ভিসিবিরোধী আন্দোলনের মধ্যে বশেমুরবিপ্রবি বন্ধ ঘোষণা, হল খালির নির্দেশ

Looks like you've blocked notifications!

উপাচার্যের (ভিসি) পদত্যাগের দাবিতে লাগাতার আন্দোলনের মধ্যেই গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বশেমুরবিপ্রবি) বন্ধ ঘোষণা করে শিক্ষার্থীদের হল খালি করার নির্দেশ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

আগামীকাল রোববার থেকে আগামী ৩ অক্টোবর পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের ঘোষণার পাশাপাশি আজ শনিবার সকাল ১০টার মধ্যে শিক্ষার্থীদের হল খালি করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে এনটিভি অনলাইনকে নিশ্চিত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আশিকুজ্জামান ভূঁইয়া।

তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের এই সিদ্ধান্ত ‘অযৌক্তিক ও অবৈধ’ আখ্যা দিয়ে সকাল থেকেই ক্যাম্পাসে ভিসি অধ্যাপক ড. খন্দকার নাসির উদ্দিনের পদত্যাগসহ অন্যান্য দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল অব্যাহত রেখেছেন শিক্ষার্থীরা।

অপরদিকে আজ সকাল থেকেই ক্যাম্পাসে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পুলিশ, র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট অবস্থান নিয়েছেন বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন। এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের একটি সূত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির যাতে অবনতি না হয় সেজন্য বাইরের জেলা থেকে পুলিশ ও র‍্যাব আনা হয়েছে।

শিক্ষার্থীরা সকাল থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন ও ফটকে অবস্থান নিয়ে ভিসিবিরোধী স্লোগান দিচ্ছে। তাঁরা বলছেন, ভিসি পদত্যাগ না করা পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। এর মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে গোবরা এলাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উপর বহিরাগতরা হামলা চালিয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।

আইন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী নজরুল ইসলাম সকাল ১১টার দিকে এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘বন্ধের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় ছুটির এই সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক ও অবৈধ। আমরা এটা মানি না। কোনো ছাত্রছাত্রী হল ছেড়ে যাবে না। ভিসির দালাল শিক্ষকরা ছাত্রীদের জোর করে হল থেকে বের করে দেওয়ার চেষ্টা করছে।’

এই আন্দোলনকারী বলেন, সকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ হলের পানি বন্ধ করে দিয়েছে। হলের ক্যান্টিন, ক্যাম্পাসের খাবারের দোকানও বন্ধ। ক্যাম্পাসের ভিতরের ওয়াইফাই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

হলের পানি, খাবারের ক্যান্টিন বন্ধের ব্যাপারে জানতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও কারো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। সকাল থেকেই বিশ্ববিদ্যালয় উত্তপ্ত অবস্থায় রয়েছে।      

সম্প্রতি ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান কাজ কী’—এই বাক্যটি ফেসবুকে পোস্ট করার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী ও দ্য ডেইলি সানের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি ফাতেমা-তুজ-জিনিয়াকে নিজের কক্ষে নিয়ে অশোভন ভাষায় কথা বলেন ভিসি। তাঁদের কথোপকথনের একটি অডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফাঁস হয়ে যায়।

সেখানে ভিসিকে বলতে শোনা যায়, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ কী? ফাজিল কোথাকার! বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ কী, তুমি জান না? বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ তোমাদের মতো বেয়াদব তৈরি করা। বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ কী, তোর আব্বার কাছে শুনিস। গেছে বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনোদিন?’

উপাচার্য বলছিলেন, ‘আমি খুলছি বলেই তো তোর চান্স হইছে। না হলে তো তুই রাস্তা দিয়া ঘুরে বেড়াতি। বেয়াদব ছেলেমেয়ে।’

অডিও ফাঁসের পর জিনিয়াকে শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এই সিদ্ধান্তকে অবৈধ, অমানবিক, স্বাধীন মতপ্রকাশের প্রতিবন্ধক ও সাংবাদিকতার জন্য হুমকি হিসেবে উল্লেখ করে প্রতিবাদ জানিয়েছে বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠন। এরপর নিজের জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন জিনিয়া। দুদিন বাদেই কর্তৃপক্ষ জিনিয়ার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে। এর আগেও শ্রেণিকক্ষ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট করার দায়ে পাঁচ শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করেছিল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

এরপর গত বুধবার রাতেই ভিসিবিরোধী আন্দোলনে নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তারপর গভীর রাতে একটি অফিস আদেশ আসে, যেখানে ১৪ দফা মেনে নেওয়ার কথা বলা হয়। কিন্তু শিক্ষার্থীরা এই অফিস আদেশ আমলে না নিয়ে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে আবার ভিসির পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন, যা আজও অব্যাহত আছে।