ছিনতাইয়ের অভিযোগে হলছাড়া ঢাবি ছাত্রলীগনেতা
ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) এক ছাত্রলীগনেতাকে মারধর করে হল থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে।
তাঁর নাম আমির হামজা। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক।
গতকাল শনিবার রাত ১০টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় তাঁকে হল থেকে বের করে দেন ছাত্রলীগ নেতারাই।
আমির হামজা লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউশনের ছাত্র। তাঁর বিরুদ্ধে ক্যাম্পাসে মাদক ব্যবসা, অপহরণ করে টাকা আদায়, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ তুলেছেন ছাত্রলীগনেতারা।
জানা যায়, গত ২ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের সামনে থেকে চার কলেজ পড়ুয়া ছাত্রকে জহুরুল হক হলের মাঠে নিয়ে যায় আমির হামজার অনুসারীরা। তাদের মারধর করে চারটি মুঠোফোন ছিনতাই করা হয়। ঘটনার বিষয়ে হল ছাত্রলীগের অন্য নেতাদের কাছে অভিযোগ আসে। এরপর তারা একত্র হয়ে আমির হামজাকে ডাকেন। এ সময় হলের অতিথি কক্ষে শাখার জ্যেষ্ঠ ১০-১৫ জন নেতার উপস্থিতিতে হামজা তিনটি মোবাইল ফোন ফেরত দেন এবং একটি দামি ফোন বিক্রি করে দিয়েছেন বলে জানান।
হল শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা জানান, বিভিন্ন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে হলশাখার বিভিন্ন দলের নেতাকর্মীরা সংশোধন হওয়ার জন্য তাঁকে হলের অতিথি কক্ষে ডেকে নির্দেশ দেন। কিন্তু তিনি সেখানে সবার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। পরে বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের জানালে তাঁরাও হামজার প্রতি ক্ষুব্ধ হন। পরে তাদের নির্দেশে হামজাকে হল থেকে বের করে দেওয়া হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে হলের এক যুগ্ম সম্পাদক বলেন, ‘তিনি হলে অবৈধভাবে আছেন। লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউটের ছাত্রদের জন্য আলাদা ছাত্রাবাসের ব্যবস্থা থাকলেও তিনি এই হলে থাকেন। কয়েক মাস আগে হল প্রশাসন ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউটের ছাত্রদের হল ত্যাগ করার জন্য নোটিশ দেয়। তবুও তিনি নির্দেশ অমান্য করে হলে থাকেন।এ ছাড়া সে বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িত। এজন্য হল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তাঁকে বের করে দিয়েছে।’
এর আগে আমির হামজা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের এক ওষুধের দোকানের কর্মচারীকে মারধর করে রক্তাক্ত করেন বলে অভিযোগ ওঠে। ওই ঘটনার পর তাঁকে ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কারের সুপারিশ করে বিজ্ঞপ্তি দেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সঞ্জিত চন্দ্র দাস ও সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসাইন।
এ বিষয়ে আমির হামজা বলেন, ‘কয়েকদিন আগে হলের বায়জিদ ও রাজিবসহ কয়েকজন জুনিয়র পলাশীতে বহিরাগতদের সঙ্গে ধাক্কা লাগায় একজনের মোবাইল পড়ে ভেঙ্গে যায়। এ জন্য তাঁরা বহিরাগতদের মোবাইল নিয়ে আসে। পরে ওই বহিরাগতরা হলে এলে তাদের মোবাইল ফিরিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু ওই ঘটনা নিয়ে তাঁরা (ছাত্রলীগের জ্যেষ্ঠ নেতারা) আমাকে ডাকে। আর আমার জুনিয়রদের মারে। আমাকে ধাক্কা দেয়। আমি জুনিয়রদের নিয়ে বাইরে চলে আসি। আমি পরে হলে আসব।’
হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আসিফ তালুকদার বলেন, ‘জহুরুল হক হলে যারা ছিনতাই করে, মাদক ব্যবসা করে তাদের কোনো স্থান নেই। ছাত্রলীগ কখনোই অপরাধীদের প্রশ্রয় দেয় না। আমির হামজার বিষয়ে যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে তা সর্বসম্মতিক্রমে। বাকিটা হল প্রশাসন দেখবে।’
ঘটনার বিষয়ে হল ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রিফাত উদ্দিন বলেন, ‘ছাত্রলীগের সুনাম ক্ষুণ্ণের চেষ্টা করায়, তাঁর বিষয়ে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্যও আমাদের উদ্যোগ থাকবে।’
কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী বলেন, ‘ব্যাক্তির অপরাধের দায় ছাত্রলীগ নেবে না। এ রকম একটি ঘটনা শুনে বিশ্ববিদ্যালয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে তা সমাধান করতে বলেছি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সহযোগিতায় ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে তাঁরা এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।’
বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘কেন্দ্রীয় নেতারা বিষয়টি আমাদের জানিয়েছেন। সবার সঙ্গে কথা বলে আমরা একটি সিদ্ধান্তে আসব।’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী বলেন, ‘অপরাধীদের ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জিরো টলারেন্স ভূমিকায় আছে। অপরাধী যেই হোক কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। ঘটনাটি আমি শুনেছি। হল প্রশাসন বিষয়টি দেখছে। ’