জাবিতে র‌্যাগিংয়ে কান ফাটল শিক্ষার্থীর!

Looks like you've blocked notifications!

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) মওলানা ভাসানী হলের প্রথম বর্ষের এক শিক্ষার্থীকে র‌্যাগিংয়ের নামে বেধড়ক পিটিয়ে কান ফাটিয়ে দেওয়া হয়েছে। গতকাল বুধবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে হলের ১১৪ নম্বর কক্ষে এ ঘটনা ঘটে।

র‌্যাগিংয়ের শিকার মোশাররফ হোসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের ৪৮তম ব্যাচের শিক্ষার্থী। ভয়ে এ বিষয়ে কিছু বলতে চাননি তিনি।

৪৮তম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বুধবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে মওলানা ভাসানী হলের গণরুমে যান হলটির ৪৭তম ব্যাচের পাঁচ-ছয়জন শিক্ষার্থী। এ সময় তারা ৪৮তম ব্যাচের সব শিক্ষার্থীকে ১১৪ নং রুমে একত্রিত হতে বলেন। ওই রুমেই নিয়মিত প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের উপর র‌্যাগিংয়ের নামে নিপীড়ন করা হয়। পরে তুচ্ছ কারণে ৪৮ ব্যাচের শিক্ষার্থীদের গালাগাল ও মারধর করা হয়। একপর্যায়ে পরিচয় দিতে ভুল করায় মোশাররফকে মারধর করেন বাংলা বিভাগের ৪৭ ব্যাচের শিক্ষার্থী জাহিদুল্ ইসলাম তুহিন। মারধরের পর তাকে ১১৩ নম্বর কক্ষে পাঠানো হয়। কিছুক্ষণ পরে মোশাররফ আবার ১১৪ নম্বর কক্ষে এসে ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের জানান যে, তিনি অসুস্থ বোধ করছেন। এরপর বাংলা বিভাগের ৪৭তম ব্যাচের মো. নজরুল তাকে আবার মারধর করেন। এতে তার বাম কান ফেটে রক্ত বের হতে থাকে। এরপর ৪৭ ও ৪৮তম ব্যাচের কয়েকজন শিক্ষার্থী তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রে নিয়ে যান। ওই ঘটনায় মোশাররফ ছাড়াও আরো পাঁচ-ছয়জন শিক্ষার্থীকে মারধর করা হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রথম বর্ষের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘বুধবার বড় ভাইয়েরা গণরুমে ঢুকেই বলেছে যে, আজ এক্সট্রিম (র‌্যাগিং) পর্যায়ে হবে। এরপর অনেককে মারধর করেন তারা। শুধু বুধবারই নয়, প্রায় প্রতিদিনই ১১৪ নম্বর কক্ষে র‌্যাগিং দেয় সিনিয়র ভাইয়েরা। র‌্যাগ দেওয়ার সময় অনেককেই মারধর করে তারা।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রের কর্তব্যরত চিকিৎসক আনিসুর রহমান বলেন, ‘বুধবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে ১০-১২ জন ছেলে একটা ছেলেকে মেডিকেলে নিয়ে আসে। তার বাম কানের বাহিরের অংশে ফেটে গেছে। আমরা তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়েছি। এ ছাড়া তাকে একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দেখানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।’

অভিযুক্ত শিক্ষার্থী নজরুল বলেন, ‘আমি সারাদিন ঢাকায় ছিলাম। রাত ১২টায় হলে ফিরেছি। আমি কীভাবে মারব?’ অপর অভিযুক্ত শিক্ষার্থী তুহিন বলেন, ‘ওরা গণরুমে দুষ্টুমি করার সময় ওর কানে আঘাত লাগে। আমাদের জানালে আমরা তাকে মেডিকেলে নিয়ে যাই।’

হলের প্রাধ্যক্ষ নাজমুল হাসান তালুকদার বলেন, ‘মোশাররফের সঙ্গে কথা হয়েছে। তাকে লিখিত অভিযোগ দিতে বলেছি। লিখিত পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

প্রক্টর ফিরোজ-উল-হাসান বলেন, ‘হলের অভ্যন্তরের বিষয় বিধায় এটা হল প্রাধ্যক্ষ দেখবেন। প্রয়োজন হলে আমরা সহযোগিতা করব।’

এর আগে গত মাসে মীর মশাররফ হোসেন হলে র‌্যাগিংয়ের শিকার হয়ে এক শিক্ষার্থী কানে শুনতে পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেছিলেন। অভিযোগটি এখনো তদন্ত করছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিম।