পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দিয়ে শিক্ষক সমিতি বহিষ্কার
‘শৃঙ্খলা ভঙ্গের’ অভিযোগে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন থেকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতিকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে।
আজ বুধবার সন্ধ্যায় সংগঠনের সভাপতি অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ ও মহাসচিব অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এর আগে বিকেলে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি আগামী শুক্রবার অনুষ্ঠিতব্য স্নাতক (সম্মান) শ্রেণির প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা বয়কটের ঘোষণা দেয়। তার পরই এ সিদ্ধান্তের কথা জানায় ফেডারেশন। তবে সাময়িক বহিষ্কারের ‘যৌক্তিক’ কোনো কারণ নেই বলে মনে করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি।
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, ‘গত ১০ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের কার্যনির্বাহী পরিষদের সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জানানো যাচ্ছে যে, ফেডারেশনের শৃঙ্খলাবিরোধী কাজ করায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতিকে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন থেকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হলো।’
এ সিদ্ধান্ত আজ বুধবার থেকে কার্যকর হবে বলেও জানায় ফেডারেশন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আবুল হোসেন রাতে এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘বিষয়টি আমি আপনার কাছ থেকেই শুনলাম। আমি এ ব্যাপারে এখনো কোনো কাগজপত্র পাইনি। এ ব্যাপারে ফেডারেশনের কারো সঙ্গেও আমার কোনো কথা হয়নি।’
তবে বহিষ্কারের কোনো ‘যৌক্তিক’ কারণ নেই উল্লেখ করে অধ্যাপক আবুল হোসেন বলেন, ‘কোনো সংগঠনকে বহিষ্কারের আগে কারণ দর্শানোর (শোকজ) নোটিশ দিতে হয়। আমরা এ ধরনের কোনো নোটিশ পাইনি।’
‘শৃঙ্খলাবিরোধী’ কারণে ফেডারেশন থেকে বহিষ্কারের ব্যাপারে জানতে চাইলে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘এর আগেও অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বিরুদ্ধে মানহানিকর বক্তব্য দিয়েছিলেন, তখন ফেডারেশনের বাইরে গিয়েই আমরা স্বতন্ত্রভাবে দুইদিনের কর্মসূচি দিয়েছিলাম। কই, তখন তো কেউ কিছু বলেনি।’
ফেডারেশনের চিঠি পেলে এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানাতে পারবেন বলেও জানান অধ্যাপক আবুল হোসেন।
পৃথক বেতন কাঠামো ও গ্রেড সমস্যা নিরসনের দাবিতে প্রায় চার মাস ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা আন্দোলন করছেন। এর মধ্যে সিলেকশন গ্রেড ও টাইম স্কেল বাদ দিয়ে গত ৭ সেপ্টেম্বর অষ্টম জাতীয় বেতন স্কেল অনুমোদন করে মন্ত্রিসভা। এরপর শিক্ষকদের আন্দোলন আরো জোরদার হয়।
এ সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের বৈঠকও হয়। বৈঠকে শিক্ষকরা জানান, তাঁরা আগামী ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত কোনো ধরনের কর্মসূচি দেবেন না। কিন্তু দাবি আদায় না হলে ১ নভেম্বর থেকে তাঁরা লাগাতার আন্দোলনে যেতে বাধ্য হবেন। যদিও শিক্ষামন্ত্রী আশা প্রকাশ করেছেন, শিক্ষকদের সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে। সরকার এ ব্যাপারে আন্তরিকভাবে কাজ করছে।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির ভর্তি পরীক্ষা বয়কটের সিদ্ধান্ত ফেডারেশনের সিদ্ধান্তের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হবে কি না-এমন প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক আবুল হোসেন বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান। আমাদের আলাদা সত্তা আছে। আমরা ফেডারেশনের সঙ্গেই আছি। তাদের কর্মসূচি পালনে আমরা একমত। কিন্তু আমরা ফেডারেশনে বিলীন হয়ে যাইনি। স্বতন্ত্র অবস্থান থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা পরীক্ষা বয়কটের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।’