জবি ছাত্রলীগের দুই পক্ষে সংঘর্ষ, কমিটি স্থগিত

Looks like you've blocked notifications!
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের দুই পক্ষে সংঘর্ষ হয়। ছবি : এনটিভি

আধিপত্য বিস্তার ও পূর্ব ঘটনার জের ধরে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। আজ রোববার  সকাল সাড়ে আটটা থেকে শুরু হয়ে বিকাল তিনটা পর্যন্ত থেমে থেমে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

সংঘর্ষের সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর অধ্যাপক শাহীন মোল্লাসহ ১৫ জন আহত হয়। এ সময় ছাত্রলীগ কর্মীদের উভয় পক্ষের হাতেই দেশি অস্ত্র- চাপাতি, রড, স্ট্যাম্প, লাঠি ইত্যাদি দেখা যায়। সংঘর্ষের সময়ে ছয়টি ককটেল বিস্ফোরিত হয়। এ সময় সাধারণ শিক্ষার্থীদের মাঝে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়।

এদিকে ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার কার্যক্রম স্থগিত করেছে কেন্দ্রীয় কমিটি। আজ রোববার কেন্দ্রীয় কমিটির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়। বিষয়টি তদন্তের জন্য চার সদস্যের কমিটিও গঠন করেছে কেন্দ্রীয় কমিটি। ওই সংবাদবিজ্ঞপ্তিতে স্বাক্ষর করেন কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘ক্যাম্পাসের স্থিতিশীলতা ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে ব্যর্থ হওয়ায় এবং দলীয় শৃঙ্খলা সমুন্নত রাখতে নেতৃবৃন্দের আন্তরিকতা ও সদিচ্ছার ঘাটতি পরিলক্ষিত হওয়ায় তাদের সকল সাংগঠনিক কার্যক্রম স্থগিত করা হলো এবং অধিকতর তদন্তের স্বার্থে চার সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হলো।’

কমিটির সদস্যরা হলেন- সোহান খান, আরেফিন সিদ্দিক সুজন, আল নাহিয়ান খান জয় ও ইয়াজ আল রিয়াদ। তদন্ত কমিটিকে সাত কার্যদিবসের মধ্যে সুপারিশসহ তদন্ত রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

জানা যায়,  প্রেম ঘটিত তুচ্ছ ঘটনায় গত বৃহস্পতিবার বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের  নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সম্পাদক শেখ জয়নুল আবেদিন রাসেলের কর্মী আসম আইয়ুব তুহিনকে ছাত্রলীগ কর্মী মেহেদী হাসান মুন, ১৩ ব্যাচের কম্পিউটার সায়েন্সের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল রিফাতসহ কয়েকজন মারধর করে। পরে সন্ধ্যায় সভাপতি তরিকুল ইসলামের গ্রুপের কর্মী মনোবিজ্ঞান বিভাগের ১১ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান নয়ন ও রিফাত তুহিনকে সুমনা হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে ক্যাম্পাসের প্রধান ফটকের সামনে আসলে তাদের ওপর সাধারণ সম্পাদক শেখ জয়নুল আবেদিন রাসেলের কর্মীরা হামলা চালায়।

এর জেরে আজ সকাল থেকে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কর্মীরা গ্রুপের কর্মীরা ক্যাম্পাসে শহীদ মিনারের সামনে ও বিজ্ঞান ভবনের চত্বরে অবস্থান নেয়। এক পর্যায়ে মহড়া দেওয়ার সময় ছাত্রলীগের কর্মীরা একে অপরকে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া দেয়। এ সময় দুই পক্ষের কর্মীদের হাতে ছিল লাঠসোটা,লোহার রড,হাতুড়ি,চাপাতি। উভয়পক্ষ  একে অপরকে লক্ষ করে ইটপাটকেল ছোঁড়াছুঁড়ি করে।

সভাপতি গ্রুপের কর্মীরা সাধারণ সম্পাদকের গ্রুপের কর্মীদের ধাওয়া দিয়ে ক্যাম্পাসের পেছনের গেট দিয়ে বের করে দেয়। সভাপতি গ্রুপের কর্মীরা ক্যাম্পাসের ভেতরে অবস্থান নেয়। সাড়ে এগারটার দিকে সাধারণ সম্পাদকের কর্মীরা প্রধান ফটক দিয়ে ক্যাম্পাসে ঢুকতে চাইলে সভাপতি গ্রুপের কর্মীরা তাদের আবার ধাওয়া করে। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা ধাওয়াপাল্টা ধাওয়ার মাঝখানে পড়ে যায়। সহকারী প্রক্টর শাহীন মোল্লাসহ কয়েকজন ইটের আঘাতে আহত হন। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন, বিজ্ঞান ভবন ও ক্যান্টিনের সামনে কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। ক্যাম্পাসের ভেতরে চারটি বাস ভাঙচুর করা হয়।  দুপুর ১টার দিকে ক্যাম্পাসের ভিতরে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হলে সাধারণ সম্পাদকের কর্মীরা আবার ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে চাইলে সভাপতি গ্রপের কর্মীরা তাদের ওপর আবার হামলা করে। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের রফিক ভবনের নিচে পরিসংখ্যান বিভাগের শ্রেণীকক্ষের দরজা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষের সময় অর্ধশতাধিক ছাত্রলীগ কর্মী হেলমেট পরিহিত ছিল।

সংঘর্ষের ঘটনায় ছাত্রলীগ কর্মী খালিদ মাহমুদ সুযন (১৩ তম ব্যাচ),সামসুল হুদা গাজী (১৩তম ব্যাচ), মামুন (১২তম ব্যাচ), মাহফুজ (১২তম ব্যাচ),প্রান্ত (১২তম ব্যাচ),রেজওয়ান,ইশরাক চৌধুরী (১৪তম ব্যাচ),নোমানসহ ১৫ ছাত্রলীগ কর্মী আহত হন। তাদেরকে বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টার,সুমনা হাসপাতাল,ন্যাশনাল হাসপাতাল,মিটফোর্ড হাসপাতাল ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়।

জবি ছাত্রলীগের সভাপতি তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘গত বৃহস্পতিবার মেয়েলি একটা বিষয় নিয়ে সাধারণ সম্পাদকের কর্মীরা ছাত্রলীগের দুই কর্মীকে মারধর করে। রোববার এ ঘটনার সমাধানে আমাদের নিজেদের মধ্যে বসার কথা ছিল। কিন্তু সাধারণ সম্পাদকের কর্মীরা তার আগেই আমার কর্মীদের উপর আক্রমন করছে। আমি অসুস্থ থাকার কারণে ক্যাম্পাসে না আসায় পরে আমার ছেলেরাও সাধারণ সম্পাদকের কর্মীদের ধাওয়া করে। পরে ক্যাম্পাসে সিনিয়র নেতাদের পাঠিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রন করি।’

জবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ জয়নুল আবেদিন রাসেল বলেন, ‘পূর্বঘটনার জেরে মারামারির সুত্রপাত হয়। আমার কর্মীদের ওপর  সভাপতি গ্রুপের কর্মীরা আক্রমণ করে। আজকের ঘটনায় যারা জড়িত তাদেরকে চিহ্নিত করে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

কোতয়ালি জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) বদরুল হাসান বলেন, ‘ক্যাম্পসে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া চলার সময় আমরা মাঝখানে অবস্থান নেই।  দুই পক্ষকে আলাদা রেখে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনি। এ সময় ক্যাম্পাসের ভেতরে ও বাইরে অতিরিক্ত দুই প্লাটুন পুলিশ মোতায়েন ছিল।’

বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর ড. নূর মোহাম্মদ বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সাথে আলোচনা করে আগামীকাল জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য ড.মীজানুর রহমান বলেন, ‘আজকের ঘটনায় প্রক্টরিয়াল বডিকে একটি প্রতিবেদন তৈরি করতে বলা হয়েছে। প্রতিবেদনের আলোকে ব্যবস্থানেওয়া হবে।’