স্বতন্ত্র প্রার্থীকে ১৩ ঘণ্টা আটকে রেখে ছাত্রলীগের নির্যাতন
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সলিমুল্লাহ মুসলিম (এসএম) হল সংসদের এক স্বতন্ত্র প্রার্থীকে মারধরসহ রাতভর নির্যাতন করার অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। একই সঙ্গে তাঁকে প্রায় ১৩ ঘণ্টা আটকে রেখে আজ শনিবার সকাল ১০টার দিকে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করতে বাধ্য করা হয়।
এ ঘটনার পর ভুক্তভোগী ওই প্রার্থী অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে হল প্রশাসনকে মৌখিক অভিযোগ দেন। বিষয়টি স্বীকার করেছে ছাত্রলীগ।
ভুক্তভোগী ওই প্রার্থীর নাম মাহবুবুর রহমান সাজিদ। তিনি এস এম হল ছাত্র সংসদের সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক পদে স্বতন্ত্রভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ছাত্রলীগের প্যানেল থেকে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী হয়েছেন মোস্তফা সরকার মিসাদ।
ছাত্রলীগের প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, মাহবুব যখন হল সংসদ থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন তখন থেকেই ছাত্রলীগের একটি পক্ষ তাঁকে সরানোর জন্য চাপ সৃষ্টি করছিলেন। কিন্তু মাহবুব প্রার্থিতা প্রত্যাহার না করায় গতকাল শুক্রবার রাত ৯টার দিকে অমর একুশে গ্রন্থমেলা থেকে ধরে নিয়ে তাঁকে আজ সকাল ১০টা পর্যন্ত আটকে রেখে বিভিন্ন সময় তাঁকে নির্যাতন করা হয়। সকালে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করতে একটি চিঠি লিখতেও বাধ্য করে তাঁকে।
জানতে চাইলে মাহবুবুর রহমান সাজিদ এনটিভি অনলাইনকে বলেন, রাত ৯টার দিকে ছাত্রলীগ প্যানেলের সাংস্কৃতিক সম্পাদক মোস্তফা সরকার মিসাদ, মুজাহিদ, আরিফ, অনিকসহ পাঁচ থেকে সাতজন তাঁকে বইমেলা থেকে ধরে আনে। পরে হলের ১১১ নম্বর কক্ষে তাঁকে আটকে রেখে প্রথম দফায় শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে। এরপর গভীর রাত হলে যখন তাঁকে পুনরায় নির্যাতন করা হয় তখন তিনি প্রার্থিতা প্রত্যাহার করবেন বলে জানান। এরপর সকাল ১০টার দিকে তাঁকে প্রার্থিতা প্রত্যাহার সম্পর্কে একটি দরখাস্ত লিখে হল অফিসে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
মাহবুবুর আরো বলেন, পরবর্তী সময়ে যখন তিনি হলের প্রাধ্যক্ষকে বিষয়টি জানান তখন হল প্রাধ্যক্ষ তাঁর প্রত্যাহারপত্রটি ছিঁড়ে ফেলেন। পরে তাঁর ওপর নির্যাতনের বিষয়টি সম্পর্কে একটি অভিযোগ লিখতে বলেন। তিনি আগামীকাল সকালে লিখিত অভিযোগ দেবেন বলে জানান।
মাহবুবুর বলেন, হল প্রশাসন তাঁর নিরাপত্তার জন্য এস এম হলের ছাত্রলীগ মনোনীত জিএস (সাধারণ সম্পাদক) প্রার্থী জুলিয়াস সিজারকে দায়িত্ব দিয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে জিএস প্রার্থী জুলিয়াস সিজার তিনি এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘একটা দুর্ঘটনা ঘটেছে। যদিও আজ সকালে তাঁর (মাহবুবুর রহমান সিজার) নিরাপত্তার দায়িত্ব আমার ওপর দেওয়া হয়েছে। আমি তাঁর নিরাপত্তার দায়িত্ব নিয়েছি। আগামী নির্বাচনের (১১ মার্চ) মধ্যে যদি এ ধরনের কোনো নির্যাতন করা হয় তবে আমি তাঁর হয়ে কাজ করব। এ ঘটনায় জড়িত নন বলে দাবি করেন সিজার।
অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না, জানতে চাইলে জুলিয়াস সিজার বলেন, ‘আমি এক গ্রুপ (ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী) করি। মিসাদ আরেক গ্রুপ (ঢাবি শাখার সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস) করে। সুতরাং আমি চাইলেও কিছু করতে পারব না। কেননা সে আমার কথা শুনে না। সে একভাবে নির্বাচন করবে, আমি আরেকভাবে নির্বাচন করব। শুধু এক প্যানেলে আছি এতটুকুই।’
তবে এস এম হলের ১১১ নম্বর কক্ষের বাসিন্দা ও হল শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি আরিফ আল হাসান বলেন, ‘একটি মহল উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে ভোটের সহানুভূতি পাওয়ার জন্য সংগঠন ও আমাকে বিব্রত করার অপচেষ্টা করছে। গতকাল রাতে আমার রুমে এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি।