সাত দশক পেরিয়ে ৭১ বছরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ও উত্তরাঞ্চলের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ বৃহস্পতিবার (৫ জুলাই)। দীর্ঘ সাত দশক পেরিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টি ৭১ বছরে পদার্পণ করেছে আজ। ১৯৫৩ সালে মাত্র ১৬১ জন শিক্ষার্থী নিয়ে যাত্রা শুরু করা এই বিশ্ববিদ্যালয়টিতে বর্তমানে শিক্ষার্থী সংখ্যা ত্রিশ হাজারেরও অধিক। সুদীর্ঘ এ পথচলায় শহীদ ড. শামসুজ্জোহার স্মৃতি বিজড়িত ক্যাম্পাসটির রয়েছে গৌরব-ঐতিহ্যের ইতিহাস।
বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য মতে, ব্রিটিশ আমলে রাজশাহী অঞ্চলের শিক্ষার উন্নয়নের জন্য ১৮৭৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় রাজশাহী কলেজ। এই কলেজে আইন বিভাগসহ পোস্ট গ্রাজুয়েশন শ্রেণি চালু করা হলেও কিছুদিন পরেই সব কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। তখনই রাজশাহীতে একটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের প্রয়োজন অনুভূত হয়। ১৯৪৭ সালের দিকে রাজশাহীতে স্যাডলার কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পক্ষে আন্দোলন শুরু হয়।
১৯৫০ সালের ১৫ নভেম্বর রাজশাহীর বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে ৬৪ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়। একপর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি জানাতে গিয়ে কারারুদ্ধ হন ১৫ ছাত্রনেতা। পরে ছাত্রজনতার পক্ষ থেকে ঢাকায় একটি ডেলিগেশন পাঠানো হয়। এভাবে একের পর এক আন্দালনের চাপে স্থানীয় আইন পরিষদ রাজশাহীতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে গুরুত্ব দেয়। এই আন্দোলনে একাত্ম হন পূর্ববঙ্গীয় আইনসভার সদস্য প্রখ্যাত আইনজীবী মাদার বখ্শ।
অবশেষে ১৯৫৩ সালের ৩১ মার্চ প্রাদেশিক আইনসভায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য আইন পাস হয়। নতুন উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইতরাৎ হোসেন জুবেরীকে সঙ্গে নিয়ে মাদার বখ্শ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঠামো পরিকল্পনা প্রণয়ন করেন। এরপর শুরু হয় রাবির পথচলা।
১৯৫৩ সালে রোপণ করা বীজটি বতর্মানে বিশাল মহিরুহে পরিণত হয়েছে। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসর।
বর্তমানে ৩০৩ দশমিক ৮০ হেক্টরের এই বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে ১১৭৭ জন শিক্ষক ও দুই হাজার জন প্রশাসনিক কর্মকর্তা-কর্মচারী। শিক্ষার্থীর সংখ্যা ধীরে ধীরে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৮ হাজার ৩৩০ জন। এর মধ্যে ছাত্র ২৫ হাজার ৫৭৯ জন ও ছাত্রী ১২ হাজার ৫৫১ জন। বর্তমানে ৯ অনুষদের অধীনে বিভাগ রয়েছে ৫৮টি। বেড়েছে অবকাঠামো। ১২টি একাডেমিক ভবনসহ বর্তমানে রাবির ছাত্রদের থাকার জন্য আবাসিক হল রয়েছে মোট ১১টি ও ছাত্রীদের জন্য রয়েছে ছয়টি। এছাড়া গবেষক ও বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে একটি আন্তর্জাতিক ডরমিটরি।
সুদীর্ঘ সময়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা নিয়ে অনেকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অবদান রেখেছেন। দীর্ঘ এ সময়ে রাবি তৈরি করেছে ভাষাবিজ্ঞানী ও সাহিত্যিক ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক, সেলিনা হোসেন, ইতিহাসবিদ আব্দুল করিম, তাত্ত্বিক ও সমালোচক বদরুদ্দীন উমর, চলচ্চিত্র পরিচালক গিয়াসউদ্দিন সেলিম, নাট্যকার মলয় ভৌমিক, মাসুম রেজা ও জাতীয় ক্রিকেটার আল আমিন হোসেনদের মতো অসংখ্য গুণীজনকে।
এদিকে দিবসটি উপলক্ষে প্রতিবছরের মতো এবারও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও বিভিন্ন বিভাগের পক্ষ থেকে নানা কর্মসূচি আয়োজন করা হয়েছে। সকাল ১০টায় শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম প্রশাসন ভবনের সামনে জাতীয় সংগীত পরিবেশন ও পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে শুরু হবে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন। পরে বেলুন-ফেস্টুন ও পায়রা উড়িয়ে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন শেষে বৃক্ষরোপণ করবেন উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার। সেখান থেকে সাড়ে ১০টায় একটি শোভাযাত্রা বের হয়ে ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করবে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা অংশগ্রহণ করবেন।