যেখানে প্রজ্ঞাপন দাবির মিছিল, সেখানেই ছাত্রলীগের আনন্দ মিছিল

Looks like you've blocked notifications!
কোটা সংস্কারের আন্দোলনকারীরা আজ মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় যেখানে যেখানে মিছিল নিয়ে গেছেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরাও সেখানে গিয়ে পৃথক ‘আনন্দ মিছিল’ করেন। ছবি : এনটিভি

প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের যে সুপারিশ করা হয়েছে তাকে সাধুবাদ জানিয়ে এবং দ্রুত প্রজ্ঞাপন জারির দাবিতে মিছিল করেছে কোটা সংস্কারের আন্দোলনকারীরা। আজ মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

এদিকে, একই ঘটনায় আজ ক্যাম্পাসে আনন্দ মিছিল বের করে ছাত্রলীগ।

কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের দাবি, আজ তাদের বিক্ষোভ মিছিলে বাধা সৃষ্টি করেছে ছাত্রলীগ। তারা ঠিক যেখানে যেখানে মিছিল নিয়ে গেছে সেখানেই মিছিল নিয়ে পৌঁছে গেছে ছাত্রলীগ। একপর্যায়ে দুই দিক থেকে ঘেরাও করে ফেলা হয় কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের মিছিল।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, সকাল ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার এলাকায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানার নিয়ে জড়ো হয় ছাত্রলীগের শতাধিক নেতাকর্মী। যদিও আজ ছাত্রলীগের কোনো কর্মসূচি ছিল না বলে জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন। পরে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা সরকারি চাকরিতে কোটা না রাখার সুপারিশ সংবলিত প্রতিবেদনকে স্বাগতম জানিয়ে একটি আনন্দ মিছিল নিয়ে রাজু ভাস্কর্যে আসেন।

কোটা সংস্কারের আন্দোলনকারীরা আজ মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় যেখানে যেখানে মিছিল নিয়ে গেছেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরাও সেখানে গিয়ে পৃথক ‘আনন্দ মিছিল’ করেন। ছবি : এনটিভি

অন্যদিকে, বেলা ১১টার দিকে পূর্ব-ঘোষিত কর্মসূচি পালন করতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান গ্রন্থাগারের সামনে জড়ো হন কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা। সাড়ে ১১টার দিকে আন্দোলনকারীদের মিছিল টিএসসির রাজু ভাস্কর্যের দিকে এলে ছাত্রলীগের একটি মিছিল তাদের পিছু অনুসরণ করতে থাকে। এরপর কোটা আন্দোলনকারীদের মিছিল শাহবাগে পাবলিক লাইব্রেরির দিকে এগিয়ে গেলে সেখানেও ছাত্রলীগ তাদের পথ অবরোধ করে। পরে শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে সেখান থেকে ক্যাম্পাসের দিকে চলে আসে। এ সময় রাজু ভাস্কর্যের দিকে যান ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।

আবার, কোটা আন্দোলনকারীদের মিছিলটি কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের দিকে গেলে ঠিক সেখানেই ছাত্রলীগের মিছিল এসে স্লোগান দিতে থাকে। এই পর্যায়ে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। পরে শিক্ষার্থীরা তাদের মিছিল রাজু ভাস্কর্য থেকে স্মৃতি চিরন্তন, মল চত্বর, কলাভবন হয়ে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার ঘুরে অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে এসে সমাবেশ করে। এ সময়ও ছাত্রলীগের মিছিলটি তাদের সঙ্গে সঙ্গেই আসে।

ছাত্রলীগের মিছিলে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের মুক্তিযোদ্ধা ও গবেষণা বিষয়ক উপসম্পাদক আল মামুন, সাবেক সদস্য মাহফুজুর রহমান ইমন, জহুরুল হক হল শাখার সহসভাপতি কামাল উদ্দিন রানা, আরিফুল ইসলাম, বঙ্গবন্ধু হলের সহসভাপতি তানভির রহমান, বিজয় একাত্তর হলের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু ইউনুছ, সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের সাংগঠনিক সম্পাদক তানভির শিকদার, স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের সাধারণ সম্পাদক মো. শরিফুল ইসলাম, সমাজকল্যাণ ইনস্টিটিউটের সহসভাপতি সোহেল রহমান শাস্ত্রী প্রমুখ নেতৃত্ব দেন।

সমাবেশে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিলে বাধা দেওয়ার অভিযোগ করেন আন্দোলনকারীরা। তাঁরা বলেন, তাঁদের দীর্ঘ সাত মাসের আন্দোলনে ছাত্রলীগ বিভিন্নভাবে বাধা দিয়েছে। এর আগে তারা আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা করেছে। অনেকেই এখনো পুরোপুরি সুস্থ হননি। তাঁরা হামলাকারী ছাত্রলীগ নেতাদের বিচারের আওতায় এনে শাস্তির দাবি জানান।

প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের যে সুপারিশ করা হয়েছে তাকে সাধুবাদ জানিয়ে এবং দ্রুত প্রজ্ঞাপন জারির দাবিতে আজ মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে সমাবেশ করে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ। ছবি : এনটিভি

এদিকে, এসব অভিযোগের বিষয়ে জানেন না বলে জানান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন। তিনি বলেন, আজ ছাত্রলীগের কোনো কর্মসূচি ছিল না।

সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘ছাত্রলীগ সাধারণ শিক্ষার্থী হিসেবে আন্দোলন করতে পারে। আজ ছাত্রলীগের কোনো কর্মসূচি ছিল না। কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের বাধা দেওয়ার কোনো অভিযোগ পাইনি।’

সমাবেশে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সংগঠন বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক নূরুল হক নূর বলেন, ‘আমরা শুধু প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরির জন্য আন্দোলন করিনি। আমরা সব বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছি। প্রজ্ঞাপন দ্রুত সময়ের মধ্যে না দিলে বাংলার ছাত্রসমাজ দেশের বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে মতবিনিময় করে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলবে।’ এ সময় ৪০তম বিসিএসের সার্কুলারও বাতিলের দাবি জানান নূরুল হক নূর।

আন্দোলনের যুগ্ম আহ্বায়ক মশিউর রহমান অভিযোগ করে বলেন, ‘আমরা আন্দোলন করে অনেক নির্যাতনের শিকার হয়েছি। আন্দোলনে অংশগ্রহণ করার কারণে আমাকে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা হল থেকে ধরে নিয়ে ককটেল হাতে দিয়ে জোরপূর্বক স্বীকারোক্তি আদায় করেছে। আমরা যৌক্তিক দাবিতে আন্দোলন করেছি। আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে কোটার যৌক্তিক সংস্কার চেয়েছি। আমরা বলে দিতে চাই, কোনো ধরনের ভয়-ভীতি দেখিয়ে আমাদের দমিয়ে রাখতে পারবেন না। যত দিন পর্যন্ত আমাদের প্রজ্ঞাপন জারি না করা হবে, তত দিন পর্যন্ত আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব।’

এ সময় সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন বলেন, ‘মন্ত্রিপরিষদের সচিব কর্তৃক যে সুপারিশ করা হয়েছে তা আমরা ইতিবাচক হিসেবে দেখছি এবং দ্রুত সময়ের মধ্যে সেটি বাস্তবায়নের দাবি জানাচ্ছি।’