‘গভীর রাতে’ বশেমুরবিপ্রবি ভিসির আদেশ

স্ট্যাটাস, কমেন্টের কারণে শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হবে না

Looks like you've blocked notifications!

আন্দোলনের মুখে গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বশেমুরবিপ্রবি) কর্তৃপক্ষ এক অফিস আদেশে বলেছে, ফেসবুক স্ট্যাটাস ও কমেন্টকে কেন্দ্র করে আর কোনো শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হবে না; উপরন্তু কর্তৃপক্ষ প্রতিটি শিক্ষার্থীর ‘বাকস্বাধীনতার নিশ্চয়তা’ প্রদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

গতকাল বুধবার রাতে বশেমুরবিপ্রবির আলোচিত উপাচার্য (ভিসি) অধ্যাপক ড. মো. নূর উদ্দিন আহমেদের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ এনে আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় তাঁরা ১৪ দফা দাবিও জানান। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ভিসির স্বাক্ষরিত একটি অফিস আদেশ আজ বৃহস্পতিবার সকালে ঘোষণা করা হয়। এতে শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নেওয়ার অঙ্গীকার করা হয়।   

যদিও আন্দোলনকারীরা বলছেন, আন্দোলনের মুখে বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্ট্রার কার্যালয় থেকে গভীর রাতেই এই অফিস আদেশ জারি করে। তবে অফিস আদেশে আজ ১৯ সেপ্টেম্বরের তারিখ লেখা রয়েছে। যার স্মারক নম্বর বশেমুরবিপ্রবি/র/জ, প্র/২০১৯/২।

সম্প্রতি ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান কাজ কী’—এই বাক্যটি ফেসবুকে পোস্ট করার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী ও দ্য ডেইলি সানের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি ফাতেমা-তুজ-জিনিয়াকে নিজের কক্ষে নিয়ে অশোভন ভাষায় কথা বলেন ভিসি। তাঁদের কথোপকথনের একটি অডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফাঁস হয়ে যায়।

সেখানে ভিসিকে বলতে শোনা যায়, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ কী? ফাজিল কোথাকার! বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ কী, তুমি জানো না? বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ তোমাদের মতো বেয়াদব তৈরি করা। বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ কী, তোর আব্বার কাছে শুনিস। গেছে বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনোদিন?’

উপাচার্য বলছিলেন, ‘আমি খুলছি বলেই তো তোর চান্স হইছে। না হলে তো তুই রাস্তা দিয়া ঘুরে বেড়াতি। বেয়াদব ছেলেমেয়ে।’

অডিও ফাঁসের পর জিনিয়াকে শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এই সিদ্ধান্তকে অবৈধ, অমানবিক, স্বাধীন মতপ্রকাশের প্রতিবন্ধক ও সাংবাদিকতার জন্য হুমকি হিসেবে উল্লেখ করে প্রতিবাদ জানিয়েছে বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠন। এরপর নিজের জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন জিনিয়া। গতকাল বিকেলেই কর্তৃপক্ষ জিনিয়ার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে। এর আগেও শ্রেণিকক্ষ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট করার দায়ে পাঁচ শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করেছিল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

এরপর রাতে ভিসিবিরোধী আন্দোলনে নামেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তার পরেই এই অফিস আদেশ আসে, যেখানে ১৪ দফা মেনে নেওয়ার কথা বলা হয়। যদিও আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে আবার শিক্ষার্থীরা ভিসির পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেছেন।

অফিস আদেশে যা আছে

বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিস আদেশে যে বিষয়গুলো আছে সেগুলো হচ্ছে—ছয় মাসের মধ্যে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ও শহীদ মিনারের নির্মাণ কাজ শুরু করা, আবাসিক হলের প্রতি সিটের ভাড়া ১৫০ টাকা এবং গণরুমে ৫০ টাকা নির্ধারণ, ভর্তি ফি সর্বমোট ১৪ হাজার টাকা এবং সেমিস্টার ফি ২০০০ টাকা করা, বিভাগ উন্নয়ন ফি রদ করা, সাধারণ শিক্ষার্থীদের বাকস্বাধীনতার নিশ্চয়তা প্রদান, ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ ছাড়া বহিষ্কার না করা, সাধারণ শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের ডেকে এনে অপমান না করা, সকল শিক্ষার্থীর নিরাপত্তা নিশ্চিত, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ, কোনো শিক্ষক ব্যক্তিগত কারণে শিক্ষার্থীর ক্ষতিসাধনের চেষ্টা করলে তার শাস্তি নিশ্চিতকরণ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের নামে যে টাকা নেওয়া হয় তার হিসাব প্রদান, ভর্তি হওয়ার ১০ বছরের মধ্যে কোনো শিক্ষার্থীকে ক্যাম্পাস থেকে বের হওয়ার নোটিশ না দেওয়া, কেন্দ্রীয় ক্যাফেটেরিয়া, অডিটরিয়াম ও স্টুডেন্ট কমনরুম নির্মাণ, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব চিকিৎসা ভবন নির্মাণ, ফেসবুক স্ট্যাটাস ও কমেন্টকে কেন্দ্র করে কোনো শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার না করা, প্রতি সেমিস্টারে বাস ভাড়া ৩০০ টাকা করা, আন্দোলনকে কেন্দ্র করে কোনো শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার না করা।

ছাত্রদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে প্রশাসন এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।