ক্যাম্পাসে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে প্রাণবন্ত ইফতার
‘বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার আগে রমজানে পরিবারের সাথে ইফতারের অভিজ্ঞতা ছিল অন্য রকম। তখন মা ইফতার বানাতেন। পরিবারের সবাই একসাথে ইফতার করতাম। কিন্তু এখন হলে বন্ধুদের সাথে ইফতার করার অনুভূতিটাই আলাদা। ইফতার করাটা শুধু খাওয়ায় সীমাবদ্ধ নয়, তাদের সাথে সম্পর্কও গভীর হয়। বন্ধুদের সাথে ইফতার করলে পরিবার থেকে দূরে থাকার কথা আর মনে থাকে না।’
এ কথাই বলছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী মো. ফাতাহ ইশতিয়াক। শুধু ইশতিয়াক নন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নরত অধিকাংশ শিক্ষার্থীর ইফতার নিয়ে অনুভূতি এমনই। শুধু রমজান মাস নয়, যাদের বছরের অধিকাংশ সময়ই কাটে পরিবার থেকে দূরে। রমজান শুরুর পর মতিহারের সবুজ চত্বর পরিণত হয় প্রাণের মিলনমেলায়।
সূর্য যখন পশ্চিম দিকে হেলতে শুরু করে তখন জমে ওঠে বন্ধুদের সাথে ইফতার আড্ডা। বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল, ক্যাফেটেরিয়া, ইবলিশ চত্বর, পরিবহন মার্কেট, কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার, টিএসসিসির সবুজ চত্বর, হবিবুর হলের মাঠ, মমতাজ উদ্দীন কলা ভবনের সামনের চত্বরসহ ক্যাম্পাসের প্রায় প্রতিটি স্থানে শিক্ষার্থীরা ইফতার করার জন্য সমবেত হয়। সবাই গোল হয়ে বসে মেতে ওঠে ইফতারের আনন্দে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন রাজনৈতিক, স্বেচ্ছাসেবী ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোও ইফতার পার্টি করে থাকে। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো হতদরিদ্র ও পথশিশুদের জন্য ইফতারের আয়োজন করে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারে ইফতারের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন মোল্লাহ মো. সাঈদ। তিনি বলেন, ‘ক্যাম্পাস বন্ধ হলেও টিউশন থাকায় বাড়িতে যেতে পারছি না। পরিবার ছাড়া ইফতার করায় কিছুটা খারাপ লাগা স্বাভাবিক। কিন্তু বন্ধুদের সাথে ইফতার করার কারণে কিছুটা হলেও ভালো লাগে। আমার কাছে সবচেয়ে ভালো লাগে ইফতারের আগের সময়টুকু। সবাই মিলে ইফতার কিনতে যাওয়া, শরবত বানানো, প্রস্তুত করা— এসব খুবই আনন্দদায়ক।’
কারো কারো এবার ক্যাম্পাসে শেষ ইফতার। স্মৃতিপটে ভেসে উঠছে বন্ধুদের সাথে কাটানো এত দিনের মধুর সময়গুলো। ক্রপ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগের শিক্ষার্থী রবিউল আলম অনিক বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার পড়াশোনা প্রায় শেষের দিকে। মাস্টার্সের পরীক্ষাও শেষ। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই ক্যাম্পাস ছেড়ে চলে যাব। হলে হৈ-হুল্লোড় করে সবার সাথে আর ইফতার করা হবে না। এ সময়টুকু খুব মিস করব।’
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রমজান উপলক্ষে বিভিন্ন আবাসিক হলের সামনে, বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন বিনোদপুর, স্টেশন বাজার ও কাজলায় ইফতারের অস্থায়ী দোকান বসেছে। সেখানে হরেক রকমের ইফতার বিক্রি করা হচ্ছে। এসব দোকানে পাওয়া যাচ্ছে ছোলা, মুড়ি, জিলাপি, বুন্দিয়া, বেগুনি, পেঁয়াজুসহ বিভিন্ন রকমের ইফতার।
কেউ কেউ আবার রুমেই ইফতার তৈরি করছেন। খালেদা জিয়া হলের আবাসিক শিক্ষার্থী তৃপ্তি ইসলাম বলেন, ‘দোকানের ইফতারের মান খারাপ। তাই নিজেরাই রান্না করি। কিছু ফলমূল দোকান থেকে কিনে নিয়ে আসি।’