রাবিতে শিক্ষকদের নির্বাচনে আওয়ামীপন্থীদের পরাজয়
![](https://ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2018/04/23/photo-1524503283.jpg)
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) সিনেট, সিন্ডিকেট, ডিন, শিক্ষক সমিতিসহ সাত ক্যাটাগরিতে ৭০ পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে অধিকাংশ ক্যাটাগরিতে আওয়ামীপন্থী ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের (হলুদ প্যানেল) পরাজয় হয়েছে। এসব ক্যাটাগরির গুরুত্বপূর্ণ পদগুলো পেয়েছে বিএনপি জামায়াতপন্থী ‘জাতীয়তাবাদ ও ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী শিক্ষক সমাজ’ (সাদা প্যানেল)।
আজ সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের জুবেরী ভবনের শিক্ষক লাউঞ্জে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত ভোট গ্রহন অনুষ্ঠিত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ১ হাজার ১৫০ জন শিক্ষক ভোট দেন। এতে নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. এম এ বারী।
সোমবার রাত সাড়ে আটটা পর্যন্ত সাতটি ক্যাটাগিরর মধ্যে ছয়টি ক্যাটাগরির প্রাপ্ত বেসরকারি ফলাফলের ভিত্তিতে এগিয়ে রয়েছেন বিএনপি ও জামায়াতপন্থী শিক্ষকরাই। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি নির্বাচনে ১৫টি পদের মধ্যে সভাপতি, সহ-সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও কোষাধ্যক্ষসহ গুরুত্বপূর্ণ ছয়টি পদই পেয়েছে সাদা প্যানেল। এর মধ্যে সভাপতি হিসেবে ফাইন্যান্স বিভাগের আমজাদ হোসেন, সহ-সভাপতি হিসেবে সমাজকর্ম বিভাগের গোলাম কিবরিয়া ফেরদৌস, সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ফার্মেসী বিভাগের মামুনুর রশিদ ও সদস্য পদে অর্থনীতি বিভাগের কেবিএম মাহবুবুর রহমান ও ফলিত পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের মামুন-উর-রশীদ খন্দকার নির্বাচিত হয়েছেন সাদা প্যানেল থেকে।
অন্যদিকে হলুদ প্যানেল থেকে গুরুত্বপূর্ণ পদের মধ্যে শুধুমাত্র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আব্দুল্যাহ আল মারুফ নির্বাচিত হয়েছেন এবং বাকি আটটি পদ সদস্য হিসেবে পেয়েছেন। সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক সোমলাল দাস, বাংলা বিভাগের সুজা উদ-দৌলা, আইন বিভাগের মাহফুজুর রহমান (মামুন), ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক হাসনা হেনা, উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের মামনূর রশিদ সরকার (মাসুদ), ফোকলোর বিভাগের ফারজানা রহমান, গণিত বিভাগের ইলিয়াস হোসেন, নাট্যকলা বিভাগের হাশেম উদ্দিন (সুখন সরকার)।
বিশ্ববিদ্যালয়ের নয়টি অনুষদের ডিন পদে নির্বাচনে আইন অনুষদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হয়েছেন হলুদ প্যানেল থেকে আইন বিভাগের অধ্যাপক আহসান কবির। বাকি আটটির চারটি পেয়েছে সাদা প্যানেল এবং চারটি পেয়েছে হলুদ প্যানেল। সাদা প্যানেল থেকে নির্বাচিতরা হলেন কলা অনুষদে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক ফজলুল হক, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদে সমাজকর্ম বিভাগের অধ্যাপক ফখরুল ইসলাম, কৃষি অনুষদে ফিশারিজ বিভাগের অধ্যাপক সাহেলা জেসমিন এবং প্রকৌশল অনুষদে কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক একরামুল হামিদ।
হলুদ প্যানেল থেকে নির্বাচিতরা হলেন, বিজ্ঞান অনুষদে পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক খলিলুর রহমান খান, ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদে হিসাব বিজ্ঞান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক হুমায়ূন কবির, জীব ও ভূবিজ্ঞান অনুষদে প্রাণীবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক নজরুল ইসলাম, চারুকলা অনুষদে চিত্রকলা, প্রাচ্যকলা ও ছাপচিত্র বিভাগের অধ্যাপক সিদ্ধার্থ শঙ্কর তালুকদার।
সিন্ডিকেট নির্বাচনে পাঁচটি পদের মধ্যে প্রভাষক ক্যাটাগরিতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হয়েছেন হলুদ প্যানেলের ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের মসিদুল হক। বাকি চারটির মধ্যে তিনটিই পেয়েছে সাদা প্যানেল। সাদা প্যানেল থেকে নির্বাচিতরা হলেন, প্রাধ্যক্ষ ক্যাটাগরিতে মাদার বখস হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক আব্দুল আলিম, অধ্যাপক ক্যাটাগরিতে প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক হাবিবুর রহমান এবং সহযোগী অধ্যাপক ক্যাটাগরিতে পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের মনিরুল হক। কেবল সহকারি অধ্যাপক ক্যাটাগরিতে হলুদ প্যানেল থেকে নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত হয়েছেন ম্যাটেরিয়াল সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের আব্দুল্লাহ আল মামুন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইনান্স এবং পরিকল্পনা ও উন্নয়ন কমিটিতে দুইটি পদেই বিজয়ী হয়েছেন হলুদ প্যানেলের শিক্ষকরা। তারা হলেন ফাইনান্স ক্যাটগরিতে ম্যানেজমেন্ট বিভাগের অধ্যাপক জাফর সাদিক এবং পরিকল্পনা ও উন্নয়ন কমিটি ক্যাটাগরিতে অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক মহমুদ হোসেন রিয়াজী।
এছাড়া শিক্ষা পরিষদের দুইটি ক্যাটাগরিতে ছয়জনই নির্বাচিত হয়েছেন হলুদ প্যানেল থেকে। এর হলেন সহযোগী অধ্যাপক ক্যাটাগরিতে উদ্ভিদবিজ্ঞানের নাসিরুদ্দিন, শিক্ষা ও গবেষনা ইনস্টিটিউটের রুবাইয়াৎ জাহান এবং সমাজবিজ্ঞান বিভাগের আবু রাসেল মুহা রিপন। সহযোগী অধ্যাপক ব্যাতীত ক্যাটাগরিতে ইনফরমেশন সায়েন্স এন্ড লাইব্রেরি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের আরমানুল হক, মার্কেটিং বিভাগের শেখ শামীমা সুলতানা এবং চিত্রকলা, প্রাচ্যকলা ও ছাপচিত্র বিভাগের সুজন সেন।
রাত ৯টা পর্যন্ত প্রাপ্ত ফলাফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেটে শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচনের ফলাফল পাওয়া যায়নি। এটি পেতে দেরি হবে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক এমএ বারী। তবে এই ক্যাটাগরির ৩৩টি পদের অধিকাংশতেই বিএনপিপন্থী সাদা প্যানেলের শিক্ষকরা এগিয়ে আছেন বলে জানা গেছে।
অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব?
আওয়ামী পন্থী শিক্ষকদের এই ভরাডুবির পেছনে নিজেদের মধ্যকার দ্বন্দ্বকেই প্রধান হিসেবে দেখছেন শিক্ষকরা। আওয়ামীপন্থী প্রগতিশীল শিক্ষকদের মধ্যে বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক আব্দুস সোবহান ও সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক মুহম্মদ মিজানউদ্দিন গ্রুপের মধ্যে শীতল সম্পর্কের কারণে বিএনপি ও জামায়াতপন্থী শিক্ষকরা বেশি ভোট পেয়েছেন বলে মনে করছেন শিক্ষকরা।
আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের কয়েকজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘পরিষ্কারভাবেই হলুদ প্যানেলে থাকা শিক্ষকদের মধ্যে দুইটি গ্রুপ ছিল। ফলে এক গ্রুপ অন্য গ্রুপের শিক্ষককে নির্বাচিত না করে বিএনপি ও জামায়াতকে ভোট দিয়েছে। যার ফায়দা পেয়েছে সাদা দল। এছাড়া কিছু পদে যোগ্য প্রার্থী দিতে না পারা ও বিদ্রোহী প্রার্থীও একটি কারণ। এর মধ্যে কলা অনুষদে হলুদ প্যানেলের বাইরে থেকে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনও করেছেন বাংলা বিভাগের অধ্যাপক সুজিত সরকার।