ঢাবির কনসার্টস্থলে ‘ছাত্রলীগের’ ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ

Looks like you've blocked notifications!
গতকাল শুক্রবার দিবাগত রাত ১টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মল চত্বরে বৈশাখী কনসার্টস্থলে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। ছবি : এনটিভি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) মল চত্বরে বৈশাখী কনসার্টস্থলে অভ্যন্তরীণ কোন্দলকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের একপক্ষ ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ সময় মঞ্চের পাশের সাউন্ড সিস্টেম ও প্যান্ডেলসহ স্টলগুলোতে ভাঙচুর ও আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।

গতকাল শুক্রবার দিবাগত রাত সোয়া ১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় পুরো অনুষ্ঠানস্থলে ব্যাপক তাণ্ডব চালানো হয়। এরপর এর জের ধরে আজ শনিবার সকালে আবার কনসার্টস্থলে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এ ঘটনার পরই গতকাল রাতে এ এফ রহমান হলে ছাত্রলীগের সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনের সমর্থক সাগর, মেশকাত ও মামুনকে মারধর করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তাঁরা এখন ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

আহতরা দাবি করেছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) সাদ্দাম হোসেনের সমর্থকরা তাদের মারধর করেছেন। তাঁরা আরো দাবি করেছেন, তাদের মারধর করা ছাড়াও গতকাল রাতে ছাত্রলীগ সভাপতি সমর্থক এ এফ রহমান হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল হাসান তুষার ও জহুরুল হক হল শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আমির হামজার কক্ষে ভাঙচুর করা হয়েছে।

যদিও এ ব্যাপারে ডাকসুর এজিএস সাদ্দাম হোসেনের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সাদ্দামের কয়েকজন সমর্থক অভিযোগ করেছেন, কনসার্টের স্থলে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে শোভনের সমর্থকরা। যদিও শোভন সমর্থকরা এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।  

পয়লা বৈশাখকে সামনে রেখে ১৩ ও ১৪ এপ্রিল কনসার্টের আয়োজন করেছিল ডাকসু ও ঢাবি ছাত্রলীগ। কনসার্টে জেমস, মিলা, ওয়ারফেজ, আর্টসেল ও ফিডব্যাকসহ বেশ কয়েকটি ব্যান্ড আসার কথা রয়েছে। এই কনসার্টকে কেন্দ্র করেই ছাত্রলীগের দুটি পক্ষের সমর্থকদের মধ্যে কোন্দল দেখা দেয়। একপর্যায়ে গতকাল রাতে কনসার্টস্থলে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।

ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনার পরই মল চত্বরে উপস্থিত হন ডাকসুর সাধারণ সম্পাদক (জিএস) ও ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী, ঢাবি ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিৎ চন্দ্র দাস ও ডাকসুর সহ সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) ও ঢাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন। এ সময় ছাত্রলীগ সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন উপস্থিত ছিলেন না।

ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলকে কেন্দ্র করেই এ ঘটনা ঘটেছে বলে ধারণা করছেন ছাত্রলীগের একাধিক নেতা।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হামলার সময় ছাত্রলীগ সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনের অনুসারীদের অনেককেই ঘটনাস্থলে দেখা যায়। সাংগঠনিক বিরোধ থেকেই এ ঘটনা ঘটতে পারে বলে মনে করছেন তাঁরা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের এক ছাত্রলীগ নেতা এনটিভি অনলাইনকে বলেন, আগুন লাগানোর সময় জগন্নাথ হলের প্রদীপ, স্যার এ এফ রহমান হলের সাগর রহমান (ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কৃত), সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের আতিক ও আহসানসহ অনেকেই উপস্থিত ছিলেন। এরা শোভনের অনুসারী বলে পরিচিত।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাজি মুহম্মদ মুহসীন হলের শোভনের এক অনুসারী এনটিভি অনলাইকে বলেন, গতকাল রাত ১২টা পর্যন্ত শোভন টিএসসিতে ছিলেন। এ সময় প্রদীপসহ অনেকেই তাঁর সঙ্গে ছিলেন। ১২টার পর যখন শোভন টিএসসি থেকে চলে যান, তখন তাঁর সমর্থকদেরও চলে যেতে বলেন।

এ ঘটনায় ডাকসুর ভিপি নুরুল হক নুর আজ শনিবার সকালে বলেন, ‘প্রশাসন চাইলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এ ঘটনার বিচার করতে পারে। আমরা এর বিচার চাই। প্রশাসন যদি বিচার চায়, তাহলে অবিলম্বে সন্ত্রাসীদের খুঁজে বের করবে।’

এ ব্যাপারে ঢাবি ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিৎ চন্দ্র দাস বলেন, ‘যারা এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত, তাদের খুঁজে বের করা হবে। এটি খুবই লজ্জাজনক একটি ঘটনা।’

এ ঘটনাকে অনাকাঙ্ক্ষিত উল্লেখ করে ঢাবির প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ এ কে এম গোলাম রব্বানী বলেন, ‘যারা এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’