মিথ্যা বলা বন্ধ না করলে ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা : জাবি উপাচার্য

Looks like you've blocked notifications!
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলাম। ছবি : এনটিভি

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন দাবি করেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলাম তাদের ঈদ সালামি বাবদ এক কোটি টাকা দিয়েছেন। এর মধ্যে জাবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি জুয়েল রানা নিয়েছেন ৫০ লাখ টাকা, সাধারণ সম্পাদক এস এম আবু সুফিয়ান চঞ্চল নিয়েছেন ২৫ লাখ টাকা আর তিনি (সাদ্দাম) নিয়েছেন ২৫ লাখ টাকা।

তবে তাঁর এই দাবি অস্বীকার করেছেন উপাচার্য ফারজানা ইসলাম। তিনি বলেছেন, সাদ্দামকে কাল সতর্ক করা হবে। তার পরও যদি সে সতর্ক না হয়, মিথ্যা গুজব ছড়ায় তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এর আগে ছাত্রলীগের সদ্য সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী অভিযোগ করেন, জাবির উন্নয়ন প্রকল্পে বাধা হয়ে না দাঁড়ানোর জন্য বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগকে উপাচার্য ফারজানা ইসলাম ১ কোটি ৬০ লাখ টাকা দিয়েছেন। অন্যদিকে উপাচার্য অভিযোগ করেন, তিনি কোনো টাকা দেননি। বরং রাব্বানী ও ছাত্রলীগের সদ্য সাবেক সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন তাঁর কাছে কয়েক দফায় উন্নয়ন প্রকল্পের বাজেট থেকে ৪ থেকে ৬ শতাংশ টাকা ঈদ সালামি দাবি করেছেন।

এসব নিয়ে আজ কথা হয় জাবি শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেনের সঙ্গে। তিনি এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘ভিসি ম্যাম আমাদেরকে এক কোটি টাকা দিয়েছেন ঈদ সালামি বাবদ। সভাপতি জুয়েল ভাই ৫০ লাখ, সাধারণ সম্পাদক চঞ্চল ভাই ২৫ লাখ, আর আমি নিছি ২৫ লাখ। কে কয় টাকা নিব এটাও ভিসি ম্যাম ঠিক করে দিছেন।’

ঈদ সালামি এক কোটি টাকা? এমন প্রশ্নের জবাবে সাদ্দাম বলেন, ‘ভাই, আমাকে দিছে। ঈদ সালামি বলে আমি নিছি। আমার পোলাপান আছে। রাজনীতি করি টাকার দরকার আছে। কেউ যদি ঈদ সালামি দেয় আপনি নেবেন না? ভিসি কোথায় থেকে এই টাকা আমাদের দিয়েছেন, তা আমরা জানি না। এক কোটি টাকা ঈদ সালামি পেয়ে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে ভাগ করে দিয়েছি আমরা।’

সাদ্দামের দাবির ব্যাপারে উপাচার্য ফারজানা ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি এনটিভি অনলাইনকে বলেন, “আমি শুরু থেকে বলে আসছি, আমি কাউকে টাকাপয়সা দেইনি। তবে কেউ যদি বলে টাকা পেয়েছে, তাহলে পেতে পারে। আমি দেইনি। আমি দিয়েছি এটা ও (সাদ্দাম) প্রমাণ করুক। যেখান থেকে ও পেয়েছে, এটাও বলুক, ওকে বলতে দেন। আমি এ ব্যাপারে শিক্ষা মন্ত্রীদের জানিয়েছি। তাদের বলেছি  আপনারা চাইলে তদন্ত করেন। কিন্তু ওনারা বলছে, ‘এসব মিথ্যা। ভুয়া বিষয়ে আমরা তদন্ত করতে চাই না। যেগুলোর কোনো দালিলিক অভিযোগ নাই, সেখানে কেন তদন্ত করব শুধু শুধু।’ ওনারা চাইলে তদন্ত করতে পারেন।”

উপাচার্য বলেন, ‘সাদ্দামকে কাল সতর্ক করা হবে। তার পরও যদি সে সতর্ক না হয়, মিথ্যা গুজব ছড়ায় তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এ দিকে ৫০ লাখ টাকা পাওয়ার ব্যাপারে জাবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি জুয়েল রানা এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আমি এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে চাই না।’

ছাত্রলীগের পদ হারানো সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেনের ফাঁস হওয়া ফোনালাপ থেকে জানা যায়, আলোচিত এক কোটি টাকা জাবি শাখা ছাত্রলীগকে ঈদ সালামি হিসেবে দিয়েছেন উপাচার্য ফারজানা ইসলাম।

টাকার ভাগাভাগির বিষয়টি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন টপ অব দ্যা ডে। এরই মধ্যে আজ দুপুরে হঠাৎ করে দেড় শতাধিক ছাত্রলীগ কর্মী নিয়ে ক্যাম্পাসে ঘণ্টা খানেক শোডাউন করেন সাদ্দাম হোসেন। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘আসলে এটা শোডাউন না। সামনে ভর্তি পরীক্ষা, তাই ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করলাম। সবকিছু ঠিকঠাক আছে কিনা এবং সার্বিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে কিনা তা দেখলাম।’

চারটি হল আমরা নিয়ন্ত্রণ করছি উল্লেখ করে সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হল, মওলানা ভাসানী হল, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হল ও সালাম-বরকত হল ছাড়াও মীর মশাররফ হোসেন হল ও আ ফ ম কামাল উদ্দীন হল আমাদের কর্মীদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।’

সাদ্দাম বলেন, ‘আমরা কোনো দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত না। জাবিতে কমিশন কেলেঙ্কারি, টাকা-পয়সা বা দুর্নীতির ব্যাপারে যদি বিস্তারিত জানতে চান তবে শিডিউল বিক্রি থেকে শুরু করে ওপেন হওয়া পর্যন্ত ভিসির ছেলে প্রতীক হোসেনের ফোন রেকর্ড দেখেন। যদি প্রতীকের ফোন রেকর্ড বের করতে পারেন তাহলে সবকিছু পরিষ্কার হয়ে যাবে। বিশেষ করে ৯ আগস্ট আমাদের সঙ্গে মিটিংয়ের আগে-পরে ভিসির ছেলের যেসব কথাবার্তা হয়েছে তা বের করতে পারলে দুর্নীতির বিষয়টি নিয়ে কোনো সন্দেহ থাকবে না।’

এদিকে, ফাঁস হওয়া ফোনালাপ জাবি ভিসি ও বিশ্ববিদ্যালয়বিরোধী ‘ষড়যন্ত্র’ দাবি করে বিবৃতি দিয়েছে ভিসিপন্থী শিক্ষক সংগঠন বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদ।

পাশাপাশি ফোনালাপকে ‘মিথ্যাচার’ দাবি করে সবাইকে মিথ্যা অপপ্রচারে বিভ্রান্ত না হয়ে সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে সমর্থন ও অবস্থান নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ অফিস।

অপরদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক দুর্নীতি উন্মোচন ও এর বিচার দাবি করে বিবৃতি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরাম।