আন্দোলনকারীদের বিপদে ফেলতেই উপাচার্যের বাসায় হামলা

তেল-গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক ড. আনু মুহাম্মদ বলেছেন, সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের বিপদে ফেলতেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের বাসায় হামলা করা হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে নিপীড়নবিরোধী শিক্ষকদের ব্যানারে সংহতি সমাবেশে আনু মুহাম্মদ এ মন্তব্য করেন।
আনু মুহাম্মদ বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, ঢাবি ভিসির বাসায় যারা হামলা করেছে, তাঁদের ধরা হচ্ছে। এ ঘটনায় চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যাদের মধ্যে কেউ ছাত্র নয়। সরকারের পক্ষ থেকেও এ বিষয়ের সত্যতা দেখিয়ে বলা হয়েছে যে, তাঁরা ছাত্র নয়। তাহলে হঠাৎ করে কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতারা ভিসির বাসায় হামলা করেছে, এ তথ্য সরকার কীভাবে পেল?
আনু মুহাম্মদ আরো বলেন, ভিসির বাসায় যারা আক্রমণ করেছে তাদের ধরতে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কিন্তু সে তদন্ত কমিটির রিপোর্ট এখনো বের হয়নি। তদন্ত কমিটির রিপোর্ট দিতে তো অসুবিধা থাকার কথা নয়। তাহলে তারা রিপোর্ট দিচ্ছে না কেন?
ভিসির বাসায় হামলার ঘটনায় তদন্ত প্রতিবেদনের বিষয়ে আনু মুহাম্মদ বলেন, ঘটনাক্রম দেখে যা বোঝা যায়, এ আক্রমণটাই ছিল পরিকল্পিত অন্তর্ঘাত। কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের বিপদে ফেলতেই এ হামলা করা হয়েছে। সেই একই কারণে তদন্ত কমিটির রিপোর্টও প্রকাশ করা হচ্ছে না। ভিসির বাড়িতে হামলার ঘটনা তদন্তে আক্রমণকারীদের চিনতে পেরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাদের ধরা থেকে পিছিয়ে এসেছেন। সুতরাং এগুলো তদন্তের নামে প্রতারণা।
আনু মুহাম্মদ বলেন, ঢাবি ভিসির বাড়িতে যখন হামলা হয়েছে। তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ বলেছে, এ হামলার সাথে আন্দোলনকারী কেউ জড়িত নয়। তাহলে কেন আজকে আন্দোলনকারীদের গ্রেপ্তার করে, রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করা হচ্ছে?
তেল গ্যাস-খনিজ সম্পদ রক্ষা জাতীয় কমিটির এ সদস্য সচিব বলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যেমন দেশে সন্ত্রাসীদের রক্ষার দায়িত্ব পালন করছেন, তেমনি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টররাও ক্যাম্পাসে সন্ত্রাসীদের রক্ষার দায়িত্বে আছে। দেশে কোনো ন্যায্য আন্দোলন করলে সরকার বলছে এসব আন্দোলনের পেছনে জামাত-শিবির আছে। যদি সব আন্দোলনকে জামাত-শিবিরের আন্দোলন বলেন, তাহলে আমি বলব, সব সরকারের চেয়ে আপনারা জামাত-শিবিরকে সবচেয়ে বেশি সাহায্য করেছেন। কারণ দেশে জামায়াত-শিবিরের আন্দোলন না করলেও আপনারা তাদের নামে আন্দোলনকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করেছেন।
আনু মুহাম্মদ আরো বলেন, প্রবল চাপ ও হুমকি উপেক্ষা করে শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নেমেছে। মেয়ে শিক্ষার্থীরাও নানা বাধা উপেক্ষা করে আন্দোলনে এসেছে। এ জন্য তাদের ধন্যবাদ জানাই। আজকে দেশে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। এটি হলো শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের গভীর ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন এ আন্দোলনে শিক্ষকরাও কেন যুক্ত হয়েছে। আপনাকে বলতে চাই, আপনি যদি এক ঘণ্টার জন্য শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলতেন, তাহলে দেখতে পারতেন যে, আন্দোলনকারীদের ক্ষোভের মাত্রা কতটুকু এবং এ আন্দোলন কীভাবে গভীর ক্ষোভ থেকে তৈরি হয়েছে।
সংহতি সমাবেশে ঢাবির অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. এম এম আকাশ বলেন, আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে দ্বৈত প্রশাসন দেখতে পাচ্ছি। প্রথমটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং অন্যটি হল হলে যারা আধিপত্য বিস্তার করে গেস্টরুমে শিক্ষার্থীদের নানারকমের নির্যাতন করছে তাদের প্রশাসন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি যদি হলের কর্তৃত্ব হল প্রশাসনকে দিতে ব্যর্থ হয়, যদি তিনি ক্ষমতাসীনদের চাপে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে ব্যর্থ হোন, তাহলে আপনাকে বলব যে, আপনি নিজ ইচ্ছায় পদত্যাগ করুন।
অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক সিআর আবরার বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলন যুক্তিসংগত। কিন্তু এটাকে যুক্তি দিয়ে না পেরে অবশেষে রাজনীতি ও পেশি শক্তি দিয়ে খণ্ডানোর চেষ্টা হচ্ছে। তিনি বলেন, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ওপর হামলাকারী ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা চিহ্নিত। তাদের গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনতে হবে। একই সাথে ছাত্রলীগের এসব কর্মকাণ্ডের দায়িত্ব সরকারকেই নিতে হবে।
শিক্ষকদের সংহতি জানাতে সমাবেশে উপস্থিত হয়েছেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭২ জন শিক্ষক। ঢাবির গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক গীতি আরা নাসরীন সভায় সভাপতিত্ব করেন। সঞ্চালনায় ছিলেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তানজীমউদ্দিন খান।
সমাবেশে আরো বক্তব্য দেন গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. ফাহমিদুল হক, সহযোগী অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাক খান, মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক নাসরীন ওয়াদুদ, ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক তাসনীম সিরাজ মাহবুব, সমাজবিজ্ঞানের সহযোগী অধ্যাপক সামিনা লুৎফা, বাংলাদেশ প্রকৌশলী বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক ড. হাসিবুর রশিদসহ অন্য শিক্ষকবৃন্দ।