শেষ হলো ডাকসু নির্বাচন, চলছে ভোটগণনা

Looks like you've blocked notifications!
ডাকসু ও হল ছাত্র সংসদ নির্বাচন শেষে আজ সোমবার হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলে ভোট গণনা করা হয়। ছবি : এনটিভি

নানা অভিযোগের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন। আজ সোমবার সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত এই ভোট কার্যক্রম চলে।এখন চলছে ভোট গণনা।

এদিকে ভোটে অনিয়ম আর কারচুপির অভিযোগ তুলে নির্বাচন বর্জন করেছে একাধিক প্যানেল। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলেছে, কিছু অসঙ্গতি ছাড়াই ভোট সুষ্ঠু হয়েছে। প্রশাসনের বক্তব্যের সঙ্গে একই বক্তব্য দেন ছাত্রলীগের নেতারা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮টি হলের ৫১১টি বুথে একযোগে ভোট অনুষ্ঠিত হয়। ভোট গ্রহণের শুরুতেই বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হলের ৯টি ভোট বাক্সের মধ্যে শিক্ষার্থীদের ৬টি দেখানো হলে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করতে থাকে। এতে প্রায় এক ঘণ্টা ভোটগ্রহণ স্থগিত থাকে। পরে ৯টা থেকে শুরু হলেও ১১টার দিকে আবারও শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করতে থাকে। পরে হল সংসদের স্টোর রুম থেকে বাকি তিনটি ভোটবক্স উদ্ধার করে শিক্ষার্থীরা। যদিও হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. জিনাত হুদা সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘ভোট সুষ্ঠুভাবেই হচ্ছিল। বিকেল ৩টা থেকে আবারও ভোটগ্রহণ চলতে থাকে।’

অন্যদিকে, আগের রাতেই ব্যালট পেপারে সিল মারার অভিযোগ ওঠে কুয়েতমৈত্রী হল শাখা ছাত্রলীগের নেতাদের বিরুদ্ধে। পরে শিক্ষার্থীরা হল অডিটরিয়মের একটি রুম থেকে এক বস্তা সিল মারা ব্যালট পেপার উদ্ধার করে। ঘটনার প্রমাণ পাওয়ায় হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শবনম জাহানকে বহিষ্কার করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। যদিও সাড়ে ১১টায় পুনরায় ভোটগ্রহণ শুরু হয়।

ওই দুই হল ছাড়া বাকি ১৬টি হলেই ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছে। এসব হলের মধ্যে শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল, কবি জসীম উদ্দিন, ফজলুল হক মুসলিম, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব হল এবং শামসুন নাহার হলে কোনো ধরনের অভিযোগ ছাড়াই ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে জানা যায়। যদিও বিজয় একাত্তর হলে প্রথমে নানা অভিযোগ এলে হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. এ জে এম শফিউল আলম ভূঁইয়া নিজেই এসে শিক্ষার্থীদের ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করান।

এ ছাড়া বাকি হলগুলোতে নির্ধারিত সময়ের চেয়েও বেশি সময় লাগে।

প্রার্থী এবং শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, সলিমুল্লাহ মুসলিম (এসএম) হল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল, মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হল, অমর একুশে হল, ড. শহিদুল্লাহ হল, মাস্টার দা সূর্যসেন হল, স্যার এ এফ রহমান হল এবং হাজী মুহাম্মদ মুহাসীন হলে বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ পাওয়া যায়। এতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করে। 

ভোট দিতে আসা সলিমুল্লাহ মুসলিম (এসএম) হলের একাধিক শিক্ষার্থী জানান, তারা লাইনে সকাল সকাল দাঁড়ান। কিন্তু ভেতরে প্রবেশ করতে প্রায় দুই থেকে তিন ঘণ্টা লাগে। তারা অভিযোগ করেন, ছাত্রলীগের নেতারা প্রথম বর্ষ এবং দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীদের লাইনে ঢুকিয়ে সময় ক্ষেপণ করে। এ ছাড়া, অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের ভোট গ্রহণ করতে দেয়নি বলেও অভিযোগ করেন হলের প্রার্থী এবং শিক্ষার্থীরা। একই অভিযোগ শহিদুল্লাহ হল, হাজী মুহাম্মদ মুহাসীন হল এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল শাখা ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে।

লাইনে দাঁড়িয়েও ভোট দিতে পারেনি মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী। তাঁরা জানান, দুই তিন ঘণ্টা ধরে লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। পরে ভোট কেন্দ্রের দিকে গেলে দেখা যায়, হলের কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং বিএনসিসির সদস্যদের বের করে দিয়ে ছাত্রলীগের নেতারা বেছে বেছে নিজেদের ভোটারদের কেন্দ্রে প্রবেশ করাচ্ছেন। এসব বিষয়ে জানতে চাইলে একাধিক প্রার্থী বলেন, ওই হলে আইবিএ এর শিক্ষার্থীদের ভেতরে প্রবেশ করতে দিচ্ছে। কিন্তু লাইনের কাউকে প্রবেশ করতে দেয় না। এ বিষয়ে হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. জিয়াউর রহমানকে দুপুরে ফোন দেওয়া হলেও তার নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।

এদিকে, সূর্যসেন হলে ছাত্রলীগের নেতারা নিজেদের ভোটারদের কেন্দ্রে প্রবেশ করাতে দেখা গেছে। দুপুর ১২টার দিকে ভোট দিতে গেলে হামলার শিকার হয় ছাত্রদলের সূর্যসেন হল শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক শামীম আক্তার শুভ। তার উপর হামলা করে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী শাহ আলম, তাকি, রাতুলের নেতৃত্বে তার বেশ কয়েকজন। পরে তাকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।

ব্যালট পেপার আগে থেকে সিল মারা হয়েছিল অভিযোগ এনে বিক্ষোভ করে কবি সুফিয়া কামাল হলের শিক্ষার্থীরা। তারা বলেন, তাদের পাঁচটি ব্যালট বক্সের মধ্যে তিনটি দেখানো হয়। এ সময় তারা অভিযোগ করে- অন্য দুটি বক্সে ব্যালট পেপার আগে থেকেই সিল মারা হয়। এ অভিযোগে শিক্ষার্থীরা দুপুর ১২টার দিকে আধা ঘণ্টা ভোট গ্রহণ স্থগিত রাখে।

ভোট গ্রহণ শেষ হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নিজ নিজ হলের প্রাধ্যক্ষ এবং হলের রিটার্নিং কর্মকর্তারা। জানতে চাইলে শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক ড. হুমায়ুন কবির বলেন, ‘আমাদের এখানে সুষ্ঠুভাবে ভোট সম্পন্ন হয়েছে। ভোট গণনার কাজ চলছে।’