আগে ছিলেন, এবার নেই

Looks like you've blocked notifications!
ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক প্রচার সম্পাদক সাইফ বাবু, দপ্তর সম্পাদক দেলওয়ার শাহজাদা, কর্মসূচি ও পরিকল্পনাবিষয়ক সম্পাদক রাকিব হোসেন ও পাঠাগার সম্পাদক ইলিয়াস সানী (ওপরে বাঁ থেকে) এবং আপ্যায়ন সম্পাদক রাশেদ মো. রাশিদুল ইসলাম, শামসুন নাহার হলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জিয়াসমিন শান্তা, সুফিয়া কামাল হলের সাবেক সভাপতি ইফ্ফাত জাহান এশা ও রোকেয়া হল শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শ্রাবণী দিশা, (নিচে বাঁ থেকে)। ছবি : সংগৃহীত

সম্মেলনের দীর্ঘ এক বছর পর সোমবার বিকেলে ছাত্রলীগের ৩০১ সদস্যবিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী এই কমিটির অনুমোদন দেন।

গত সাইফুর রহমান সোহাগ ও এস এম জাকির হোসাইন কমিটির যারা সক্রিয় রাজনীতিতে জড়িত ছিলেন তাদের মধ্যে অর্ধশতাধিক নেতা বর্তমান কমিটিতে পদ পাননি। তাদের মধ্যে রয়েছেন প্রচার সম্পাদক সাইফ বাবু, দপ্তর সম্পাদক দেলওয়ার শাহজাদা, কর্মসূচি ও পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদক রাকিব হোসেন, ক্রীড়া সম্পাদক চিন্ময় রায়, পাঠাগার সম্পাদক ইলিয়াস সানী, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিষয়ক উপসম্পাদক রকিবুল হাসান, স্কুলছাত্র বিষয়ক সম্পাদক জয়নাল আবেদিন, গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক আনিসুল ইসলাম জুয়েল, আপ্যায়ন সম্পাদক রাশেদ মো. রাশিদুল ইসলাম, উপ-দপ্তর সম্পাদক নকিবুল ইসলাম সুমন, কেন্দ্রীয় নেতা সুস্ময় দেওম, আহমেদ কাউছার, সৈয়দ আরাফাত, ডাকসুর ক্রীড়া সম্পাদক তানভীর শাকিল প্রমুখ। 

এ ছাড়া, হল কমিটির সাবেক সভাপতি-সম্পাদকরা বিভিন্ন সময় কেন্দ্রীয় কমিটিতে পদ পেলেও এবার অনেকে পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে স্থান পাননি। এতে ক্ষুব্ধ তারা। এদের মধ্যে রয়েছেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের সাধারণ সম্পাদক আল আমিন রহমান, হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান সানী, মাস্টার দা সূর্যসেন হলের সভাপতি গোলাম সরওয়ার, কবি জসীম উদদীন হলের সাধারণ সম্পাদক সাহেদ খান, বিজয় একাত্তর হলের সভাপতি ফকির রাসেল আহমেদ ও সাধারণ সম্পাদক নয়ন হাওলাদার, শামসুন নাহার হলের সাধারণ সম্পাদক জিয়াসমিন শান্তা, রোকেয়া হলের সাধারণ সম্পাদক শ্রাবণী দিশা, সুফিয়া কামাল হলের সভাপতি ইফ্ফাত জাহান এশা ও সাধারণ সম্পাদক শারজিয়া শম্পা, শহিদুল্লাহ হলের সভাপতি সাকিব হাসান ও সাধারণ সম্পাদক আরিফ হোসাইন রিফাত, ফজলুল হক হলের সভাপতি শাহরিয়ার সিদ্দিকী সিসিম, একুশে হলের সাধারণ সম্পাদক এহসান পিয়াল।

পদবঞ্চিতরা জানান, যারা প্রায় ছয়-সাত বছর থেকে রাজনীতি করে আসছে এদের অনেকেই বর্তমান কমিটিতে পদ পায়নি। এদের সংখ্যা প্রায় ২০০-এর মতো।

এদের অনেকের সঙ্গে প্রতিবেদকের সরাসরি কথা হলে তারা অভিযোগ করে, নতুন কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে যারা এক বছর রাজনীতি করেছে তারাই কেন্দ্রীয় কমিটিতে পদ পেয়েছে। কিন্তু যারা দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতি করে আসছে, তারা পদ পায়নি।

শ্রাবণী শায়লা অভিযোগ করে বলেন, এবারের কেন্দ্রীয় কমিটিতে অযোগ্য, অছাত্র, বিবাহিত, বহিষ্কৃত ও বিভিন্ন মামলার আসামিদের পদ দেওয়া হয়েছে।

সাবেক প্রচার সম্পাদক সাইফ বাবু আজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বলেন, যারা বিগত সময়গুলোতে সক্রিয়ভাবে ছাত্রলীগের সঙ্গে জড়িত ছিলেন তাদের একটি বৃহৎ অংশকে বাদ কিংবা সঠিক পদে মূল্যায়ন করা হয়নি। যারা নিষ্ক্রিয়, সাবেক চাকরিজীবী, বিবাহিত, অছাত্র, গঠনতন্ত্রের অধিক বয়স্ক, বিভিন্ন মামলার আসামি, মাদকসেবী, মাদক ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন অপকর্মের দায়ে যারা ছাত্রলীগ থেকে আজীবন বহিষ্কার হয়েছিল তাদেরকেই ছাত্রলীগে পদায়ন করা হয়েছে। এটা আমাদের ব্যথিত করেছে।

সাইফ বাবু আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে কমিটি পুনর্গঠনের দাবি জানান। এ সময় দাবি না মানলে অনশন ও গণপদত্যাগের ঘোষণা দেন নতুন কমিটির সাংস্কৃতিক বিষয়ক উপসম্পাদক নিপু তন্বী। তিনি শামসুন নাহার হল শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও ডাকসুর সদস্য।

রোকেয়া হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি বিএম লিপি আক্তার বলেন, আমি রোকেয়া হলের সভাপতি এবং ডাকসুর কমনরুম ও ক্যাফেটেরিয়া সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করা অবস্থায় আমাকে ছাত্রলীগের উপসম্পাদক পদ দেওয়া হয়েছে। আমি ছাত্রলীগের সেক্রেটারিকে জিজ্ঞেস করেছি, কোন ক্রাইটেরিয়ার ভিত্তিতে আপনি আমাকে ছাত্রলীগের উপসম্পাদক পদ দিয়েছেন। তিনি উত্তর দিয়েছেন, ডাকসুর গুরুত্বপূর্ণ পদে আছি, বলে আমাকে এই পদ দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ব্যাপারটা এমন আপনি এবার এমপি নির্বাচন করেছেন, এবার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচন করেন। আমার প্রশ্ন হলো- আপনি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক পদে থেকেও কেন ডাকসু নির্বাচন করলেন।

লিপি আক্তার অভিযোগ করে বলেন, কমিটিতে যারা স্থান পেয়েছেন তাঁরা শোভন-রাব্বানী কমিটির ৮-১০ মাস রাজনীতি করেছেন, তাঁদের পেছনে-পেছনে ঘুরেছেন। তাদের মেকানিজমে যারা, তাদেরই কমিটিতে স্থান দেওয়া হয়েছে। আগের দুই কমিটির ত্যাগী কাউকে রাখা হয়নি।

শামসুন নাহার হল ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জিয়াসমিন শান্তা আজ রাতে তাঁর ফেসবুকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে তিন কমিটি পেয়েছি বিরতিহীন ভাবে। সোহাগ-নাজমুল, সোহাগ-জাকির, শোভন-রাব্বানী। 

আমি কারো ম্যান হতে ছাত্রলীগ করি নাই, আমি কারো ম্যান না। সিস্টেমের স্বীকার সবাই। শোভন-রাব্বানী ভাইও তিন কমিটি দেখেছেন। তাহলে তারা কার ম্যান? আজকে যাকেই এই চেয়ারে বসানো হবে আমি তাকে পছন্দ করি না করি, তার নির্দেশনা অনুযায়ীই মিটিং, মিছিল করতে হবে। কারণ হাজার হাজার ছাত্রলীগ কর্মীর কাছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকই দেশরত্নের বার্তাবাহক। বাদ দিতে চাইলে/পদ-প্রহসন করতে চাইলে এমনেই করা যায়। হুদাই জোর করে নির্দিষ্ট কারো ম্যান বানাতে আসলে সবাই কিন্তু মাইনকা চিপায় পড়বেন। আমি বাংলাদেশ ছাত্রলীগ করেছি— এই সংগঠনের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে। তাই আমি চেয়ারের ম্যান বা কর্মী। যত দিন সংগঠন করব চেয়ারের কর্মী হয়ে থাকব বঙ্গবন্ধুকে ভালোবেসে, দেশরত্ন শেখ হাসিনাকে ভালোবেসে।’