ভোট ডাকাতি হলে নির্বাচন বর্জন করবে ছাত্রসংগঠনগুলো

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদের নির্বাচনে ছাত্রলীগ বাদে অধিকাংশ ছাত্রসংগঠনের বিরোধিতা সত্ত্বেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন হলগুলোতেই ভোটকেন্দ্র রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। হলে ভোটকেন্দ্র হওয়ার সুযোগে ক্ষমতাসীন দলের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগ যদি কোনোরকম ভোট ডাকাতি বা কারচুপির চেষ্টা করে, তবে ভোট বর্জনের সিদ্ধান্ত নেবে ছাত্রসংগঠনগুলো।
ডাকসু নির্বাচনে যদি কোনো ছাত্রসংগঠন অযাচিত ক্ষমতা ব্যবহার করে ভোট ডাকাতির মাধ্যমে জিততে চায়, তবে অন্য সব ছাত্রসংগঠনের ভোট বর্জন করা উচিত বলে সাধারণ শিক্ষার্থীরা মনে করেন। সবাই মিলে ভোট বর্জন করলে নির্বাচনের চিত্র বোঝাতে আর বাকি থাকবে না বলেও মনে করেন তাঁরা। তবে কোনো কোনো শিক্ষার্থী ভোট বর্জনের চেয়ে ভোটের অধিকার আদায় করে নেওয়ার পক্ষে মত দেন।
নির্বাচনে অংশ নেওয়া কয়েকটি প্যানেল ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা কথা বললে তাঁরা এসব কথা বলেন।
এর ভেতরে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সংগঠন বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ প্যানেলের ডাকসুর সহসভাপতি (ভিপি) পদপ্রার্থী নুরুল হক নুর এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন হলে ভোটকেন্দ্র স্থাপন করেছে আমাদের সবার বিরোধিতা সত্ত্বেও। সেই প্রশাসনের নেওয়া সিদ্ধান্তের কারণে যদি কোনো একটি পক্ষ সুযোগ নিয়ে ভোট ডাকাতি করার চেষ্টা করে, তবে তা আমরা রুখে দেওয়ার চেষ্টা করব। শেষমেশ যদি আমরা রুখে দিতে না পারি, তখন ছাত্রলীগ বাদে সবাই মিলে ভোট বর্জন করার সিদ্ধান্ত নেব। এসব নিয়ে আমরা আগামীতে সব ছাত্রসংগঠনের সঙ্গে আরো বিস্তারিত আলোচনা করব।’
একই প্যানেলের জিএস পদপ্রার্থী রাশেদ খান বলেন, ‘ভোটকেন্দ্রে কোনোরকম অনিয়ম হলে কেউ সেটা মেনে নেবে না। এই একটা ইস্যুতে অন্তত সব ছাত্রসংগঠনই সোচ্চার থাকবে এবং ভোট ডাকাতির মাধ্যমে যদি ছাত্রলীগ বা অন্য কেউ জিততে চায়, তবে সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিয়ে একসঙ্গে নির্বাচন বর্জন করব।’
বামপন্থী ছাত্রসংগঠনগুলোর দুই মোর্চা প্রগতিশীল ছাত্রজোট ও সাম্রাজ্যবাদবিরোধী ছাত্র ঐক্যের প্যানেল মনোনীত ডাকসুর ভিপি পদপ্রার্থী ও ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক লিটন নন্দী বলেন, ‘আমরা হারা কিংবা জেতার চিন্তা আপাতত করছি না। আমরা শিক্ষার্থীদের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিতে চাই। আমরা আশঙ্কা করছি, ছাত্রলীগ ভোট ডাকাতি করতে পারে। সে জন্য আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করব তাদের রুখে দিতে। হলে হলে আমরা অবস্থান নেব। যদি তাতেও কাজ না হয়, তবে ভোট বর্জন করা ছাড়া আমাদের আর পথ থাকবে না এবং শেষমেশ আমরা সবাই মিলে ভোট বর্জনের সিদ্ধান্ত নিতে পারি।’
ছাত্রদল প্যানেলের ডাকসুর ভিপি পদপ্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘সংসদ নির্বাচনের মতো যদি আগের রাতে ভোট হয় সে ক্ষেত্রে আমরা সব ছাত্রসংগঠন মিলে কঠোর প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করব। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবেকবান সাধারণ শিক্ষার্থীরা দেখুক কীভাবে এই সরকার বা সরকারের ছাত্রসংগঠন ভোট ডাকাতি করে। শেষমেশ আমার দল ও পুরো প্যানেল মিলে সিদ্ধান্ত নেব ভোট বর্জন করব কি করব না।’
বাংলাদেশ ছাত্র মৈত্রী পরিষদ মনোনীত ভিপি পদপ্রার্থী মো. রাসেল শেখ ও স্বতন্ত্র জিএস প্রার্থী এ এম আর আসিফুর রহমান সঙ্গে কথা হয় এনটিভি অনলাইনের। তাঁরা শঙ্কা প্রকাশ করে জানান, ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগ। তারা যেকোনোভাবেই ক্ষমতা দেখিয়ে জেতার চেষ্টা করবে। সেই চেষ্টার ফল যদি ভোট ডাকাতি হয়, তবে তাঁরা সেই ডাকাতি রুখে দেওয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবেন। একটা পর্যায় গিয়ে সবাই মিলে নির্বাচন বর্জনের কথাই ভাবতে হবে। আর যদি সুষ্ঠু ভোট হয় তাহলে যেই জিতুক তাঁরা ফল মেনে নেবেন।
ভোট বর্জনের প্রসঙ্গ নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০ জন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলেছে এনটিভি অনলাইন। ডাকসু নির্বাচনে ভোট কারচুপি হলে সেটা সাধারণ শিক্ষার্থীরা ভালোভাবে নেবে না বলে তাঁরা জানান। তাঁদের ভেতরে আটজন শিক্ষার্থী ভোট বর্জনের সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত পোষণ করেন। এঁদের ভেতরে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী লাবিব হাসান বলেন, ভোটের অধিকার যদি নিশ্চিত না করতে পারে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তবে ছাত্রসংগঠনগুলোর উচিত হবে ভোট বর্জন করা। সবাই মিলে ভোট বর্জন করলে নির্বাচনের চিত্র বুঝতে আর বাকি থাকবে না কারো।
ইংরেজি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী হারুন অর রশিদ বলেন, হলে ভোটকেন্দ্র হওয়ায় ছাত্রলীগ শক্তি প্রয়োগের চেষ্টা করতে পারে। হলে তাদের শক্ত ঘাঁটিও রয়েছে। তবে প্রশাসনের উচিত বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানের কথা মাথায় রেখে ভোটের মতো একটি ভোট উপহার দেওয়া। যদি সেটা না পারে তবে ছাত্রসংগঠনগুলোর উচিত হবে ভোট বর্জনের মতো সিদ্ধান্ত নেওয়া।
বিজ্ঞান অনুষদের শিক্ষার্থী আরিফ রাহান বলেন, ‘ভোট বর্জনই সমাধান নয়। ভোটের অধিকার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছ থেকে আদায় করে নেওয়া উচিত আমাদের। অন্তত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ডাকসু যেন নির্বাচনের কারণে কলঙ্কিত না হয়।’