ডাকসুর প্রার্থী তালিকায় অসংগতির অভিযোগ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীদের প্রাথমিক তালিকায় অসংগতির অভিযোগ উঠেছে। এর ফলে অনেক যোগ্য শিক্ষার্থীই প্রার্থিতা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বলে অভিযোগ জানিয়েছেন।
গতকাল বুধবার বিকেলে প্রার্থীদের খসড়া তালিকা প্রকাশ করা হলে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী এ অভিযোগ তোলেন। ডাকসু নির্বাচন কর্তৃপক্ষ মোট সাতজনের প্রার্থিতা বাতিল করেছে।
কারণ হিসেবে ছয়জনের ভোটার তালিকায় নাম না থাকার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। আর একজনের ক্ষেত্রে তথ্যে অসম্পূর্ণতার কথা বলা হয়েছে। এর পাশাপাশি বাইরে ভোটার তালিকায় নাম না থাকার পরও এক ছাত্রলীগ নেত্রীর ডাকসুতে প্রার্থিতা নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে।
স্বতন্ত্রভাবে ডাকসুর সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে প্রার্থী হয়েছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী এ আর এম আসিফুর রহমান। তথ্যে অসম্পূর্ণতার কথা বলে তাঁর প্রার্থিতা বাতিল করে দেওয়া হয়েছে।
এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে আসিফুর রহমান বলেন, ‘আমরা সংবাদ সম্মেলনে প্রশাসনিক নীলনকশার নির্বাচনী প্রক্রিয়ার প্রতিবাদ জানিয়েছিলাম। এরই মধ্যে সেই নীলনকশার বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে। ডাকসু নির্বাচনের সব বিধি মেনে মনোনয়নপত্র দাখিল করা সত্ত্বেও জিএস পদের প্রাথমিক প্রার্থী তালিকা থেকে আমাকে বাদ দেওয়া হয়েছে। প্রশাসনের এ সিদ্ধান্ত একেবারেই উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, শিশুসুলভ ও হাস্যকর।’
ডাকসুর সদস্যপদে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন ব্যাংকিং অ্যান্ড ইন্স্যুরেন্স বিভাগের ছাত্রী ইশাত কাসফিয়া ইলা (ইরা)। তাঁর প্রার্থিতাও বাতিল হয়েছে। তিনি বলেন, “আসন্ন ডাকসু নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য ব্যাংকিং অ্যান্ড ইন্স্যুরেন্স বিভাগের ‘মাস্টার্স অব ট্যাক্স ম্যানেজমেন্ট’ কোর্সে একই সময়ে আমরা প্রায় ৩০ জনের মতো শিক্ষার্থী ভর্তি হই। ১৯ ফেব্রুয়ারি আমার ভর্তির সব কাজ সম্পন্ন হয়। হল থেকে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা ২০ ফেব্রুয়ারি রেজিস্ট্রার ভবনে পাঠানো হলেও আমার নাম সে তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। কারণ হিসেবে হল কর্তৃপক্ষ দেখিয়েছে, সম্পূর্ণ তালিকা তৈরি হয়ে গেছে, নতুন করে নাম অন্তর্ভুক্ত করলে পুরো তালিকা এলোমেলো হয়ে যাবে। অথচ একই প্রক্রিয়ায় ভর্তি সম্পন্ন করে অন্যরা প্রার্থী হতে পারছেন। আমার সঙ্গে অন্যায় করা হয়েছে। ভোট প্রদানে এবং প্রার্থিতার সুযোগ পেতে আমি আদালতের শরণাপন্ন হব।’
প্রার্থিতা বাতিল হওয়া একই বিভাগের আরেক শিক্ষার্থী হায়দার মোহাম্মদ জিতুও একই অভিযোগ তুলে বলেন, অন্যদের মতো যথাযথ নিয়ম অনুসরণ করে তিনি এ বিভাগে ভর্তি হন। অথচ তাঁর প্রার্থিতাও বাতিল করা হয়েছে। অন্যদিকে একই প্রক্রিয়ায় হলের ভিপি, জিএস পদ ও ডাকসুর ক্ষেত্রে অধিকাংশের প্রার্থিতা বৈধ হয়েছে বলে জানান তিনি। জিতু ডাকসুর সদস্যপদে প্রার্থী ছিলেন।
ডাকসু নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার জন্য সমাজকল্যাণ ও গবেষণা বিভাগের স্পেশাল মাস্টার্সে ভর্তি হলেও ২০ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত চূড়ান্ত ভোটার তালিকায় নাম আসেনি বলে অভিযোগ করেন বাম ছাত্রসংগঠনগুলোর জোটের জিএস প্রার্থী উম্মে হাবিবা বেনজীর। ছাত্র ফেডারেশনের এই নেত্রী বলেন, ‘সঠিক সময় গিয়ে আমি ভিসি স্যারকে ভর্তির বিষয়টি জানিয়েছি। কিন্তু তিনি কিছুদিন আগে আমাকে ভর্তির অনুমতি দিয়েছেন। এর আগে সঠিক সময়ে ভর্তির অনুমতি দিলে আমি নির্বাচন করতে পারতাম।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের আরো তিনটি হল থেকে একই রকম অভিযোগ করেছেন তিন প্রার্থী।
ছাত্রদল মনোনীত কবি জসীমউদদীন হলের ভিপি প্রার্থী তৌহিদুর রহমান তাজ বলেন, ‘২০ ফেব্রুয়ারির ভোটার তালিকায় নাম না থাকার কারণে আমার প্রার্থিতা বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে। রিটার্নিং অফিসার বলছেন, সম্পূরক ভোটার তালিকায় নাম আসবে, কিন্তু প্রার্থী হতে পারব না। আমার হল থেকে ভোটার নম্বর দেওয়া হয়েছে ১৬৩৫। এই নম্বর দিয়ে আমি প্রার্থী ফরম তুলি ও জমা দিই। এভাবে প্রার্থিতা বাতিল সম্পূর্ণ অযৌক্তিক।’ ছাত্রলীগকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত করার জন্য এ ধরনের কাজ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
একই ঘটনা এস এম হলের ভিপি প্রার্থী নাহিদুজ্জামান শিপন ও শামসুন্নাহার হলের ভিপি প্রার্থী মানসুরার ক্ষেত্রেও ঘটেছে বলে জানান তৌহিদুর রহমান।
এদিকে এসব অভিযোগের বিষয়ে ডাকসুর প্রধান রিটার্নিং অফিসার অধ্যাপক ড. এস এম মাহফুজুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ‘আমরা যাচাই-বাছাই শেষে খসড়া তালিকা প্রকাশ করেছি। যদি এ বিষয়ে কারো কোনো আপত্তি থাকে, তাহলে সে অভিযোগ জানাতে পারবে।’