সেই শ্রাবণী শায়লা এবার নিজেই মার খেলেন

Looks like you've blocked notifications!
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কুয়েত মৈত্রী হল শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শ্রাবণী শায়লা ২০১৮ সালের ২৩ জানুয়ারি এক নারী আন্দোলনকারীর চুল ধরে টান দেন ও ওড়না ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। ছবি : সংগৃহীত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) উপাচার্যের কার্যালয় অবরোধের সময় ‘নিপীড়নবিরোধী শিক্ষার্থীদের’ ওপর হামলা চালিয়ে আলোচিত হয়েছিলেন ঢাবির কুয়েত মৈত্রী হল শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শ্রাবণী শায়লা। এ সময় এক নারী আন্দোলনকারীর চুল ধরে টেনে ও ওড়না ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন তিনি।

২০১৮ সালের ২৩ জানুয়ারি ঘটে যাওয়া এ ঘটনাটি তখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। তবে বছর পেরোতেই এবার নিজ সংগঠনের নেতাকর্মীদের হাতেই মার খেয়েছেন শ্রাবণী।

সোমবার বিকেলে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ ঘোষিত বর্তমান কমিটিতে জায়গা না পেয়ে পদবঞ্চিতদের সঙ্গে নিয়ে প্রতিবাদ করেন শ্রাবণী শায়লা। এ সময় ঢাবির মধুর ক্যান্টিনে নিজ সংগঠনের নেতাকর্মীদের হাতেই আহত হন তিনি।

শ্রাবণী শায়লার অভিযোগ, কেন্দ্রীয় কমিটিতে অযোগ্য, অছাত্র, বিবাহিত, বহিষ্কৃত ও বিভিন্ন মামলার আসামিদের পদ দেওয়া হয়েছে। এর প্রতিবাদেই গতকাল বিক্ষোভ করেছেন তিনি। ওই বিক্ষোভে হামলার শিকার হয়েছেন ছাত্রলীগের পদবঞ্চিত এক ডজনের মতো শিক্ষার্থী। তার মধ্যে রয়েছেন ছাত্রলীগের আলোচিত এই নেত্রী।

হামলার ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে শ্রাবণী শায়লা এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আমরা যখন একটা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে মধুর ক্যান্টিনের দিকে যাই, তখন নবপদপ্রাপ্তসহ সহসভাপতি ফারুখ খান, আরিফুজ্জামান আল ইমরান, রাকিব হাসান, সোহান ও আমির হামজা ছিলেন। তাঁরা তখন আমাদের টিজ করছিলেন। পরে আমরা যখন মধুর ক্যান্টিনের মধ্যে যাই, তখন তাঁরা আমাদের ওপর হামলা চালিয়েছেন।’

ছাত্রলীগের এই নেত্রী আরো বলেন, ‘নারীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে যখন আমরা সংবাদ সম্মেলন করব, তখনো তাঁরা হলের নেতাকর্মীদের দ্রুত মধুতে আসতে বলেন। তারা বলেন যে, ‘তোমরা দ্রুত মধুতে আস। যারা পোস্ট পায়নি তাঁরা মধুতে ভিড় করছে।’ এরপর ওরা আসার পর অনেক জোরে জোরে স্লোগান দেয়। বিভিন্নভাবে টিজ করে। সেখানে সাংবাদিক সমিতির সবাই ছিলেন। সবাই দেখেছেন।’

সোমবার সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে ছাত্রলীগের একপক্ষের নেতাকর্মীরা কুয়েত মৈত্রী হল শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শ্রাবণী শায়লার দিকে চেয়ার ছুড়ে মারেন। ছবি : স্টার মেইল

শ্রাবণী শায়লা বলেন, ‘এর একপর্যায়ে স্যার এ এফ রহমান হলের নীল টিশার্ট পরা একটা ছেলে পেছন থেকে এসে সবাইকে ধাক্কা দিয়ে ব্যানার ছিড়ে ফেলে। পরে ভেতর থেকে ওরা জগভর্তি পানি মারা শুরু করে। এরপর জগ ও গ্লাস ছোড়া শুরু করে। একপর্যায়ে একটা গ্লাস এসে পড়ে শ্রাবণী দিশার (রোকেয়া হলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক) ওপর। তখন তিলোত্তমা দির (সুফিয়া কামাল হলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক) মাথাতেও আঘাত লাগে। তাঁকে ধরতে গিয়ে তানভীর হাসান সৈকতকে (ডাকসুর সদস্য) মারা হয়।’

আলোচিত এই নেত্রী আরো বলেন, ‘এরপর শ্রাবণী দিশাকে বের করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য রিকশায় দিয়ে আসি। তারপর যখন আবার মধুতে আসি, তখন তাঁরা আমার ওপর চেয়ার ছুড়ে মারে। তখন আমি তাঁদের জিজ্ঞেস করি যে, তাঁরা কোন হলের যে আমার গায়ে চেয়ার ছুড়ে মারছে। সেখানে পাঁচ থেকে ছয়জন ছেলে জহুরুল হক হলের ছিল। ওরা একসঙ্গে খামচে ধরে। তখন কয়েকজন আমার কোমরে চেয়ার ছুড়ে মেরেছে।’

শ্রাবণী বলেন, “তখন রাকিব ভাই (ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক অর্থ সম্পাদক) ছিলেন। তিনি তাঁদের বকা দিয়ে বলেছেন যে, ‘সে একটা হলের সেক্রেটারি, তাঁকে কেন মারছ।’ এই করতে করতে তারা বর্ষার মতো চেয়ার ছুড়ে ছুড়ে মেরেছে।”

নিজের চিকিৎসার ব্যাপারে শ্রাবণী বলেন, ‘ইনজেকশন নিয়েছি। আবারও যেতে (হাসপাতালে) হবে।’

হামলায় আহত অন্যরা হলেন- ডাকসুর আরেক সদস্য ও কুয়েত মৈত্রী হল ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ফরিদা পারভীন, ডাকসুর কমনরুম ও ক্যাফেটেরিয়া সম্পাদক এবং রোকেয়া হল শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি বি এম লিপি আক্তারসহ কয়েকজন।

গত বছর সাত কলেজের অন্তর্ভুক্তি বাতিলের আন্দোলনে বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্ট্রার বিল্ডিংয়ে উপাচার্যের কার্যালয়ের সামনে আন্দোলন করে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এতে হামলা করে ছাত্রলীগ। তাঁর প্রতিবাদ করে ‘নিপীড়নবিরোধী শিক্ষার্থীবৃন্দ’। পরে তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য কার্যালয়ে অবরোধ করলে তখনো ছাত্রলীগ তাঁদের ওপর হামলা করে। এ সময় এক নারী আন্দোলনকারীকে লাঞ্ছিত করেন শ্রাবণী শায়েলা। তাঁর চুল ধরে টেনে ও ওড়না ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন তিনি। ওই ঘটনার ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে অনেক সমালোচনা সৃষ্টি হয়। বিষয়টি নিয়ে সে সময় দেশজুড়ে নিন্দার ঝড় উঠে। তখন থেকেই আলোচিত ছিলেন শ্রাবণী শায়লা।