্বয়ক মাসুদ আল মাহদী, ইংরেজি দৈনিক ইনডিপেনডেন্টের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি মীর আরশাদুল হকসহ কয়েকজন আলোকচিত্রী। গুরুতর আহতদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ রাজধানীর কয়েকটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
ছাত্র ইউনিয়নের এক নেতা বলেন, ‘আমরা যাওয়ার পর যেটা হয়, লিটন নন্দীর ওপর ব্রুটাল অ্যাটাক হয়। দেড়শ-দুইশ স্টুডেন্ট অ্যাটাক করে। এখন লিটন নন্দীকে গ্রিন লাইফ হসপিটালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, এমআরআই করানোর জন্য। আশঙ্কা করা হচ্ছে মস্তিষ্কে ব্লিডিং হতে পারে, ঢাকা মেডিকেল যেটা আশঙ্কা করছে।’
আরেক নেতা বলেন, ‘(হামলায়) নানান ধরনের অস্ত্রপাতি, ইটপাটকেল সব নিয়ে আসে। পুরো এলাকাটা ঘিরে ফেলছে। আমাদের নারীদের ওপর যেভাবে অত্যাচার করা হয়েছে, যেভাবে লাথি, কিল-ঘুষি মারা হয়েছে। সেটার সব ভিডিও আমাদের কাছে আছে।’
এদিকে ওই ঘটনার পর মধুর ক্যানটিনে জরুরি সংবাদ সম্মেলন করেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নেতারা।
ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন বলেন, ‘সাধারণ শিক্ষার্থীরাই সেখানে গিয়েছিল। সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাথে আমরা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা, আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হিসেবে সেখানে গিয়েছিলাম। আমরা ভিসি স্যারের পাশে আছি। ভিসি স্যারের সঙ্গে যারা এ ধরনের আচরণ করেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়া পর্যন্ত আমরা কিন্তু মাঠে থাকব। আমাদের বহিষ্কার করে দেওয়া হোক, আমরা ক্যাম্পাস ছেড়ে চলে যাই। অথবা তাদের বহিষ্কার করা হোক।’
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কার্যালয় ঘেরাও ও হামলার ঘটনা তদন্ত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী বলেন, ‘কারো যদি কোনো অভিযোগ থাকে সেগুলোকে আমরা তদন্ত কমিটি গঠন করে আমরা তদন্ত করব। তাদের অভিযোগগুলো তারা সেখানে উপস্থাপন করবে। যে সংগঠনই, যে ব্যক্তি, যে প্রতিষ্ঠানই এ ধরনের কাজ করে থাকবে না কেন আমরা প্রমাণ সাপেক্ষের ভিত্তিতে নিশ্চিতভাবে শাস্তি প্রতিবিধান করব।’