যুক্তরাষ্ট্রের এমআইটিতে ভর্তি হতে চাইলে
যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস অঙ্গরাজ্যের কেমব্রিজ শহরে অবস্থিত ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (এমআইটি) বিশ্বের শীর্ষ ১০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম। ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে হলে কী করতে হবে সে বিষয়ে এনটিভি অনলাইনের সঙ্গে কথা বলেছেন এমআইটির বাংলাদেশি ছাত্রী নাজিয়া চৌধুরি। তিনি ২০১৪ সালে জীববিদ্যায় স্নাতক সম্পন্ন করেছেন।
নাজিয়া বলেন, এমআইটি এমন একটি প্রতিষ্ঠান যেখানে প্রকৌশল ও মৌলিক বিজ্ঞানের বিভাগগুলো সব সময়ই আন্তর্জাতিক র্যাঙ্কিংয়ে প্রথম হয়। গত কয়েক বছরে প্রতিষ্ঠানটির মানবিক অনুষদের বিভিন্ন বিষয়ও বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে চলে এসেছে। এখানে শিক্ষকতা করেন বিশ্বের নামকরা সব পণ্ডিত ও গবেষকরা।
আবেদন, বৃত্তি ও অন্যান্য
নাজিয়া বলেন, এমআইটিসহ যুক্তরাষ্ট্রের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির প্রস্তুতি দীর্ঘসময় ধরে নিতে হয়। কারণ, ওরা দেখতে চায় পড়ালেখায় কে কতটা ভালো, একজন আবেদনকারী মানুষ হিসেবে কেমন, তার কোনো বিষয়ে আগ্রহ আছে কি না, সেই আগ্রহ থেকে সে কী কী করেছে, সে কীভাবে সংকট সামাল দিয়েছে ইত্যাদি। কোনো ছাত্রের আগ্রহ থাকতে পারে গণিতে, খেলাধূলায়, সংগীতে, জনসেবায়, থিয়েটারে— আগ্রহ থাকতে পারে যেকোনো কিছুতেই। আর এই আগ্রহ থাকার ব্যাপারটি শুধু বললেই হবে না, দেখাতে হবে নিজের আবেদনপত্রে বিভিন্ন রচনার মাধ্যমে, শিক্ষকদের সুপারিশপত্র এবং সাক্ষাৎকারে জীবনের ছোট ছোট গল্পের মধ্য দিয়ে।
এমআইটির আবেদনপত্র অনলাইনে পাওয়া যায় আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাসেই; জমা দিতে হয় যে বছর এমআইটিতে ক্লাস শুরু হবে, সেই বছরের জানুয়ারি মাসেই। কাজেই ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে এমআইটিতে ক্লাস শুরু করতে চাইলে, আপনাকে কাজ শুরু করতে হবে ২০১৫ সালের অক্টোবর বা নভেম্বর থেকে। আবেদন করার শেষ সময় থাকে প্রতি বছরের জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত। অর্থাৎ আবেদন করার শেষ সময় ২০১৬ সালের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত। ২০১৫ সালের ডিসেম্বর মাসের মধ্যই দিয়ে ফেলতে হবে স্যাট-১ ও ২।
আবেদন করার পর আপনি এমআইটি কর্তৃপক্ষের চূড়ান্ত বাছাইয়ের তথ্য জানতে পারবেন মার্চের ভেতরেই। টোফেলের মতো ভাষা পরীক্ষা দেওয়াটা এমআইটির ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক নয়। তবে দিয়ে ফেললে ক্ষতি নেই, অনেক সময় ভিসার আবেদন করলে দূতাবাস টোফেলের স্কোর দেখতে চায়। অনেকেই জানতে চান, এই ধরনের পরীক্ষাগুলোয় ন্যূনতম কত নম্বর পেতে হবে? নাজিয়া বলেন, আসলে এমআইটির কোনো ন্যূনতম চাওয়া নেই। তবে যেহেতু বাংলাদেশ থেকে অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী আবেদন করেন তাই স্কোর ভালো হলে সেটি আবেদনকারীর জন্যই ভালো। এমআইটিতে যারা ভর্তি হয়, তাদের স্কোর কেমন, এর একটা হিসাব পাওয়া যাবে এমআইটির অ্যাডমিশন ওয়েবসাইট ‘Standardized Testing’-এ।
এমআইটির ওয়েবসাইটে গিয়ে একটি ‘মাই এমআইটি’ অ্যাকাউন্ট খুললেই পাওয়া যাবে আবেদনপত্র। আবেদনপত্রে বড় কোনো রচনা থাকে না ঠিকই, তবে থাকে ছোট ছোট কিছু প্রশ্ন। যেমন- নির্মল আনন্দের জন্য আপনি কী করেন? জীবনে ব্যর্থতার সময়গুলো আপনি কীভাবে কাটিয়ে উঠেছেন ইত্যাদি। আর সুপারিশপত্র নিতে হয় স্কুল-কলেজের তিনজন শিক্ষকের কাছ থেকে। যাঁরা আপনাকে ভালো করে চেনেন, আপনার জীবনের ছোটখাটো ঘটনাগুলো যাঁরা বলতে পারবেন, তাঁদেরই অনুরোধ করুন, আপনার জন্য সুপারিশপত্র লিখতে। তাঁদের সঙ্গে বেশ কয়েকবার দেখা করে বলুন, আপনার সম্পর্কে কী কী তাঁরা লিখতে পারেন। আর সবচেয়ে বড় যে বিষয়ে আপনার আগ্রহ আছে, সেই বিষয় নিয়ে চর্চা করুন, ছাড়িয়ে যান নিজেকে।
এমআইটিতে প্রতিবছর ১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে বৃত্তি এবং আর্থিক সাহায্যের জন্য আবেদন করতে হয়। নির্বাচিত হওয়ার সিদ্ধান্ত জানানো হয় মার্চে এবং বৃত্তির ধরনটি জানানো হয় এপ্রিল মাসে। সবাই পূর্ণ বৃত্তি পান না, যারা পূর্ণ বৃ্ত্তি পান না তাদের জন্য স্বল্পমেয়াদি চাকরি এবং খণ্ডকালীন চাকরির সুযোগ আছে এখানে।
পরামর্শ
এমআইটি ফেরত নাজিয়া আরো বলেন, মনে রাখবেন, এমআইটি পুরো বিশ্ব থেকে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী (যাদের যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব বা গ্রিন কার্ড নেই) ভর্তি করে বছরে ১০০ জনের মতো। কাজেই ভালো ফল অর্জন করে, পড়াশোনার গণ্ডির বাইরে ভালো কাজ করে, আবেদনপত্রের প্রশ্নগুলোর সুন্দর জবাব দিয়ে এবং শিক্ষকদের থেকে ভালো সুপারিশপত্র নিয়ে নিজের আবেদনপত্র সব দিক দিয়ে আকর্ষণীয় করে তোলার সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে। কাজটা কিন্তু কঠিন নয়! শুধু দরকার একটু পরিশ্রম আর ওই যে আগ্রহ বা প্যাশন।
ফেসবুকসহ ইন্টারনেটের বিভিন্ন ওয়েবসাইটে এখন আছে অনেক সাহায্য পাওয়ার জায়গা। নিজে নিজে আবেদন করার সময় কোনো প্রশ্নের উত্তর না পেলে সাহায্য নিতে পারেন সেসব সাইট থেকেও।
ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮৬১ সালে। গত দেড় শ বছরে এ প্রতিষ্ঠানের সুনাম বেড়েছে বৈ কমেনি। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সংক্রান্ত গবেষণার ক্ষেত্রে এমআইটির পরিচিতি বিশ্বজুড়ে। নোবেল বিজয়ীদের মধ্যে ৭৬ জনই পড়াশোনা করেছেন এখানে। কেবল যুক্তরাষ্ট্র নয় বাংলাদেশসহ বিশ্বের ১১৫টি দেশের শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা করছেন এমআইটিতে। কাজেই একটু চেষ্টা ও আগ্রহ থাকলেই এমআইটিতে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা পড়ালেখা করতে যেতে পারেন বলে মন্তব্য করেন নাজিয়া চৌধুরি।