কুয়েটের সমাবর্তনে রাষ্ট্রপতি

মোবাইল ফোন জীবনের ধ্যান-জ্ঞান হলে ভালো না

Looks like you've blocked notifications!
সমাবর্তন অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের কাছ থেকে ক্রেস্ট গ্রহণ করেন কুয়েটের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীর। ছবি : পিআইডি

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, ‘মোবাইল ফোন ছাড়া দৈনন্দিন যোগাযোগ রক্ষা ও জীবনযাপন অচল প্রায়। লেখাপড়া থেকে শুরু করে বিভিন্ন ইউটিলিটি সার্ভিসের বিল প্রদানসহ বিশ্ব তথ্যভান্ডারের সাথে যুক্ত থেকে ঘরে বসে অল্প সময়ে প্রয়োজনীয় কাজ করা যায়। এতে জীবন সহজ ও গতিশীল। কিন্তু এই মোবাইল যখন জীবনের ধ্যান-জ্ঞান সব হয়ে যায়, তখন কিন্তু সেটি ভালো  থাকে না।’

আজ খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) তৃতীয় সমাবর্তন অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন রাষ্ট্রপতি। তিনি বলেন, ‘প্রযুক্তি উন্নয়নের বাহন। কিন্তু এ প্রযুক্তি যেন সর্বনাশের বাহন না হয় তা নিশ্চিত করতে হবে।’

কুয়েটের আচার্য বলেন, ‘মোবাইল ফোন বর্তমান সময়ে একটি অপরিহার্য ইলেকট্রনিক্স সমাগ্রী।’ তিনি আরো বলেন, ‘আজকাল বাস, ট্রেন,লঞ্চ, বিমান সর্বত্রই দেখা যায় যে সিটে বসে সবাই মোবাইল নিয়ে ব্যস্ত  হয়ে পড়ে। অনেকে মোবাইল দিয়ে কথা বলতে গিয়ে ট্রেনে কাটা পড়ে। রাস্তায় গাড়ির নিচে পরে প্রাণ হারায়। পাশাপাশি সিটে বসেও একজন আরেকজনের সঙ্গে কোনো আলাপচারিতা এমনকি কথা পর্যন্ত বলে না। সারাক্ষণ মোবাইল ফোন নিয়েই ব্যস্ত। এমনকি বাসায় এসেও ফেসবুক, গেমস ইত্যাদি নিয়েই সময় কাটিয়ে দেয়। একজন অন্যজনের সাথে কোনো কিছু শেয়ারও করতে চায় না। এতে করে দিন দিন পারিবারিক বন্ধন দুর্বল করে হচ্ছে। অন্যদিকে ছেলে-মেয়েরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠেছে। এতে সামাজিক অস্থিরতা বাড়ছে।’

আবদুল হামিদ বলেন, ‘তবে একটা কথা পরিষ্কারভাবে মনে রাখতে হবে এর জন্য প্রযুক্তি বা মোবাইল ফোন কোনোভাবেই দায়ী নয়। বরং এর দায়িত্ব ব্যবহারকারীর।’

রাষ্ট্রপতি আরো বলেন, ‘জাতি গঠনে প্রকৌশল শিক্ষার গুরুত্ব অত্যাধিক। প্রকৌশল ও প্রযুক্তি শিক্ষা একটি জনগোষ্ঠীকে জনসম্পদে পরিণত করে। প্রকৌশলীদের মেধা, মনন ও সৃজনশীল চিন্তা থেকে বেরিয়ে আসে টেকসই উন্নয়নের রূপরেখা। তাই প্রকৌশলীদের চিন্তা ও চেতনায় থাকবে দূরদৃষ্টির সুস্পষ্ট প্রতিফলন। বিশ্বায়নের এই যুগে প্রতিনিয়তই প্রযুক্তির উৎকর্ষ সাধিত হচ্ছে এবং নতুন নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উপনীত হয়েছে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এখন উৎক্ষেপণের অপেক্ষায়। স্বপ্নের পদ্মাসেতু আজ আমাদের সামনে দৃশ্যমান। এই রূপকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে তোমরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুখী-সমৃদ্ধ সোনার বাংলা গড়তে এগিয়ে আসবে এ আমার দৃঢ় বিশ্বাস।’

অনুষ্ঠানে সমাবর্তন বক্তা ছিলেন বিজ্ঞানী ও শিক্ষাবিদ ড. মোহাম্মদ আলী আসগর। অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মঞ্জুরী কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীর।

সমাবর্তনে মোট ২ হাজার ৭৯৫ জনকে স্নাতক ও ২২৮ জনকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি দেওয়া হয়। এর মধ্যে আটজনকে পিএইচডি ডিগ্রির সনদ দেওয়া হয়। স্নাতক পর্যায়ে ভালো ফলাফলের ভিত্তিতে ‘বিশ্ববিদ্যালয় স্বর্ণপদক’ দেওয়া হয় ৩৮ জন কৃতী শিক্ষার্থীকে।

অনুষ্ঠানের শুরুতে গত ২৫ মার্চ ময়মনসিংহের ভালুকায় গ্যাস বিস্ফোরণে নিহত কুয়েটের চার শিক্ষার্থীর স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।