মধ্যরাতে ডাকসুর ফলাফল ঘোষণার পর যা ঘটে সিনেট ভবনে

Looks like you've blocked notifications!
গতকাল সোমবার দিবাগত রাত সাড়ে ৩টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে ডাকসু নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পর উত্তেজিত নেতাকর্মীদের শান্ত করেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও ডাকসুর নতুন জিএস গোলাম রাব্বানী। ছবি : ফোকাস বাংলা

গতকাল সোমবার সারাদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনে পক্ষে-বিপক্ষে নানা অভিযোগের পর মধ্যরাতে ঘোষণা করা হয় ফলাফল।

রাত সাড়ে ৩টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবন অডিটরিয়ামে ফলাফল ঘোষণা করেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান।

২৮ বছর পর হওয়া ডাকসু নির্বাচনের ফলাফল জানতে ভিড় জমে সিনেট ভবনে। কিন্তু এ সময়ই ঘটে বিপত্তি।

উপাচার্য আখতারুজ্জামান শুরুতেই সহসভাপতি (ভিপি) পদে যখন কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সংগঠন বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল হক নুরকে বিজয়ী ঘোষণা করেন, ঠিক তখনই ছাত্রলীগের একটি অংশ ‘শেম (লজ্জা)’ বলে স্লোগান দেয়। এ সময় চারপাশ থেকে ছাত্রলীগ নেতারাও ‘ভুয়া ভুয়া’ বলে স্লোগান দিতে থাকে। চারপাশের চিৎকারে আর স্লোগানে বেশ কিছুক্ষণ চুপ থাকতে হয় উপাচার্যকে।

পরে একে একে সাধারণ সম্পাদক (জিএস) ও সহসাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে ছাত্রলীগের গোলাম রাব্বানী ও সাদ্দাম হোসেনকে বিজয়ী ঘোষণা করলে তাৎক্ষণিকভাবে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়। তখন ছাত্রলীগ প্যানেল থেকে যারা জয়ী হন, তাঁদের অভিনন্দন জানায় উপস্থিত নেতাকর্মীরা।

ফলাফল ঘোষণা শেষে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা নুরুল হক নুরের ভিপি নির্বাচিত হওয়ায় প্রতিবাদ জানায়। তাঁরা ‘মানি না মানব না, এই ফলাফল মানব না’ বলে স্লোগান দিতে থাকে। একই সঙ্গে তারা ‘নির্বাচন ভুয়া’ বলেও স্লোগান দেয়।

পরে বিভিন্ন স্লোগান আর বিক্ষোভ করে অবরূদ্ধ করে রাখা হয় উপাচার্যকে। প্রায় ৩০ মিনিট অবরুদ্ধ ছিলেন উপাচার্য। এ সময় উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. নাসরীন আহমেদ, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মুহাম্মদ সামাদ, ডাকসু নির্বাচনের প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক এস এম মাহফুজুর রহমানসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলের প্রাধ্যক্ষরা উপস্থিত ছিলেন।

পরে ডাকসুর নির্বাচিত জিএস ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীসহ অন্য নেতারা বিক্ষোভকারীদের শান্ত করলে ভোর রাত ৪টার পর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন উদ্ধার করে উপাচার্যসহ অন্য শিক্ষকদের নিয়ে যান।

প্রক্টর লাঞ্ছিত

ফলাফল প্রকাশের পর রাত সাড়ে ৩টার দিকে বিক্ষোভ শুরু করে ছাত্রলীগের কয়েকশ নেতাকর্মী। এর ১০ মিনিট পর প্রক্টর ও কয়েকটি হলের প্রাধ্যক্ষ মিলে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের থামিয়ে দিতে গেলে কয়েকজন তাঁদের লাঞ্ছিত করে। পরে প্রক্টর ও প্রাধ্যক্ষরা স্থান ত্যাগ করে মঞ্চে থাকা উপাচার্য আখতারুজ্জামানের পেছনে অবস্থান নেন।

এ সময় ছাত্রলীগের নেতাকর্মী ও প্রশাসনের লোকজন বিক্ষোভকারীদের থামানোর চেষ্টা করলেও তাঁদের কথা শোনেনি নেতাকর্মীরা। এ সময় ছাত্রলীগের সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনকে সিনেট হলের বাইরে নিয়ে যাওয়া হয়। এর কিছুক্ষণ পর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী চিৎকার করে সবাইকে থামিয়ে দেন।

এ সময় গোলাম রাব্বানী সবাইকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘সাধারণ শিক্ষার্থীদের আবেগ নিয়ে নুর, রাশেদ, লিটন নন্দীরা নির্বাচন বানচাল করার অপচেষ্টা করেছে। তাঁদের সমর্থনকারীরা রোকেয়া হল থেকে ব্যালট বাক্স ছিনতাই করেছে।’

এ সময় ছাত্রলীগের এক কর্মী বলে ওঠেন, ‘ছাত্রলীগ থেকে যারা নুরুকে ভোট দিয়েছে, তাদের আগে খুঁজে বের করতে হবে।’ গোলাম রাব্বানী এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন।

এর আগে ফলাফল ঘোষণার সময় নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে বলে জানান উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামান। তিনি বলেন, দুই একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া নির্বাচন সুন্দরভাবে শেষ হয়েছে। যেখানে ঝামেলা হয়েছিল, সেখানে ভোটগ্রহণ সাময়িক স্থগিত রেখে পুনরায় শুরু হয়।

ক্যাম্পাসে ফাঁকা গুলি

ভোররাত ৪টা ১ মিনিটে সিনেট ভবন থেকে যখন সবাই চলে যাচ্ছিল, তখন কয়েকটি ফাঁকা গুলির শব্দ শোনা যায়। কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী জানায়, বাইকে থাকা এক মুখোশধারী উপস্থিত নেতাকর্মীদের মধ্যে এসে এই ফাঁকা গুলি ছোড়ে। হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের একাধিক শিক্ষার্থী বিষয়টি নিশ্চিত করে।

এ সময় উপস্থিত নেতাকর্মীদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। ক্যাম্পাসের চারপাশে থমথমে পরিবেশ বিরাজ করে।

উপাচার্য ভবনের সামনে ছাত্রলীগের অবস্থান

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ভবন থেকে বের হয়ে বিক্ষোভকারী ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা উপাচার্য ভবনের সামনে অবস্থান করে। এ সময় আশপাশে অর্ধশতাধিক পুলিশের উপস্থিতি লক্ষ করা যায়। নেতাকর্মীরা সেখানেও আধা ঘণ্টা ধরে বিক্ষোভ করে। এ সময় তারা ‘নির্বাচন মানি না, মানব না’ বলে স্লোগান দিতে থাকে।

ডাকসু নির্বাচনে ভিপি পদে ১১ হাজার ৬২ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতা নুরুল হক নুর। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রলীগ সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন পেয়েছেন ৯ হাজার ১২৯ ভোট।

নির্বাচনে জিএস পদে বিজয়ী হয়েছেন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী। এ ছাড়া এজিএস নির্বাচিত হয়েছেন ঢাবি শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসাইন।