বন্ধের মধ্যেও বশেমুরবিপ্রবিতে ভিসিবিরোধী অনশন চলছে

আন্দোলনের মুখে হঠাৎ করেই বন্ধ ঘোষণা করা হলেও তা উপেক্ষা করেই গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বশেমুরবিপ্রবি) চতুর্থ দিনের মতো উপাচার্যের অপসারণ দাবিতে আমরণ অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।
আজ রোববার সকাল থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে গত তিন দিনের ধারাবাহিকতায় আমরণ অনশনে যোগ দিতে থাকেন শিক্ষার্থীরা। তাঁরা স্লোগান দিচ্ছেন। শিক্ষার্থীরা বলেন, এখন দাবি একটাই—ভিসির পদত্যাগ। ভিসি পদত্যাগ না করা পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।
এদিকে আজ থেকে আগামী ৩ অক্টোবর পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করে গতকাল শনিবার নোটিশ দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ওই দিন সকাল ১০টার মধ্যে হল খালি করে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়াও হয়। পরে একপর্যায়ে হলের পানি, ক্যান্টিন, ক্যাম্পাসে ওয়াই-ফাই কানেকশন ও খাবারের দোকানও বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ।
কিন্তু তার মধ্যে আন্দোলন অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেন আন্দোলনকারীরা। পরে দুপুরের দিকে ক্যাম্পাসের বাইরে গোবরা ও সোনাপুর এলাকায় শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায় বহিরাগতরা। এতে তিন সাংবাদিকসহ প্রায় ২৫ জন আহত হন। শিক্ষার্থীরা এই হামলার জন্য ভিসির মদদপুষ্ট দালালদের দায়ী করেন।
এই পরিপ্রেক্ষিতে বিকেলে জেলা প্রশাসক শাহিদা সুলতানার নির্দেশে ক্যাম্পাসের হলগুলোতে পানি ও বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। কর্তৃপক্ষের হল ছাড়ার নির্দেশ অমান্য করেই শিক্ষার্থীরা হলেই থেকে যান।
গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষকদের পক্ষ থেকে শিক্ষক কোয়ার্টার প্রাঙ্গণে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে ১১৫ জন শিক্ষকের স্বাক্ষরসংবলিত লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন কৃষি বিভাগের প্রভাষক মো. গোলাম ফেরদৌস। লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের ১৪টি দাবি মেনে নেওয়ার পরও কতিপয় স্বার্থান্বেষী শিক্ষকদের সরাসরি ইন্ধনে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চলমান রাখা অনভিপ্রেত বলে সাধারণ শিক্ষকরা মনে করেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আজ সকালে শিক্ষার্থীরা হল ও ক্যাম্পাসের বাইরে থেকে এসে আমরণ অনশনে যোগ দেন। ক্যাম্পাসের ফটকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অবস্থান নিয়েছে। এ ছাড়া গোপালগঞ্জ জেলা শহর ও ক্যাম্পাসের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি স্থানে টহল দিচ্ছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
ক্যাম্পাসে প্রশাসনিক ভবনের বিভিন্ন কক্ষে কর্মকর্তারা অবস্থান করছেন। গোটা এলাকাজুড়েই উত্তেজনা বিরাজ করছে।
যেভাবে আন্দোলনের সূত্রপাত
সম্প্রতি ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান কাজ কী’—এই বাক্যটি ফেসবুকে পোস্ট করার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী ও দ্য ডেইলি সানের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি ফাতেমা-তুজ-জিনিয়াকে নিজের কক্ষে নিয়ে অশোভন ভাষায় কথা বলেন ভিসি। তাঁদের কথোপকথনের একটি অডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফাঁস হয়ে যায়।
সেখানে ভিসিকে বলতে শোনা যায়, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ কী? ফাজিল কোথাকার! বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ কী, তুমি জান না? বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ তোমাদের মতো বেয়াদব তৈরি করা। বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ কী, তোর আব্বার কাছে শুনিস। গেছে বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো দিন?’
উপাচার্য বলছিলেন, ‘আমি খুলছি বলেই তো তোর চান্স হইছে। না হলে তো তুই রাস্তা দিয়া ঘুরে বেড়াতি। বেয়াদব ছেলেমেয়ে।’
অডিও ফাঁসের পর জিনিয়াকে বহিষ্কার করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এই সিদ্ধান্তকে অবৈধ, অমানবিক, স্বাধীন মতপ্রকাশের প্রতিবন্ধক ও সাংবাদিকতার জন্য হুমকি হিসেবে উল্লেখ করে প্রতিবাদ জানিয়েছে বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠন। এরপর নিজের জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন জিনিয়া। দুদিন বাদেই কর্তৃপক্ষ জিনিয়ার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে। এর আগেও শ্রেণিকক্ষ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট করার দায়ে পাঁচ শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করেছিল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
এরপর গত বুধবার রাতেই ভিসিবিরোধী আন্দোলনে নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তারপর গভীর রাতে একটি অফিস আদেশ আসে, যেখানে ১৪ দফা মেনে নেওয়ার কথা বলা হয়। কিন্তু শিক্ষার্থীরা এই অফিস আদেশ আমলে না নিয়ে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে আবার ভিসির পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন শুরু করে, যা আজও অব্যাহত আছে।