ঢাবিতে ২৪ শিক্ষার্থীকে ছাত্রলীগের মারধরের অভিযোগ, দুজন উদ্ধার

Looks like you've blocked notifications!
ঢাবির মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হল ছাত্র সংসদের সহসাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ মুমিন আবির, ছাত্রলীগকর্মী ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ইমরান হোসেন, ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস বিভাগের সাফওয়ান এবং তথ্যবিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা বিভাগের আমিনুল ইসলাম সাগর (বাঁ থেকে)। ছবি : সংগৃহীত

ছাত্রলীগের কর্মসূচিতে উপস্থিত না থাকায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ২৪ জন শিক্ষার্থীকে মারধর করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। মারধরের প্রতিবাদ করায় মুনিরুল ইসলাম নামের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের এক শিক্ষার্থীকে দেড় ঘণ্টা আটকে রেখে নির্যাতন করে তারা। এ ঘটনা জানার পর হল প্রশাসন নির্যাতিত ওই ছেলেসহ দুজনকে উদ্ধার করে।

গতকাল শনিবার দিবাগত রাত ১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার পরই রাত দেড়টার দিকে হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. জিয়াউর রহমান আসেন। তিনি পুরো ঘটনা শুনে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দোষীদের বিচারের আশ্বাস দেন।

আহত শিক্ষার্থীরা সবাই বিভিন্ন বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী এবং জিয়াউর রহমান হলের বাসিন্দা। এর মধ্যে গুরুতর আহত মুনিরকে আজ রোববার ঢাবি চিকিৎসাকেন্দ্রে নেওয়া হয়।

এ ঘটনায় জড়িতরা হলেন জিয়াউর রহমান হল ছাত্র সংসদের সহসাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ মুমিন আবির, হল ছাত্রলীগের কর্মী সাইকোলজি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সোলেমান রনি, স্বাস্থ্য অর্থনীতি বিভাগের রুবেল হোসেন, পপুলেশন সায়েন্স বিভাগের মাহমুদুল হাসান, ইন্টারন্যাশনাল বিজনেসের সাফওয়ান চৌধুরী, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ইমরান হোসেন, তথ্যবিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা বিভাগের আমিনুল ইসলাম সাগর, প্রিন্টিং ও পাবলিকেশন্স বিভাগের আব্দুল্লাহ হাসানসহ বেশ কয়েকজন। এরা সবাই ঢাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও ডাকসুর এজিএস সাদ্দাম হোসেনের অনুসারী।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম বষের্র শিক্ষার্থীরা সাংবাদিকদের জানান, গত বুধবার মধুর ক্যান্টিনে ঢাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসাইনের প্রোগ্রাম ছিল। সেখানে প্রথম বর্ষের কিছু ছাত্র টিউশনি, ক্লাস ও ব্যক্তিগত কাজ থাকায় উপস্থিত থাকতে পারেননি। এ কারণে সাদ্দাম হোসেনের অনুসারী জিয়া হল ছাত্র সংসদের এজিএস আব্দুল্লাহ মুমিন আবিরের গ্রুপের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্ররা প্রথম বর্ষের সবাইকে গেস্টরুমে ডাকে। গেস্টরুমে যারা যারা প্রোগ্রামে উপস্থিত ছিলেন না তাদের বিভিন্ন হুমকি-ধমকি দেয় এবং যারা যাননি তাদের রুমে রাতে ঘুমাতে নিষেধ করে দেওয়া হয় এবং তাদের রুমমেটদেরও নিষেধ করে দেয় তারা যাতে রুমে ঢুকতে না পারেন।

কিন্তু বড় ভাইদের নিষেধ অমান্য করে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীরা সেসব ছাত্রদের রুমে ঘুমাতে দেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে শনিবার রাতে হলের ২১২ নম্বর রুমে গেস্টরুমে প্রায় ২৪ জন প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীকে লোহার রড, বাঁশ ও স্টাম্প দিয়ে এলোপাতাড়ি মারধর করে দ্বিতীয় বর্ষের সাইকোলজি বিভাগের রনি, স্বাস্থ্য অর্থনীতির রুবেল, পপুলেশন সায়েন্সের মাহমুদ, ইন্টারন্যাশনাল বিজনেসের সাফওয়ান ও আরবি বিভাগের মাহমুদ প্রমুখ।

নির্যাতনের মাত্রা সহ্য করতে না পেরে মনিরুল মারধরকারীদের ‘কুত্তার বাচ্চা’ বলে ফেলেন। এ অপরাধে তাঁকে আলাদা করে শিবিরকর্মী আখ্যা দিয়ে কক্ষে নিয়ে নির্যাতন করা হয়। ঘটনার সময় রাত ১২টার দিকে সাংবাদিকরা এলে তাঁকে হলের ২০৬ নম্বর কক্ষে আটকে রাখা হয়। এ সময় উপস্থিত সাংবাদিকরা ওই কক্ষের ছাত্রলীগের কর্মীদের হাতে রড ও স্টাম্প দেখেন। পরে সেগুলো তাঁরা সরিয়ে পালিয়ে যান এবং সাংবাদিকতা বিভাগের সাবের নামের এক শিক্ষার্থীকে বাইরে নিয়ে যান। এ ঘটনার প্রায় দেড় ঘণ্টা পর হল প্রশাসন এসে ছাত্রলীগের হাতে আটক দুজনকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল থেকে উদ্ধার করে।

উদ্ধারের পর আবির ও সাবেরকে ছাত্রলীগের নেতারা বিভিন্ন হুমকি-ধমকি দিয়ে সাংবাদিক এবং হল প্রশাসনের কাছে ঘটনার বিষয়ে যাতে মুখ না খোলে তা শিখিয়ে দেওয়া হয়। এরপর তাদের জিয়া হলের প্রাধ্যক্ষ ও সাংবাদিকদের সামনে আনা হলে তারা ঘটনাটি অস্বীকার করেন। যদিও ঘটনার বিষয়ে একাধিক ছাত্রলীগের নেতা ও শিক্ষার্থীরা নিশ্চিত করেছেন।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত হল সংসদের এজিএস আবির সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি মারধরের কোনো ঘটনা জানি না। আমি বাইরে ছিলাম।’ যদিও ঘটনার সময় সাংবাদিকরা রাত ১২টার দিকে হলে গেলে তিনি তৎক্ষণাৎ হলত্যাগ করেন। তখন তাঁর তৃতীয় বর্ষের অনুসারীরা জানান, ‘ভাই একটু আগেই চলে গেছেন।’

পরে আবিরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি এনটিভি অনলাইনকে বলেন, আমি ঢাকা মেডিকেল মোড়ে আছি। পরে ফোন দিবেন বলে ফোন রেখে দেন তিনি।

আবির ঢাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেনের অনুসারী। ঘটনার বিষয়ে সাদ্দামকে ফোন দেওয়া হলে প্রথমে তিনি ঘটনাটি অস্বীকার করেন এবং পরে বিষয়টি দেখবেন বলে ফোন রেখে দেন।

হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক জিয়াউর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, আমি পুরো ঘটনা শুনে হল কার্যালয়ে এসেছি। এক ছেলেকে আটকে রাখার কথা শুনেছি। কিন্তু আটক ওই ছেলেকে খুঁজে না পাওয়ায় আমি এসেছি। আমি ঘটনাটির বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করব।