জোহা স্মৃতিফলক, চেতনার স্ফুলিঙ্গ
বাংলাদেশের ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় নাম শহীদ ড. শামসুজ্জোহা। ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের সময় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষক ছিলেন তিনি। সেসময় পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী ১৪৪ ধারা জারি করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ডাকা আন্দোলনকে দমাতে চেয়েছিল। কিন্তু ১৮ ফেব্রুয়ারি সকালে শিক্ষার্থীরা সেই আইন ভেঙে বিশ্ববিদ্যালয় ফটকের সামনে মহাসড়কে আন্দোলন শুরু করে। সে আন্দোলনে উপস্থিত ছিলেন ড. জোহা। শিক্ষার্থীদের শান্ত করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে নিয়ে যেতে চেষ্টা করেন তিনি।
এসময় পাক সেনারা শিক্ষার্থীদের দিকে বন্দুক তাক করলে ড. জোহা বলেন ‘কোনো ছাত্রের গায়ে গুলি লাগার আগে যেন সে গুলি আমার গায়ে লাগে।’ ড. জোহার মহান অবদানের স্মরণে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে কথাটি বলেছিলেন নির্মিত হয়েছে জোহা স্মৃতিফলক, স্মৃতিস্মারক স্ফুলিঙ্গ, জোহা চত্বর, জোহা হল, জোহার সমাধিস্থল।
আসছে ১৮ ফেব্রুয়ারি জোহা দিবসে আপনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে ড. শামসুজ্জোহার স্মৃতি বিজড়িত স্থান। তবে যাওয়ার আগে জেনে নিন ড. জোহা সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত কিছু তথ্য।
১৯৬৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি গণঅভ্যুত্থানের সময় শিক্ষার্থীরা একপর্যায়ে মিছিল শুরু করে। ফলশ্রুতিতে পাকবাহিনী তাদের ওপর গুলি করার প্রস্তুতি নেয়। তখন ড. জোহা চিৎকার করে বলতে থাকেন—ডোন্ট ফায়ার, আই সেইড ডোন্ট ফায়ার। এরপর তিনি উপস্থিত পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে অনুরোধ করেন, তাদের ওপর যেন গুলি না করা হয়। কিন্তু তাঁর কথায় কর্ণপাত না করে পাকিস্তানি বাহিনীর সেনা ক্যাপ্টেন হাদি তাঁর দিকে লক্ষ্য করে গুলি করেন এবং সঙ্গে সঙ্গে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। পরে রাজশাহী মিউনিসিপ্যাল অফিসে নিয়ে গিয়ে তাঁকে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। নিজের জীবনকে তুচ্ছ করে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের রক্ষার্থে এভাবে জীবন বিলিয়ে দেন এই বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে তাঁকে সমাহিত করা হয়। যে স্থানে তাঁকে গুলি করা হয়েছিল, ঠিক সেখানেই নির্মিত হয়েছে জোহা স্মৃতিফলক।
প্রতি বছর ১৮ ফেব্রুয়ারি তাঁর স্মরণে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পালন করা হয় শিক্ষক দিবস। এ দিন প্রশাসনিকভাবে ছুটি পালন করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটকে প্রবেশ করে কিছু দূর হেঁটে গেলে ড. জোহার সমাধি চোখে পড়ে। চার দিকের ফুলের সারি, পাতাবাহার গাছ আগলে রেখেছে তাঁর সমাধিকে। জায়গাটি জোহা চত্বর নামে পরিচিত। এই মহান আত্মত্যাগের সম্মানে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাঁর নামানুসারে একটি আবাসিক হল নির্মাণ করেছে, যেটি ড. শামসুজ্জোহা হল নামে পরিচিত। চারুকলা বিভাগের সাবেক সভাপতি কনক কুমার পাঠকের হাতের ছোঁয়ায় আবাসিক হলটির প্রাঙ্গণে তাঁর স্মরণে স্মৃতিস্মারক স্ফুলিঙ্গ নির্মাণ করা হয়ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরতে পরতে আজও ছড়িয়ে আছে তাঁর পদচিহ্ন।
যেভাবে যাবেন
ড. শামসুজ্জোহার এ স্মৃতিস্তম্ভ ও সমাধিস্থলে যেতে চাইলে আসতে হবে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। ঢাকা থেকে সরাসরি সড়ক কিংবা রেলপথে সহজেই আসা যাবে। রেলপথে ঢাকা থেকে রাজশাহী শহরের ভাড়া পড়বে সর্বনিম্ন ৩৪০ টাকা। অন্যদিকে বাসে ভাড়া পড়বে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা। এ ছাড়া বিমানযোগেও আসা যাবে। ঢাকা থেকে উত্তরবঙ্গগামী বিভিন্ন পরিবহণের বাসে আসা যাবে। এ ছাড়া কমলাপুর থেকে রাজশাহীগামী ট্রেনেও যাওয়া যায়। সেখান থেকে অটো কিংবা রিকশায় চড়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় আসলে দেখা মিলবে ড. জোহার সমাধিস্থল ও স্মৃতিস্মারক স্ফুলিঙ্গ।