মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

ছাত্রলীগের হাতে লাঞ্ছিত, ৫২ শিক্ষকের পদত্যাগ

Looks like you've blocked notifications!
টাঙ্গাইলের মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্ডিন্যান্স পরিবর্তনের দাবিতে গতকাল রোববার রাতে প্রশাসনিক ভবন ঘেরাও করে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। ছবি : এনটিভি

টাঙ্গাইলের মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের চার নেতার হাতে লাঞ্ছনার বিচার না পেয়ে ৫২ জন শিক্ষক বিভিন্ন দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করেছেন।

আজ সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বিশ্বদ্যিালয়ের শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে ৫২ জন শিক্ষক বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ড. তৌহিদুল ইসলামের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন। এর মধ্যে দুজন বিশ্ববিদ্যালয়ের রিজেন্ট বোর্ড সদস্য, চারজন ডিন, চারজন হল প্রভোস্ট, ১৪ জন বিভাগীয় চেয়ারম্যান এবং ২৮ জন হাউজ টিউটর ও সহকারী প্রক্টর রয়েছেন।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে আগে কোনো বিষয়ে একাধিকবার ফেল করলেও সেমিস্টার পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পেতেন শিক্ষার্থীরা। ২০১৪ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্ডিন্যান্স পরিবর্তন করে সেই সুযোগ বাতিল করা হয়। তখন থেকে কোনো শিক্ষার্থী দুই বার ফেল করলে আর পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পেতেন না। এই অর্ডিন্যান্সের কারণে পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের এক ছাত্রীকে কোয়ান্টাম মেকানিক্স-১ বিষয়ে পরীক্ষার অনুমতি দেননি বিভাগের শিক্ষকরা। গতকাল রোববার সকালে সেই বিষয়ে পরীক্ষা হয়। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ওই ছাত্রীকে জোর করে পরীক্ষা কেন্দ্রের সিটে বসিয়ে দেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সজীব তালুকদার ও তাঁর সহযোগীরা। বিভাগের শিক্ষকরা এ বিষয়ে বাধা দিতে গেলে সজীব তালুকদার বিভাগের চেয়ারম্যান সহকারী অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন ও বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মহিউদ্দিন তাসনিনকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন এবং তাঁদের মারধর করার চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ওই ছাত্রীকে পাহাড়া দিয়ে সম্পূর্ণ পরীক্ষা শেষ করান।

এদিকে শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনায় রোববার বিকেল ৪টার দিকে জরুরি সভা ডাকে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। সভায় ছাত্রলীগের সভাপতি সজীব তালুকদার, সহসভাপতি ইমরান মিয়া ও আদ্রিতা পান্না এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাবির ইকবালের বিচারের দাবি জানানো হয়। শিক্ষক সমিতি ও ১৫ জন শিক্ষক স্বাক্ষরিত উপাচার্য বরাবর দুটি আবেদনে এই চারজনের বিচারের দাবি জানানো হয়।

পরে সন্ধ্যা ৭টার দিকে উপাচার্যের কক্ষে ছাত্রলীগ ও শিক্ষকদের নিয়ে সভা করা হয়। সভার একপর্যায়ে ছাত্রলীগের নেতারা বের হয়ে এসে প্রতিটি হল থেকে ছাত্রছাত্রীদের বের করে করে ২০১৪ সালের অর্ডিন্যান্স পরিবর্তনের আন্দোলন শুরু করে। এ সময় প্রশাসনিক ভবন ঘেরাও করে ‘প্রশাসনের গদিতে আগুন জ্বালাও এক সাথে’, ‘অ্যাকশন অ্যাকশন ডাইরেক্ট অ্যাকশন’, ‘প্রশাসনের কালো হাত ভেঙে দাও-গুঁড়িয়ে দাও’, ‘অবৈধ অর্ডিন্যান্স মানি না, মানব না’ বলে নানা স্লোগান দেয় শিক্ষার্থীরা। রাত ৩টা পর্যন্ত এ আন্দোলন চলে।

শিক্ষার্থীরা বলে, ২০১৪ সালের অর্ডিন্যান্সের কারণে অনেক শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন ঝড়ে পড়ছে। অবিলম্বে এটা পরিবর্তন করা দরকার।

যোগাযোগ করা হলে মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক

সাইদুর রহমান এনটিভি অনলাইনকে বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠন ছাত্রলীগকে কলুষিত ও ভাবমূর্তি বিনষ্ট করতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের একটি অংশ পদত্যাগের নাটক সাজিয়েছে।

সাইদুর রহমান বলেন, ২০১৪ সালের অর্ডিন্যান্স বাতিলের দাবিতে এর আগে কয়েক বার আন্দোলন হয়েছে। প্রতিবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তা বাতিল করার আশ্বাস দিলেও বাতিল করেনি। এবার সাধারণ শিক্ষার্থীরা এ ব্যাপারে আন্দোলন শুরু করলে নৈতিকভাবে ছাত্রলীগ তাদের সমর্থন দিয়েছে।

এদিকে গণপদত্যাগের কারণ জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. মুহাম্মদ শাহীন উদ্দিন বলেন, শিক্ষকদের লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনায় সঠিক বিচার না পাওয়ায়  সোমবার দুপুরের দিকে শিক্ষকরা পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। আমরা এই ঘটনায় সুষ্ঠু বিচারের দাবি করছি।

ছাত্রলীগের লাঞ্ছনা ও শিক্ষকদের পদত্যাগের ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মো. আলাউদ্দিন বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে রিজেন্ট বোর্ডের সভায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন

এদিকে মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ঢাকার লিঁয়াজো অফিসে বিশ্ববিদ্যালয় রিজেন্ট বোর্ডের (বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদ) সভা উপাচার্য মো. আলাউদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় রিজেন্ট বোর্ডের সদস্য জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য শরীফ এনামুল কবিরকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী তিন সপ্তাহের মধ্যে কমিটিকে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকজন ছাত্র নেতার বিরুদ্ধে কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার্থে স্বার্থে তা প্রকাশ করা হয়নি বলে একটি সূত্র জানিয়েছে।

সভার সিদ্ধান্তের বিষয়ে জানতে উপাচার্য, রেজিস্ট্রার, প্রক্টরসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের বিভিন্ন জনের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাঁরা কেউ ফোন ধরেননি।