জবিতে ছাত্রলীগের দুই পক্ষে দফায় দফায় সংঘর্ষ
আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মধ্যে আজ সোমবার দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। এতে পাঁচ সাংবাদিকসহ কমপক্ষে ৪০ জন আহত হয়েছে।
আজ সোমবার বেলা ১১টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত থেমে থেমে এ সংঘর্ষ চলে। সংঘর্ষ চলাকালে সাত-আটটি ককটেল বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। পরে পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, জবি শাখা ছাত্রলীগের স্থগিত কমিটির সভাপতি তরিকুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক শেখ জয়নুল আবেদিন রাসেলের অনুসারীরা একত্র হয়ে সকাল থেকে ক্যাম্পাসে অবস্থান নেয়। এরপর বেলা ১১টার দিকে নতুন পদপ্রত্যাশী নেতাকর্মীরা ক্যাম্পাসে মহড়া দিয়ে প্রবেশ করতে চাইলে তাদের ধাওয়া দিয়ে ক্যাম্পাস থেকে বের করে দেয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের অনুসারীরা। এ সময় উভয়পক্ষের ১৫ জন আহত হয়।
এরপর অন্যান্য পদপ্রত্যাশী নেতাকর্মীরা ক্যাম্পাস গেট থেকে সরে গেলে স্থগিত কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের অনুসারীরা শহীদ মিনারের সামনে অবস্থান নেয়। একপর্যায়ে মোবাইল ফোনে ছবি ধারণ করাকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন বিল্ডিংয়ের নিচে থাকা শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা হয়। এ সময় কমপক্ষে পাঁচ সাধারণ শিক্ষার্থী আহত হন। এদের সবাইকে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্র থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়।
এরপর বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে ক্যাম্পাস থেকে বের হয়ে প্রধান গেটের সামনে ক্যাম্পাসের বাইরের পদপ্রত্যাশী নেতাকর্মীদের ধাওয়া দেয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের অনুসারীরা। এ সময় দুই পক্ষের কর্মীরা ইটপাটকেল ছোড়াছুড়ি শুরু করে। সাত থেকে আটটি ককটেল বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়।
মারামারির ঘটনার সংবাদ সংগ্রহকালে স্থগিত কমিটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের কর্মী সিএসই বিভাগের ১৩তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ফাহিম, মনোবিজ্ঞান বিভাগের ১২তম ব্যাচের আবিদ আল হাসান, সমাজকর্ম বিভাগের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী কিবরিয়াসহ আট-দশজন সমকালের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক লতিফুল ইসলাম, দৈনিক সংবাদের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি রাকিব, সাধারণ সম্পাদকের কর্মী ইতিহাস বিভাগের ৮ম ব্যাচের কর্মী আলী হাসান, খবরপত্রের সোহাগ রাসিফ ও বিডি ২৪ রিপোর্টের প্রতিনিধি সানাউল্লাহ ফাহাদের ওপর হামলা করে। রাকিবকে উদ্ধার করে পুলিশ সুমনা হাসপাতাল এবং লতিফুল ইসলামকে ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়।
পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে করে। পরে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কর্মীরা ক্যাম্পাসে অবস্থান নেয়। এ সময় তাদের হাতে দেশীয় ধারালো অস্ত্র দেখা যায়।
এদিকে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করে। এ সময় বিভিন্ন বিভাগের ক্লাস ও ক্যাম্পাসের আশপাশের দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। রায়সাহেব বাজার থেকে সদরঘাটের রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়।
দুই পক্ষের সংঘর্ষে জবি ছাত্রলীগের স্থগিত কমিটির সহসভাপতি হাসান আহমেদ খান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কাওছার, সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুজ্জামান, ছাত্রলীগকর্মী আনিসুর রহমান, হাসিবুর রহমান শুভ, জুয়েল, জিয়াউল হক, মাহবুবুল হাসান রনি, মহিউদ্দিন অনি, শেখ মেহেদী আল হাসান, ইমরান, অপি, ইমরুল নিয়াজ, টুটুল, শরিফুল ইসলাম হিমু, মিরাজ, শাকিল, মিনুন মাহফুজ, শাহরুক আল শোভন, সোহান, আবু মুসা রিফাত, সাজেদুল নাঈম, কাজী তৈয়ব, কামরুল হাসান, শিশিরসহ কমপক্ষে ৪০ জন আহত হন। আহতদের বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টার, সুমনা হাসপাতাল, ন্যাশন্যাল মেডিকেল কলেজ ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জবি ছাত্রলীগের স্থগিত কমিটির সাধারণ সম্পাদক শেখ জয়নুল আবেদীন রাসেল বলেন, ‘ক্যাম্পাসে কী হচ্ছে তা আমরা জানি না। এটা জানার কথা কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের। কারা কী করছে সেটার দায় আমাদের ওপর এখন বর্তায় না।’
সভাপতি তরিকুল ইসলামকে ফোন দেওয়া হলে তিনি ফোন কেটে দেন।
এ বিষয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর মোস্তফা কামাল বলেন, ক্যাম্পাসে অবস্থান নেওয়াকে কেন্দ্র করে ক্যাম্পাসের বাইরে শিক্ষার্থীদের দুই পক্ষের মধ্যে ইটপাটকেল ছোড়াছুড়ির ঘটনা ঘটেছে। তবে ক্যাম্পাসের ভেতরে কোনো কিছু হয়নি। আমরা সকাল থেকে এ পর্যন্ত পুলিশকে নিয়ে ক্যাম্পাসে অবস্থান করেছি। ভিডিও ফুটেজ দেখে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের কোতোয়ালি জোনের সহকারী কমিশনার বদরুল হাসান বলেন, ছাত্রলীগের দুই পক্ষ মুখোমুখি সংঘর্ষে জড়াতে চাইলে আমরা মাঝখানে অবস্থান নিয়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দুই দিকে পাঠিয়ে দেই। এ ঘটনায় চারটি কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিই। তিন প্লাটুন অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পুলিশের পক্ষ থেকে একটি মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছি।