ঈদের ছুটি শেষে গল্প-আড্ডায় প্রাণবন্ত রাবি
গ্রীষ্মকালীন অবকাশ ও ঈদুল ফিতরের ছুটি শেষে শিক্ষার্থীদের গান-গল্প আড্ডায় আবারও মুখর হয়ে উঠেছে উত্তরবঙ্গের বাতিঘর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি)। টানা ৩৯ দিন বন্ধ থাকার পর গত রোববার খুলেছে এই শিক্ষাঙ্গন। প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছে মতিহারের সবুজ চত্বর।
প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদ আনন্দ উপভোগ করে ক্যাম্পাসে ফিরতে শুরু করেছেন শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি, বাংলা, সমাজবিজ্ঞান, সমাজকর্ম, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা, দর্শন, ফোকলোর, লোকপ্রশাসন, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, হিসাববিজ্ঞান মার্কেটিংসহ কয়েকটি বিভাগ ঘুরে দেখা গেছে সেগুলোতে এখনও নিয়মিতভাবে ক্লাস নেওয়া শুরু হয়নি। ক্লাসে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির হারও তুলনামূলকভাবে অন্য সময়ের চেয়ে কম। অনেকদিন পর ক্যাম্পাসে ফিরে শিক্ষার্থীরা যেন বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডায় গল্পে পুনর্মিলনীর আনন্দ ভাগাভাগি নিয়ে মেতে আছেন।
মঙ্গলবার দুপুরে ক্যাম্পাস ঘুরে দেখা গেছে, শিক্ষার্থীদের আগমনে বিশ্ববিদ্যালয়ে আড্ডার জায়গাগুলো এখন কলকাকলিময়। বিশ্ববিদ্যালয়ের টুকিটাকি চত্বর, মিডিয়া চত্বর, শহীদ মিনার চত্বর, ইবলিশ মাঠ, পরিবহন মার্কেট, লাইব্রেরি চত্বর, শহীদুল্লাহ কলা ভবনের সামনে আমবাগান, মমতাজ উদ্দিন কলা ভবনের সামনের আম চত্বর, ইসমাঈল হোসেন সিরাজী ভবনের সামনে নাছিরের দোকান, সিলসিলা রেস্তোরাঁ, সাগর ক্যান্টিন, স্টেশন বাজারসহ ক্যাম্পাসের পুরোটা জুড়েই তাঁরা মেতে উঠেছেন পুরোনো আড্ডায়।
‘অনেকদিন পর ক্যাম্পাসে এসেছি। ক্যাম্পাস বন্ধ থাকায় বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেওয়া হয়নি দীর্ঘদিন। পড়াশোনার পাশাপাশি এখন থেকে প্রতিদিন আড্ডা দেওয়া চলবে। বন্ধুদের নিয়ে রাজশাহীর দর্শনীয় স্থানগুলো ঘুরতে যাওয়ার পরিকল্পনা করছি।’ ছুটি শেষে ক্যাম্পাসে ফেরা আইন বিভাগের শিক্ষার্থী মঈন উদ্দিনের সাথে কথা বলতে গেলে তিনি এভাবেই উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন।
ফোকলোর বিভাগের শিক্ষার্থী মিল্টন বলেন, গতকাল রাতে ক্যাম্পাসে এসেছি। এত বড় ছুটিতে বাড়িতে থাকার সময় বারবার ইচ্ছে করছিল ক্যাম্পাসে ফিরে যাই। স্বজনদের ছেড়ে বাড়ি থেকে আসার সময় কষ্ট হলেও এখন বন্ধুদের পেয়ে অনেক ভালো লাগছে।
ছুটির মধ্যে শিক্ষার্থীরা না থাকায় ক্যাম্পাসকেন্দ্রিক ব্যবসায়ীদের ব্যবসা বন্ধ ছিল। এখন আবার সেগুলো খোলা হয়েছে। আগের মতো ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন দোকানদাররা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী হলের সামনে বার্গার বিক্রি করেন চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থী মনু মোহন বাপ্পা। তাঁর সঙ্গে কথা বললে তিনি বলেন, ‘ক্যাম্পাস বন্ধ থাকায় আমার ব্যবসাও এর ভেতর বন্ধ ছিল। ক্যাম্পাস খুলল, এখন আবার পড়াশোনার পাশাপাশি নিজের এই ক্ষুদ্র ব্যবসা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ব।’
ক্যাম্পাস খোলায় আনন্দিত স্টেশন বাজারের দোকানি রকি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের ঘিরেই আমাদের ব্যবসা। অনেক দিন ক্যাম্পাস খোলা ছিল না বলে, দোকানপাটও বন্ধ রাখতে হয়েছিল।’
‘শিক্ষার্থীদের টাকায় আমাদের সংসার চলে। দীর্ঘদিন ক্যাম্পাস বন্ধ থাকায় আমাদের ব্যবসা বলা চলে লাটে উঠেছিল, এখন তারা ফিরে আসায় আবার পুরোদমে বেচা-কেনা নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে।’ বলেন বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন বিনোদপুর বাজারের সবজি বিক্রেতা আলম।
গ্রীষ্মকালীন অবকাশ ও ঈদুল ফিতর উপলক্ষে মে মাসের ১৬ তারিখ থেকে ২৩ জুন পর্যন্ত বন্ধ ছিল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। এ ছাড়া গ্রীষ্মকালীন ছুটি উপলক্ষে ২০ মে থেকে ২৪ মে এবং ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ১১ জুন থেকে ২০ জুন পর্যন্ত বন্ধ ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন দপ্তরসমূহ।