বঙ্গবন্ধু বিশ্ববিদ্যালয়

‘ভিসিপন্থীদের’ হুমকির মুখে পদত্যাগী সহকারী প্রক্টরের জিডি

Looks like you've blocked notifications!

হুমকির মুখে নিজের জীবনের নিরাপত্তাহীনতার কথা জানিয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) সদ্য পদত্যাগী প্রক্টর হুমায়ুন কবীর।

জিডিতে হুমায়ুন কবীর লিখেছেন, ‘গত ২১ সেপ্টেম্বর দুপুর ৩টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিপন্থীরা আমাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্যারেজে পাইয়া বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতিসহ প্রাণনাশের হুমকি প্রদান করে। এমতাবস্থায় উক্ত বিষয় নিয়া খুব সমস্যার মধ্যে আছি।’

বশেমুরবিপ্রবির উপাচার্য (ভিসি) ড. খোন্দকার নাসিরউদ্দিনের পদত্যাগের দাবিতে লাগাতার আন্দোলনের মুখে ক্যাম্পাসের বাইরে শিক্ষার্থীদের ওপর বহিরাগতদের হামলার কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করেন সহকারী প্রক্টর হুমায়ুন কবীর। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ভিসির লালিত ক্যাডাররাই এ হামলা চালিয়েছে। যদিও ভিসি একদিন পরে এ ঘটনার নিন্দা জানান।

তার পর থেকেই ভিসিপন্থীরা নানা হুমকি ও ভয়ভীতি দেখাচ্ছে এমন অভিযোগ করে গতকাল সোমবার গোপালগঞ্জ সদর থানায় জিডিটি করেন হুমায়ুন কবীর।

জিডিতে আরো উল্লেখ করা হয়, ‘পদত্যাগের পর হুমায়ুন কবীর (ইংরেজি) নাম দিয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরা ফেসবুকে আইডি খুলে বিভিন্ন উসকানিমূলক কথা ও অপপ্রচার করিয়া বেড়াইতাছে। যাহাতে আমার পারিবারিক, সামাজিক ও শিক্ষকতা পেশার সম্মানহানি হচ্ছে।’

জিডিতে পদত্যাগী সহকারী প্রক্টর আশঙ্কা প্রকাশ করেন, যেকোনো সময় ভিসিপন্থীরা এই ফেসবুক আইডির মাধ্যমে অপপ্রচার চালিয়ে তাঁর বড় ধরনের ক্ষতি করতে পারে।

 সম্প্রতি ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান কাজ কী’—এ বাক্যটি ফেসবুকে পোস্ট করার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী ও দ্য ডেইলি সানের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি ফাতেমা-তুজ-জিনিয়াকে নিজের কক্ষে নিয়ে অশোভন ভাষায় কথা বলেন উপাচার্য। তাঁদের কথোপকথনের একটি অডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফাঁস হয়ে যায়।

সেখানে উপাচার্যকে বলতে শোনা যায়, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ কী? ফাজিল কোথাকার! বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ কী, তুমি জানো না? বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ তোমাদের মতো বেয়াদব তৈরি করা। বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ কী, তোর আব্বার কাছে শুনিস। গেছে বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনোদিন?’

উপাচার্য বলছিলেন, ‘আমি খুলছি বলেই তো তোর চান্স হইছে। না হলে তো তুই রাস্তা দিয়া ঘুরে বেড়াতি। বেয়াদব ছেলেমেয়ে।’

অডিও ফাঁসের পর জিনিয়াকে বহিষ্কার করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এই সিদ্ধান্তকে অবৈধ, অমানবিক, স্বাধীন মতপ্রকাশের প্রতিবন্ধক ও সাংবাদিকতার জন্য হুমকি হিসেবে উল্লেখ করে প্রতিবাদ জানিয়েছে বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠন। এরপর নিজের জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন জিনিয়া।

দুদিন বাদেই কর্তৃপক্ষ জিনিয়ার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে। এর আগেও শ্রেণিকক্ষ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট করার দায়ে পাঁচ শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করেছিল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

এরপর ১৭ সেপ্টেম্বর রাতেই ভিসিবিরোধী আন্দোলনে নামেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তারপর গভীর রাতে একটি অফিস আদেশ আসে, যেখানে ১৪ দফা মেনে নেওয়ার কথা বলা হয়। কিন্তু শিক্ষার্থীরা এই অফিস আদেশ আমলে না নিয়ে ১৮ সেপ্টেম্বর সকাল থেকে আবার ভিসির পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন, যা আজও অব্যাহত আছে।