যা বললেন চার ভিপি প্রার্থী
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদের নির্বাচনের ভোট গ্রহণ হচ্ছে আজ। ২৮ বছর পর এই নির্বাচনের ভোট হচ্ছে। আজ সোমবার সকাল ৮টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৬টি হলে একযোগে ভোট শুরু হলেও রোকেয়া হল ও কুয়েত মৈত্রী হলে ভোট শুরু করা যায়নি। এক ঘণ্টারও বেশি সময় পর রোকেয়া হলে এবং বেলা সোয়া ১১টায় কুয়েত মৈত্রী হলের ভোট গ্রহণ শুরু হয়।
পরে জানা যায়, শিক্ষার্থীরা কুয়েত মৈত্রী হলের একটি কক্ষ থেকে এক বস্তা আগে থেকে সিল মারা ব্যালট পেপার উদ্ধার করেছেন। শিক্ষার্থীদের এই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সেখানকার প্রভোস্টকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
এই নির্বাচন নিয়ে সকালে প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রলীগ, ছাত্রদল, কোটা সংস্কার আন্দোলন ও বাম জোটের সহসভাপতি (ভিপি) প্রার্থীরা কথা বলেন। একমাত্র ছাত্রলীগ ছাড়া বাকি তিনজনই ভোটে অনিয়মের অভিযোগ এনেছেন।
নির্বাচনে মোট ভোটার ৪৩ হাজার ২৫৫ জন। আর ডাকসুর ২৫টি পদের বিপরীতে মোট ২২৯ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। প্রতিটি হলে নির্বাচিত হবেন ১৩ জন করে। সেই হিসাবে ১৮ হল সংসদে প্রার্থী রয়েছেন মোট ৫০৯ জন।
এবারের ডাকসুতে প্যানেল দিয়ে নির্বাচন করছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, বাম সংগঠনগুলোর জোট, কোটা আন্দোলনকারীদের সংগঠন বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ, স্বাধিকার স্বতন্ত্র পরিষদ, স্বতন্ত্র জোট, জাসদ ছাত্রলীগ, ছাত্রলীগ-বিসিএল, ছাত্র মৈত্রী, ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন, ছাত্র মুক্তিজোট, জাতীয় ছাত্রসমাজ ও বাংলাদেশ ছাত্র আন্দোলন। এ ছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থীও রয়েছেন।
চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকায় সহসভাপতি (ভিপি) পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ২১ জন; তাঁদের সঙ্গে এই নির্বাচনে ১৪ জন লড়বেন সাধারণ সম্পাদক (জিএস) এবং ১৩ জন সহসাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে। ১২টি প্যানেলের বাইরে ভিপি পদে নয়জন এবং জিএস পদে দুজন স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচনে লড়বেন।
ছাত্রদলের অভিযোগ
ভোটকেন্দ্রে অনিয়ম, বিশৃঙ্খল পরিবেশের অভিযোগ করেছেন ছাত্রদলের ভিপি প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান। সোমবার সকাল ৮টা ৫০ মিনিটে মুহসীন হল ভোটকেন্দ্র পরিদর্শন করতে এসে সাংবাদিকদের কাছে এ অভিযোগ করেন মোস্তাফিজ। তিনি বলেন, ‘আমি বিভিন্ন হলে ঘুরেছি, সব হলেই একই অবস্থা। এখন মুহসীন হলে এলাম, এখানেও একই অবস্থা বিরাজ করছে।’
মোস্তাফিজুর রহমান অভিযোগ করে বলেন, ‘ভোটকেন্দ্র ও হলে কে ঢুকবে না ঢুকবে, তা ঠিক করবে প্রশাসন। কিন্তু সব হলে সেটি ঠিক করে দিচ্ছে ছাত্রলীগ। কিন্তু কে হলে ঢুকবে, ভোটকেন্দ্রে ঢুকবে তা নির্ধারণ করার ছাত্রলীগ কে?’
ছাত্রদল মনোনীত এ প্রার্থী আরো অভিযোগ করে বলেন, ‘বিভিন্ন হলে আমাদের প্রার্থীদের ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। কোনো প্রার্থী ভোটকেন্দ্রে যেতে চাইলে তাদের বাধা দেওয়া হচ্ছে।’
ছাত্রলীগ আশাবাদী
ছাত্রলীগের প্যানেল থেকে ভিপি প্রার্থী রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন নির্বাচন সুষ্ঠু হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, ছাত্রলীগ এই নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে সম্পূর্ণ আশাবাদী। আজ সোমবার হাজী মুহম্মদ মুহসীন হল কেন্দ্রে ভোট দিয়ে তিনি সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।
শোভন বলেন, ‘লাইনে যারা দাঁড়াচ্ছে, তারাই ভোট দিতে পারছে। ছাত্রদলের ভোটারদের ভোট দিতে দেওয়া হচ্ছে না, তাদের বের করে দেওয়া হচ্ছে, প্রার্থীদের কেন্দ্রে যেতে বাধাসহ বিভিন্ন অভিযোগ আসলে গুজব।’
ভোটের পরিবেশ সম্পর্কে শোভন বলেন, ‘হলের শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ দেখলাম। এখানে সকাল থেকে শিক্ষার্থীরা আছেন লাইন ধরেছে ভোট দিতে। দীর্ঘ ২৮ বছর পর ভোট দিতে পেরে তারা আনন্দিত। আমাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাকসু নির্বাচন স্বচ্ছ ও সুন্দর হচ্ছে তা মুহসীন হলের পরিবেশ দেখে বোঝা যাচ্ছে।’
বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হলের ছাত্রীদের ভোট বর্জন ও সিল মারা ব্যালট পাওয়া প্রসঙ্গে শোভন বলেন, ‘বিষয়টা আমি জানি না। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও শিক্ষকরা এসব দেখবেন।’
নির্বাচনে ছাত্রলীগের প্যানেলের জয়ের বিষয়ে জানতে চাইলে শোভন বলেন, ‘আমরা জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী। কারণ, ছাত্রলীগ সব সময় সাধারণ ছাত্রদের অধিকার আদায়ে কাজ করে।’
কোটা আন্দোলনের বক্তব্য
কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতা ও ডাকসুর ভিপি প্রার্থী নুরুল হক নুর অভিযোগ করে বলেছেন, ‘শহিদুল্লাহ হলে আমরা প্রবেশ করতে চেয়েছি, কিন্তু আমাদের প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। আমরা প্রবেশ করতে চাইলে বাধা দেওয়া হয়। পাঞ্জাবি টেনে ধরে রাখে। আমাদের হেনস্তার শিকার হতে হয়েছে।’
সকাল ৯টার দিকে নুরুল হক নুর শহিদুল্লাহ হলের সামনে এসব অভিযোগ করেন। তিনি আরো বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন একটি নীলনকশার নির্বাচনের দিকে এগোচ্ছে। একটি ছাত্রসংগঠনের নেতারা প্রভাব খাটিয়ে সাধারণ ছাত্রদের মধ্যে ভীতির সঞ্চার করছে। শিক্ষকদের বলেও কোনো লাভ হয়নি। নির্বাচনের কোনো পরিবেশ নেই। সাধারণ ছাত্ররা প্রবেশের চেষ্টা করলে বাধা দেওয়া হচ্ছে।’
তবে নুরের এসব অভিযোগের বিষয়ে শহিদুল্লাহ হলের দায়িত্বে থাকা সহকারী প্রক্টর ড. মোহাম্মদ লুৎফুর রহমান বলেন, ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে এসব অভিযোগ করা হচ্ছে। আমি তাঁকে সঙ্গে করে নিতে চেয়েছি, কিন্তু তিনি যাননি।’
যা বললেন লিটন নন্দী
বাম মোর্চার ভিপি প্রার্থী লিটন নন্দী বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন হলে যাচ্ছি। জটলা দেখছি সব স্থানে। ভোটাররা ভোট দিয়ে আবার লাইনে দাঁড়াচ্ছে। আমরা ভোট কারচুপির অভিযোগ তুলছি। এভাবে ভোট হতে পারে না। এই পরিস্থিতিতে আমি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলেছি। তাঁরা বিষয়গুলো দেখবেন বলে জানিয়েছেন।’
লিটন নন্দী সকাল সোয়া ১১টায় সূর্য সেন হল পরিদর্শনে এসে এসব কথা বলেন।
এই ভিপি প্রার্থী আরো বলেন, ‘আমার প্যানেল এই ভোট নিয়ে আশাহত। আমরা এখনই বসব। ভোটে থাকব কি না, তা আপনাদের আগামী ৩০ মিনিটের ভেতরে জানিয়ে দেওয়া হবে। এভাবে চলতে থাকলে এটিও একটি কলঙ্কিত নির্বাচন হবে।’