মধুর ক্যান্টিনে ছাত্রলীগের দুইপক্ষের মধ্যে উত্তেজনা

Looks like you've blocked notifications!
আজ শনিবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ডাকসু নির্বাচন নিয়ে মধুর ক্যান্টিনে কথা বলতে গেলে উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। ছবি : এনটিভি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ অন্তঃকোন্দল প্রকাশ্যে এসেছে। আজ শনিবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচন নিয়ে মধুর ক্যান্টিনে কথা বলতে এলে ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় ও কেন্দ্রের দুই শীর্ষ নেতাদের মধ্যে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি বিরাজ করে।

এ সময় ছাত্রলীগের হলপর্যায়ের সাবেক নেতা সাগর রহমান এক ছাত্রীকে ধাক্কা দেন। এতে উভয়ের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি হলে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন লাঠি হাতে নিয়ে সবাইকে সরিয়ে দেন। পরে হলের নেত্রীরা ক্যান্টিনের গোল ঘরে শোভন ও ঢাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসাইনকে অবরুদ্ধ করে রেখে তাদের দাবির বিষয়ে সুস্পষ্টভাবে জানতে চান।

এদিকে, হলের নেতাদের বাধা দেওয়ার বিষয়টি পূর্বপরিকল্পিত বলে অভিযোগ করেন ছাত্রী হলের নেত্রীরা।

ছাত্রলীগের একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী নেতা জানান, মেয়েদের হলগুলোতে যারা বর্তমান সভাপতি ও সম্পাদক তাদের ডাকসুতে না রাখলেও হলের ভিপি-জিএস পদে রাখবে কিনা তা জানতে দুপুর ১২টার কিছু আগে মধুর ক্যান্টিনে যান তাঁরা। এ সময় মধুতে ছাত্রলগের সভাপতি শোভন ও ঢাবি সম্পাদক সাদ্দাম উপস্থিত ছিলেন। তাঁদের সঙ্গে ডাকসু ও হল সংসদে ছাত্রীদের প্রার্থী করার দাবি জানান নেত্রীরা।

এদিকে, ছাত্রী হলের সভাপতি-সম্পাদকরা এলে তাদেরকে বিভিন্নভাবে হেনস্থা করতে থাকেন ছাত্রলীগের শীর্ষ চার নেতার অনুসারীরা। এ সময় সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের সহ-সভাপতি ও ডাকসুর সম্ভাব্য প্রার্থী মুজাহিদ কামাল, স্যার এফ রহমান হলের সাবেক নেতা সাগর রহমান এবং সূর্যসেন হলের সাংস্কৃতিক বিষয়ক উপ-সম্পাদক সিয়াম রহমানসহ একাধিক নেতা উপস্থিত ছিলেন। তখন সাগর রহমান এক হলের নেত্রীকে ধাক্কা দেন। তখন ওই নেত্রী সাগরের জামার কলার ধরে টানাহেচড়া করতে থাকেন। এরই মধ্যে অন্য মেয়েদের মধ্যেও ব্যাপক উত্তেজনাকর পরিবেশ বিরাজ করে। এ সময় দুইপক্ষের নেতাকর্মীদের মধ্যে ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটে। ঘটনা যখন চরম পর্যায়ে যায় তখন শোভন মধুর ক্যান্টিনের গোল ঘর থেকে লাঠি বের করে আনেন।

এ সময় ছাত্রী হলের নেত্রীরা এ ঘটনার বিচারের দাবিতে শোভন ও সাদ্দামকে গোল ঘরের মধ্যে অবরুদ্ধ করে রাখেন। সেখানে হল সভাপতি ও সম্পাদকদের সঙ্গে শোভন ও সাদ্দামের প্রায় এক ঘণ্টা ধরে আলোচনা হয়। আলোচনা চলার সময় উভয়ের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করে। এর পরে আবার হাসাহাসির ঘটনাও ঘটে।

ধাক্কা দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে সাগর রহমান বলেছেন, তিনি ঘটনাস্থলে ছিলেন। হলের নেত্রীরা তাঁকে সরে যেতে বলেন। তিনি মধ্যখানে থাকলে উল্টো তাঁকে ধাক্কা দিয়ে বের করে দেন বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব হলের সভাপতি বেনজির হোসেন নিশি।

সাগর রহমান বলেন, ‘আমি কোনো নেত্রীকে ধাক্কা দেয়নি। বরং তাঁরাই আমাকে ধাক্কা দিয়ে বের করে দেন।’

পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন ছাত্রলীগের সভাপতি শোভন। তিনি বলেন, আমরা ছাত্রী হলের সভাপতি-সম্পাদকদের ডেকেছি। হলের যারা প্রার্থী হবেন তারা কিভাবে কাজ করবেন সে বিষয়ে পরামর্শ নেওয়া হবে।

যদিও মিটিংয়ের বিষয়ে অনেকেই জানেন না বলে জানান কয়েকটি হলের সভাপতি-সম্পাদক। জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ছাত্রলীগ নেত্রী বলেন, গতকাল (শুক্রবার) রাত্রে আমরা যখন জানতে পারি হলে যারা সভাপতি-সম্পাদক, এদের ডাকসুতে রাখা হচ্ছে না তখন আমরা আজ (শনিবার) মধুতে আসি। আমরা হলের মধ্যে কারা ডাকসুর প্রার্থী হবেন সে বিষয়ে আলোচনা করি। কিন্তু শোভন ও সাদ্দামের অনুসারীরা আমাদের বিভিন্নভাবে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেন। তখন তাদের সঙ্গে আমাদের কথা কাটাকাটি হয়। এ সময় তাদের মধ্য থেকে একজন আমাদের এক নেত্রীকে ধাক্কা দেয়। তখন উভয়ের মধ্যে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। পরে শোভন লাঠি বের করে উভয়কে থামিয়ে দেন।

ছাত্রী হলের নেত্রীদের বাধা দেওয়ার বিষয়টি পূর্ব পরিকল্পিত বলে অভিযোগ উঠেছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ছাত্রী হলের এক সাধারণ সম্পাদক বলেন, আমরা যখন আসি তখন শোভন ও সাদ্দামের অনুসারীরা সেখানে উপস্থিত ছিলেন। তাদেরকে সরে যেতে বললেও তারা যায়নি। তারা আমাদের বাধা দিবে এটা তারা আগে থেকেই প্রস্তুত হয়ে আসছিল।

উত্তেজনার বিষয়ে জানতে চাইলে ছাত্রলীগ সভাপতি শোভন সাংবাদিকদের বলেন, উত্তেজনাকর কোনো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। আমরা হলের সভাপতি-সম্পাদকদের সঙ্গে মিটিং করেছি। তাদের মধ্যে ডাকসু নিয়ে কিভাবে কাজ করবে সে বিষয়ে আলোচনা করেছি।

লাঠি হাতে বের হওয়ার বিষয়ে শোভন বলেন, যখন সবাই ঝামেলা করছিল তখন আমি সবাইকে থামিয়ে দেই।

বিভিন্ন হলের সভাপতি-সম্পাদকদের ডাকসুতে অংশগ্রহণের বিষয়ে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি বলেন, যারা যোগ্য এবং পরিচিত তাদের নাম প্রস্তাব করা হয়েছে। তাদের বিষয়টি দেখবেন মূল দলের হাইকমান্ডরা। তারা যে নির্দেশনা দিবেন তা নিয়ে আমরা কাজ করব। এছাড়া, বিভিন্ন গোয়েন্দা বিভাগ আছে। তাদের রিপোর্টও নেওয়া হচ্ছে। তার ওপর ভিত্তি করেই প্যানেলে রাখা হবে।

প্যানেলে টিএসসির বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতাদের রাখার বিষয়ে শোভন বলেন, তাদের মধ্যে যারা যোগ্য আর ভালো তাদের নিয়েও আলোচনা হয়েছে। সেসব বিষয় দেখবেন আওয়ামী লীগের নেতারা।