রাবির ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্সেস

বিসিএসে বসাতে ছয় মাসের ইন্টার্নশিপ দুমাসে শেষের সিদ্ধান্ত, জানেন না পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক

Looks like you've blocked notifications!
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটক। ফাইল ছবি

বাংলাদেশ কর্ম কমিশনের (বিসিএস) পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ দিতে ছয় মাসের ইন্টার্নি কোর্সের পরীক্ষা দুই মাসে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্সেস বিভাগ। শিক্ষার্থীদের মানবিক দিক বিবেচনায় গত ৬ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত বিভাগের অ্যাকাডেমিক কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে দুই মাসের মধ্যে পরীক্ষা প্রক্রিয়া শেষ করা হলেও ছয় মাস তাদের ইন্টার্নি কোর্সের কার্যক্রম চলমান থাকবে। ততদিন পর্যন্ত এ কোর্সের ফলাফল প্রকাশিত হবে না। যদিও ‘ক্যাডার সার্ভিসের জন্য নয়, বরং বিষয়ভিত্তিক জ্ঞান প্রদানের জন্যই বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠদান করা হয়’ উল্লেখ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বলছেন, তিনি পরীক্ষা এগিয়ে নেওয়ার বিষয়টি জানেন না।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্সেস বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের ইন্টার্নশিপ শুরু হয় গত ১৯ অক্টোবর। কোর্সটি শেষ হবে ২০২৪ সালের ১৮ এপ্রিল। ফলে ছয় মাস ইন্টার্নশিপ করার পর পরীক্ষা হলে শিক্ষার্থীরা আসন্ন ৪৬তম বিসিএস পরীক্ষায় বসতে পারবে না। সেজন্য অ্যাপিয়ার হিসেবে বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে শিক্ষার্থীদের একটি অংশ বিভাগ বরাবর আবেদন করে।

আরও জানা যায়, গত ৩ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত বিভাগের অ্যাকাডেমিক কমিটির নিয়মিত সভায় শিক্ষার্থীদের আবেদনের বিষয়ে আলোচনা হয়। এর তিন দিন পর গত ৬ ডিসেম্বর অ্যাকাডেমিক কমিটির এক জরুরি সভা ডাকা হয়। সেখানে বিভাগের বেশির ভাগ শিক্ষকের সম্মতিতে দুই মাসের মধ্যে শুধু পরীক্ষার প্রক্রিয়া শেষ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে তারা প্রশিক্ষকের কাছ থেকে ইন্টার্নশিপের সব কার্যক্রম ছয় মাসেই শেষ করবে।

জানতে চাইলে বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের পরীক্ষা কমিটির সভাপতি অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘বিভাগের অ্যাকাডেমিক কমিটির সভায় ২৪ জনের মধ্যে ২২ জন শিক্ষকের সম্মতিতে এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য বিভাগে এই শিক্ষাবর্ষের জুনিয়র শিক্ষার্থীরা বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে। কিন্তু তারা সেই সুযোগ পাচ্ছে না। তাই তাদের কথা চিন্তা করে অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো আমরাও এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

এ বিষয়ে ওই বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক মইজুর রহমান বলেন, ‘এ ক্যাম্পাস ও এর অভ্যন্তরীণ অবকাঠামো শিক্ষার্থীদের জন্যই। এমনকি, আমরা শিক্ষকরাও শিক্ষার্থীদের জন্য। সেক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের স্বার্থে এবং তাদের মানবিক দিক বিবেচনায় আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তবে দুই মাসে ইন্টার্নশিপ শেষ করার বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমরা শুধু এ সময়ের মধ্যে পরীক্ষার প্রক্রিয়াটা শেষ করতে চেয়েছি। যাতে শিক্ষার্থীরা বিসিএস পরীক্ষায় আবেদনের সুযোগ পায়। তাদের মধ্য থেকে কেউ ক্যাডার হলে সেই সাফল্য ও গর্ব তো আমাদেরই৷ কিন্তু শিক্ষার্থীরা ইন্টার্নশিপের পুরো ছয় মাসই সব কার্যক্রম সম্পন্ন করবে। এর আগে তাদের ফল প্রকাশিত হবে না এবং তারা কোনো সার্টিফিকেটও পাবে না।’

‘বিষয়টি অবগত নন’ উল্লেখ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মো. আলমগীর হোসাইন সরকার বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী এক বছরের জন্য আট মাস এবং ছয় মাসের সেমিস্টারের জন্য চার মাস পাঠদান করতে হয়। এর মধ্যে শিক্ষার্থীরা যদি বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার জন্য তাড়াতাড়ি পরীক্ষা দিতে চায় তাহলে বিভাগ আমাদের কাছে আসে। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী আমরা তাদের ব্যাখ্যা ও পরামর্শ দেই৷ কিন্তু, ওই বিভাগ থেকে বিষয়টি আমাদের জানানো হয়নি।’

পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মো. আলমগীর হোসাইন সরকার আরও বলেন, ‘বিভাগের অ্যাকাডেমিক কমিটি যদি সিদ্ধান্ত নিয়ে আমাদের না জানায় তাহলে সেটি সম্পূর্ণ তাদের ব্যাপার। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্দেশ্য হচ্ছে শিক্ষার্থীদের বিষয়ভিত্তিক জ্ঞান দেওয়া। বিশ্ববিদ্যালয়ে কখনও ক্যাডার সার্ভিসের জন্য পাঠাদান করানো হয় না। যেসব বিভাগ এসব সুবিধা দেওয়ার জন্য এমন সিদ্ধান্ত নিচ্ছে তাদের বিষয়ে প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’

জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম বলেন, ‘বিধিবহির্ভূত কোনো কর্মকাণ্ড বিশ্ববিদ্যালয় প্রশ্রয় দেয় না। আমরা বিষয়টি শুনেছি। ঠিক কী কারণে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, সেটি বিভাগের সভাপতি ও অনুষদের অধিকর্তার কাছে আমরা জানতে চেয়েছি। এ বিষয়ে পরবর্তী সময়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’