কোটা সংস্কারের দাবিতে রাতভর রণক্ষেত্র ঢাবি
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় গতকাল রোববার রাতভর পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ চলে। গভীর রাতে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক ঘটনাস্থলে গিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে আন্দোলনকারীদের আলোচনায় বসার বার্তা দেন।
নানক জানান, আজ সোমবার বেলা ১১টায় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলবেন। রাতভর চলা এ সংঘর্ষে পুলিশসহ আহত হয়েছেন অর্ধশতাধিক।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রাতভর দফায় দফায় পুলিশের সঙ্গে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ চলে। টিয়ার শেল, জলকামান ও লাঠিপেটা করে পুলিশ বারবার আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দিলে আবারও তাঁরা জমায়েত হয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন। এ সময় শাহবাগ থানার সামনে থেকে টিএসসি পর্যন্ত রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।
সংঘর্ষে গুরুতর আহত হন পুলিশ-সাংবাদিকসহ বেশ কয়েকজন। আটক করা হয় অর্ধশতাধিক চাকরিপ্রার্থী ও শিক্ষার্থীকে।
এ সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী আবু বকর সিদ্দিক সংঘর্ষে নিহত হয়েছেন বলে গুজব ছড়িয়ে পড়ে। পরে আহত অবস্থায় তিনি নিজে এসে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন।
পরিস্থিতি চরমে পৌঁছালে রাত দেড়টার দিকে ঘটনাস্থলে আসেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক। তিনি জানান, যাঁদের আটক করা হয়েছে, তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হবে।
এমন ঘোষণার পরও আন্দোলনকারীরা বিক্ষোভ চালিয়ে যেতে থাকেন। পরে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতারা আন্দোলনকারীদের দিকে এগিয়ে গেলে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরে ক্যাম্পাসজুড়ে। রাতভর পুলিশের অবস্থান ছিল শাহবাগ এলাকায়।
এর আগে রাজধানীর শাহবাগে রোববার বিকেল ৩টা থেকে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নিলে চারদিকে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় পুলিশ শিক্ষার্থীদের অবরোধ তুলে নেওয়ার অনুরোধ করলেও তাঁরা আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।
সরকারের পক্ষ থেকে দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস না দেওয়া পর্যন্ত আন্দোলনে অনড় থাকেন শিক্ষার্থীরা। পরে সন্ধ্যা পৌনে ৮টার দিকে প্রথম দফা আন্দোলনকারীদের ওপর পুলিশ কাঁদানে গ্যাস, জলকামান নিক্ষেপ ও লাঠিপেটা করে ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
একই দাবিতে রোববার সারা দেশে সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের আহ্বানে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন আন্দোলনকারীরা। রোববার দুপুর থেকে ময়মনসিংহ-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করে পাঁচ দফা দাবিতে আন্দোলন করেন শিক্ষার্থীরা।
এ সময় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। আন্দোলনে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় কবি কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়, আনন্দ মোহন কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা অংশ নেন।
সরকারি চাকরিতে ৫৬ শতাংশ কোটা সংস্কার করে ১০ শতাংশে কমিয়ে আনার দাবিতে আন্দোলন করে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
কিশোরগঞ্জে কোটা সংস্কারের দাবিতে পদযাত্রা কর্মসূচি পান করেন শিক্ষার্থীরা। কুমিল্লার শিক্ষার্থীরাও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে কোটায় বৈষম্য দূর করার দাবিতে আন্দোলন করে।