ডাকসুর গঠনতন্ত্রের তোয়াক্কা করছেন না জিএস রাব্বানী!

Looks like you've blocked notifications!

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন করে সাংস্কৃতিক অঙ্গনে আধিপত্য বিস্তার করার অভিযোগ উঠেছে ডাকসুর সাধারণ সম্পাদক (জিএস) গোলাম রাব্বানীর বিরুদ্ধে। এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছেন ডাকসু ও হল সংসদের প্রতিনিধিরাও।

জানা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থীদের বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার মাধ্যমে গবেষণা কার্যক্রম ও সামাজিক সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডল আরো প্রসারিত করার জন্য ডাকসুর পক্ষ থেকে জিএস গোলাম রাব্বানীর স্বাক্ষর করা একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে।

গত ৩০ এপ্রিল প্রকাশিত ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ঢাবির সাংস্কৃতিক কার্যক্রমে ডাকসুর তত্ত্বাবধানে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় বা প্রতিষ্ঠানে যেকোনো অংশগ্রহণ ও প্রতিযোগিতামূলক সহশিক্ষা কার্যক্রমে ঢাবি প্রতিনিধি পাঠানোর বিষয়ে ডাকসু একক এখতিয়ার রাখে।

ওই বিজ্ঞপ্তিতে শুধু গোলাম রাব্বানীই স্বাক্ষর করেন। এতে তিনি ‘ডাকসুর একক এখতিয়ার’কে গঠনতন্ত্রের দোহাই দিয়েই উল্লেখ করেছেন। যদিও ডাকসুর গঠনতন্ত্রে ‘একক এখতিয়ারের’ কোনো বক্তব্য নেই। সেখানে বলা হয়েছে, ‘যদি সম্ভব হয়, ডাকসু বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে প্রতিনিধি পাঠাতে পারে।’

গোলাম রাব্বানীর এই বিজ্ঞপ্তির বিষয়ে ডাকসুর একাধিক প্রতিনিধি এবং প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরাও সমালোচনা করেছেন।

গোলাম রাব্বানীর করা ওই বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘ডাকসু ঢাবির সহশিক্ষা কার্যক্রমে (যথা—বিতর্ক, নাটক, গান, নৃত্য, বক্তৃতা, আবৃত্তি ইত্যাদি) তত্ত্বাবধানের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সব অংশীজনের সহায়তা কামনা করে। আপনারা এরই মধ্যে জানেন, গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় বা প্রতিষ্ঠান যেকোনো অংশগ্রহণ এবং প্রতিযোগিতামূলক সহশিক্ষা কার্যক্রমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি প্রেরণে ডাকসু একক এখতিয়ার রাখে।’

বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, ‘এ বিষয়ে ডাকসু সংশ্লিষ্ট সম্পাদকগণ অতিদ্রুত একটি নীতিমালা প্রণয়ন করবেন। এর আগ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি হয়ে যেকোনো সহশিক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণের পূর্বে ডাকসুর সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অনুরোধ করা হলো।’

এদিকে, গঠনতন্ত্রে এমন কিছু উল্লেখ নেই বলে জানা যায়। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, একক এখতিয়ার ডাকসুকে দেওয়া হয়নি। কোথাও বলা নেই যে, ডাকসুকে জানিয়ে কোনো প্রতিযোগিতায় যেতে হবে।

গঠনতন্ত্রের ৩(ই) ধারায় বলা হয়েছে, ‘If possible, send representatives to Inter-Universitz debates and educational conferences.’ অর্থাৎ, সম্ভব হলে আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় বিতর্ক ও শিক্ষাবিষয়ক সম্মেলনে প্রতিনিধি পাঠাতে পারবে ডাকসু। কিন্তু কোথাও বলা নেই, এ ধরনের অনুষ্ঠানে শুধু ডাকসু প্রতিনিধি পাঠাতে পারবে।

এ বিষয়ে ডাকসুর সাধারণ সম্পাদক (জিএস) গোলাম রাব্বানীকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি।

এ বিজ্ঞপ্তির ব্যাপারে ডাকসুর সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) সাদ্দাম হোসাইন এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘এটি একটি ভুল বোঝাবুঝি। এর মধ্যেই এ ব্যাপারে টিএসসির সংগঠনগুলোকে আনুষ্ঠানিক এবং অনানুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছি। মতবিনিময় সভা করে বিষয়টি পরিষ্কার করা হবে।’

এর আগে সাদ্দাম বলেন, ‘টিএসসির সংগঠনগুলো স্বতন্ত্র ও স্বাধীনতায় বিশ্বাসী। তারা তাদের কাজ স্বাধীনভাবে করবে। আমরা তাদের সহযোগিতা করব।’

ডাকসুর সহসভাপতি (ভিপি) নুরুল হক নুর বলেন, ‘এ ধরনের কোনো কর্তৃত্বমূলক আলোচনা ডাকসুতে করা হয়নি, আর এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত না। এটা তিনি (গোলাম রাব্বানী) দিয়েছেন তাঁর ব্যক্তিগত কোনো চিন্তাভাবনা থেকে। ডাকসুর সামগ্রিক সিদ্ধান্ত হলে ভিপি ও জিএস উভয়ের স্বাক্ষর থাকত। ডাকসুকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য এটা তাঁর স্বেচ্ছাচারিতামূলক সিদ্ধান্ত।’

এর আগে ছাত্রলীগ থেকে নির্বাচিত ডাকসুর জিএস ও এজিএস তাঁদের সিদ্ধান্তে বিভিন্ন বিজ্ঞপ্তি ও কর্মচারী নিয়োগের ব্যাপারে ডাকসুর ভিপি নুরুল হক নুরের সঙ্গে কোনো পরামর্শ না নিয়েই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছিলেন বলেও অভিযোগ নুরের।