কোটার দাবিতে সারা দেশ অবরোধের ঘোষণা

Looks like you've blocked notifications!
প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা বহালের দাবিতে আজ শনিবার বিকেলে রাজধানীর শাহবাগে সমাবেশ করে ‘মুক্তিযোদ্ধা মঞ্চ’। ছবি : এনটিভি

প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা বহালের দাবি জানিয়েছেন মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যরা। এ দাবির লক্ষ্যে তারা সারা দেশে অনির্দিষ্টকালের জন্য অবরোধের ঘোষণা দিয়েছে।

আজ শনিবার বিকেলে রাজধানীর শাহবাগে ‘মুক্তিযোদ্ধা মঞ্চ’ আয়োজিত এক সমাবেশে এই ঘোষণা দেন মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অধ্যাপক আ ক ম জামাল উদ্দিন।

এর আগে বিকেল ৪টা থেকে সব ধরনের চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা ৩০ শতাংশ বহালের দাবিতে শাহবাগে সমাবেশ শুরু করে তারা।

সমাবেশে অধ্যাপক জামাল উদ্দিন বলেন, আজ থেকে সারা দেশে সড়কপথ, নৌপথ ও রেলপথে অবরোধ চলবে, যতক্ষণ পর্যন্ত আমাদের দাবি না মানা হবে।

সমাবেশে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের এই মুখপাত্র আরো বলেন, আমরা দেশের তৃতীয় শ্রেণীর নাগরিক হয়ে বাঁচতে চাই না। আমরা ভিক্ষার জন্য আসিনি, আমরা সমাবেশে এসেছি আমাদের ন্যায্য দাবি নিয়ে। সব ধরনের চাকরিতে ৩০ শতাংশ কোটা পুনর্ববহাল না করা পর্যন্ত অনির্দিষ্টকালের জন্য আমাদের অবরোধ চলবে।

মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে জামাল উদ্দিন বলেন, আমাদের দাবি না মানা পর্যন্ত আপনারা অবরোধ চালিয়ে যাবেন।

৩০ শতাংশ কোটার পুনর্বহালের দাবি জানিয়ে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কমান্ডের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক মো. আল মামুন বলেন, মুক্তিযোদ্ধারা দেশ নিয়ে এলো আর সেই মুক্তিযোদ্ধাদের দেশের তৃতীয় শ্রেণীর মর্যাদা দেওয়া হলো, এটা দুঃখজনক। আমরা বঙ্গবন্ধুর ঘোষিত ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা পুনর্ববহাল চাই। একইসঙ্গে মুক্তিযোদ্ধা পরিবার সুরক্ষা আইন চাই।

দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত শাহবাগসহ সারা দেশে অবস্থান কর্মসূচি পালন ও অবরোধ চলিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান আল মামুন।

মুক্তিযোদ্ধা ও মুজিব বাহিনীর সদস্য কাজী শাহজাহান বলেন, কোটা বাতিলের মাধ্যমে রাজাকাররা আবারও ষড়যন্ত্র করছে। কোটা বাতিল করে আমাদের অসম্মান করা হয়েছে। আমরা আমাদের সম্মান চাই, অধিকার চাই।

মুক্তিযোদ্ধা সন্তান ফেডারেশনের সভাপতি শাখাওয়াত হোসেন মাসুদ বলেন, আমাদের একটাই দাবি ৩০ শতাংশ কোটা পুনর্বহাল চাই। এটা পুনর্ববহাল না হওয়া পর্যন্ত রাজপথে অবস্থান করব। দাবি আদায়ে প্রয়োজনে রাজপথে জীবন দেব তবু রাজপথ ছেড়ে যাব না।

সমাবেশে ‘আমরা মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কেন্দ্রীয় কমিটি,’ ‘বীরশ্রেষ্ঠ, মুক্তিযোদ্ধা ও প্রজন্ম ঐক্য পরিষদ,’ ‘মুক্তিযোদ্ধা সন্তান ফাউন্ডেশন,’ ‘মুক্তিযুদ্ধ সংসদ সন্তান কমান্ড’সহ বিভিন্ন ব্যানারে প্রায় তিনশত মুক্তিযোদ্ধা-পরিবারের সদস্যদের উপস্থিত দেখা গেছে।

কোটা সংস্কার আন্দোলন বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের দীর্ঘদিনের আন্দোলন ও দাবির পরিপ্রেক্ষিতে গত বৃহস্পতিবার প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিল করে পরিপত্র জারি করে সরকার।

জনপ্রশাসনের চাকরিতে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগের জন্য বিদ্যমান কোটা ব্যবস্থা সংস্কারের জন্য শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সরকার গত ২ জুলাই ২০১৮ তারিখে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করে। কমিটি গত ১৭ জুলাই প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে বিদ্যমান কোটা পদ্ধতি বাতিলের সুপারিশ করে প্রতিবেদন জমা দেয়। পরে গত বুধবার তা মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে অনুমোদন দেওয়া হয়।

বুধবার সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. শফিউল আলম সাংবাদিকদের মন্ত্রিসভার বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানিয়ে বলেন, ৯ম গ্রেড থেকে ১৩তম গ্রেড পর্যন্ত সব নিয়োগ এখন থেকে সম্পূর্ণ মেধার ভিত্তিতে হবে। সরকার সময়ে সময়ে সরকারি চাকরিতে ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্বের বিষয়টি পর্যালোচনা করে দেখতে পারবে এবং তাদের জন্য কোটা নির্ধারণ করতে পারবে।

ওই কোটা বাতিলের প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার রাত ৮টা থেকে শাহবাগ মোড় অবরোধ করে রেখেছেন মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা।