বইয়ের বিনিময়ে বই, এ যেন পাঠক তৈরির ব্যতিক্রমী আয়োজন
অনেকেই পুরোনো বই সাজিয়ে রেখেছেন পড়ার টেবিলে৷ দীর্ঘদিন হাতের সংস্পর্শের বাইরে থাকায় বইয়ের মলাটেও জমেছে ধুলোর স্তূপ। যদি কেউ সেই পুরোনো বইয়ের বিনিময়ে নতুন বই নেওয়ার সুযোগ করে দেয় তাহলে বিষয়টি কেমন হয়? হয়তো মোটেও মন্দ নয়। ঠিক এমনই এক উদ্যোগ নিয়ে কিছু তরুণ শিক্ষার্থীরা আয়োজন করেছে ‘বই বিনিময় উৎসব’। নতুন বা পুরোনো পঠিত বইয়ের বিনিময়ে পছন্দের অন্য যেকোনো বই নেওয়ার সুযোগ দিচ্ছেন তারা।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার মুক্তমঞ্চ। সেই মঞ্চের পুরো জায়গাজুড়ে রঙিন মলাটের বইয়ের পসরা সাজানো। গল্প, কবিতা, উপন্যাস ও ভ্রমণকাহিনীসহ কয়েকটি জনরার নতুন-পুরাতন মিলিয়ে বই রয়েছে প্রায় হাজার খানেক। ঘেঁটে ঘেঁটে নিজের পছন্দমতো বই খুঁজে বের করছেন বইপ্রেমী পাঠকরা। সঙ্গে করে নিয়ে এসেছেন এক-দুটো পুরোনো বই। যেটি ইতোমধ্যে পড়া শেষ করে ফেলে রাখা ছিল। তাই টেবিলে অযথা অযত্নে সাজিয়ে না রেখে তার বিনিময়ে নতুন আরেকটি বই নেওয়ার জন্য ভিড় করছেন তারা।
আজ সোমবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ৫৫তম ব্যাচের সহযোগিতায় এ উৎসবের আয়োজন করে ‘অদম্য-১৯’ নামের একটি সংগঠন৷ সকাল সাড়ে ৯টায় শুরু হয়ে উৎসব চলে বিকেল ৫টা পর্যন্ত৷ এতে নিজ নিজ পঠিত বই নিয়ে উৎসবে অংশ নিয়েছেন বিভিন্ন বয়সী বইপ্রেমীরা।
বইয়ের মানের ওপর নির্ভর করে তিন ধরনের বই বিনিময় করছেন আয়োজকরা। প্রায় নতুন ও দামি বইগুলোর বিনিময়ে একই মানের বই পাবেন পাঠকরা। আর পুরাতন হলে সেই বইয়ের মতোই অন্য কোনো বই পছন্দ করে নিতে পারবেন তারা। অর্থাৎ পাঠকের বইটি যেই মূল্যের ঠিক সমপরিমাণ মূল্যের বই সংগ্রহ করার সুযোগ পাচ্ছেন বইপ্রেমীরা। তবে এ উৎসবে কোনো প্রকার নগদ অর্থের লেনদেন নেই।
মূলত বইকে পাঠকের কাছে সহজলভ্য করে তোলার জন্যই এই উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন আয়োজকরা। তারা জানান, নতুন পাঠক তৈরির বড় মঞ্চ গড়ে তোলার লক্ষ্যেই এই আয়োজন। তাই বই বিনিময়ের এই ধারণা দেশব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য নতুন-পুরান প্রায় এক হাজার বই এখানে প্রদর্শন করেন তারা।
উৎসবে ঘুরতে এসেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এ কে আনোয়ার। শিক্ষার্থীদের এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে তিনি বলেন, বর্তমান সময়ে আমাদের বই পড়ার অবস্থা তলানিতে পৌঁছে গেছে; যা আমাদের জন্য আসলেই ভয়ংকর। তাদের এই উদ্যোগে অনেকে বইয়ের সংস্পর্শে আসতে পারবে। আজকাল ইলেকট্রনিক ডিভাইসের কারণে আমরা প্রতিনিয়ত বই থেকে দূরে সরে যাচ্ছি। বই যে একটা প্রাণের খোরাক সেটা তারা আশা করি পাঠককে বোঝাতে সক্ষম হবে।
বই বিনিময় উৎসবে সহযোগী হিসেবে কাজ করছেন ওই বিভাগটির ২০১৭-১৮ সেশনের শিক্ষার্থী শোয়েব উল হাসান৷ এই আয়োজন নিয়ে তিনি বলেন, সবার বাসায় পঠিত বই থাকে৷ হয়তো সেই বইগুলো আর পড়া হয় না৷ ফলে এসব পুরাতন বই বিনিময় করে নতুন বই সংগ্রহ করতে পারবে এই উৎসব থেকে৷ ‘অদম্য-১৯’থেকে আমাদের প্রায় ৭০০ বই দেওয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে বিনিময় করার জন্য আমরা এক হাজার বই সাজিয়ে রেখেছি। বইয়ের মান ও মূল্যের ওপর ভিত্তি করে তিন ক্যাটাগরিতে বই প্রদর্শন করা হয়েছে।
শোয়েব উল হাসান বলেন, বর্তমান প্রজন্মে আমরা যারা আছি তাদের বেশিরভাগই সোশ্যাল মিডিয়ায় আসক্ত। আগে একটা সংস্কৃতি ছিল যে, দুপুরে খেয়েদেয়ে বই নিয়ে বসা হতো৷ আর এখন সবাই ফেসবুক নিয়ে বসে৷ তাই এ জায়গা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য সবাইকে বইমুখী করতে আজকে এই ‘বই বিনিময় উৎসব’।
সার্বিক আয়োজন সম্পর্কে অদম্য-১৯ এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা তায়েব মৃধা বলেন, আমাদের আয়োজনের উদ্দেশ্য হলো বইকে পাঠকের কাছে সহজলভ্য করে তোলা। এই আয়োজনকে মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া। বই বিনিময়ের এই ধারণাটি বাংলাদেশে খুব বেশি পুরাতন নয়। আমরা প্রাথমিকভাবে দেশের আটটি বিভাগে এই আয়োজন করছি। তারই ধারাবাহিকতায় ময়মনসিংহ ও রংপুরের পর রাজশাহীতে এ উৎসব শুরু হয়েছে। নতুন পাঠক তৈরির জন্য এই আয়োজন করা। আমরা বেশ সাড়া পাচ্ছি। যারা বই পড়েন তাদের জন্য এটা বড় একটা সুযোগ। পাঠক তৈরির বড় মঞ্চ হতে পারে এই উৎসব।