ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে ২৮ প্রতিষ্ঠানের ৪০ হাজার খালি ভাউচার উদ্ধার!
হিসাবরক্ষকের কক্ষের প্রত্যেকটি আলমারিতে কার্টন ভর্তি খালি বিল ভাউচার। কোনোটি কুমিল্লা শহরের নামিদামি রেস্টুরেন্টের, কোনোটি ডেকোরেটর দোকানের। কোনোটির দুটি পাতা ব্যবহৃত, কোনোটির একটি পাতাও ব্যবহার করা হয়নি। খালি এসব বিল ভাউচার পাওয়া যায় কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের প্রশাসনিক ভবনের দ্বিতীয়তলার হিসাবরক্ষকের কক্ষ থেকে। কুমিল্লা শহরের ২৮ প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৪০ হাজার খালি ভাউচার উদ্ধার করা হয়।
আজ রোববার (৬ অক্টোবর) এসব বিল ভাউচার উদ্ধার করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের সমন্বয়করা।
জানা গেছে, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের কয়েকজন শিক্ষার্থী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের কাছে অভিযোগ করেন তাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা নেওয়া হচ্ছে। এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে শিক্ষার্থী ও কলেজের বিভিন্ন সূত্রে অর্থ লোপাটের অভিযোগ ওঠে। রোববার দুপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা কলেজের হিসাব শাখায় গিয়ে এ বিষয়ে জানতে চান। পরে কলেজের হিসাবরক্ষক মো. সাইফুদ্দিন সুমন বিচলিত হয়ে পড়লে শিক্ষার্থীরা তার কক্ষে থাকা খোলা আলমারিতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের খালি বিল-ভাউচার দেখেন। পরে তারা অন্য আলমারিগুলোতে খুঁজে কয়েক হাজার বিল ভাউচার পান। এ সময় হিসাবরক্ষক সাইফুদ্দিন সুমনকে জিজ্ঞাসা করলেও তিনি কোনো প্রত্যুত্তর দেননি।
কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, কুমিল্লা শহরের দ্য কুমিল্লা ক্লাব, মদিনা স্যানিটারি, মোস্তফা ফার্নিচার হাউজ, কাক্কুর ক্যান্টিন, হোটেল ছন্দু ব্রিজ শাখা, হোটেল ছন্দু বিশ্বরোড শাখা, কিং ফিশার রেস্টুরেন্ট, নূরজাহান হোটেল, ঘরোয়া হোটেল, আদিবা কম্পিউটার, ডায়না হোটেল, রিয়াজ প্রিন্টার্স এন্ড অফসেট প্রেস, নিউ পুষ্পালয়, মুসলিম সুইটসসহ অনেক প্রতিষ্ঠানের ভাউচার পাওয়া যায়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের সমন্বয়ক তোফায়েল হোসেন, আনোয়ার হোসেন টুটুল, জাহিদুল ইসলাম ও মাকসুদা সুলতানা বলেন, আমরা হিসাবরক্ষক সাইফুদ্দিন সুমনকে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে ভোগান্তি ও অর্থ বেশি নেওয়ার অভিযোগটি সম্পর্কে জানতে চাই। এ সময় তাকে বিচলিত হতে দেখলে আমরা কলেজের খোলা আলমারিতে খালি বিল-ভাউচারের কয়েকটি বই দেখতে পাই। পরে আমরা বিভিন্ন আলমারি খুলে দেখতে পাই হাজার হাজার খালি বিল ভাউচার। সেখানে আছে কুমিল্লার স্বনামধন্য অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নতুন বিল-ভাউচারের শয়ে শয়ে বই।
সমন্বয়করা আরও বলেন, এসব বিল-ভাউচার কেন রাখা হবে? যদি প্রতিষ্ঠান ব্যয় করে তাহলে ব্যয় করা বিল ভাউচার থাকবে। যদি কোনো প্রয়োজন থেকেও থাকে তাহলে এক দুইটা বা সামান্য সংখ্যক থাকতে পারে। কিন্তু কার্টনে কার্টনে ভর্তি করে বিল-ভাউচার রাখার উদ্দেশ্য কি? অফিস কক্ষ থেকে এসব উদ্ধারের পর আমরা বিভিন্ন বিভাগে যাই। আমরা বিভিন্ন বিভাগেও এসব খালি বিল-ভাউচারের বই পাই। পরে আমরা তা অধ্যক্ষ স্যারের সামনে দিয়ে আসি।
এ বিষয়ে হিসাবরক্ষক সাইফুদ্দিন সুমন বলেন, এসব বিল ভাউচার অধ্যক্ষ রতন কুমার সাহার সময় থেকে চলে আসছে। এগুলো খালি ছিল আমরা স্পর্শ করিনি। অর্থ লেখা ও তারিখবিহীন লেখা বিল ভাউচার সম্পর্কে জানতে চাইলে সুমন বলেন, এসব বিষয়ে আমরা কিছু জানি না।
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ আবুল বাশার ভূঁঞা বলেন, ভিক্টোরিয়া কলেজের দুর্নীতি নিয়ে দুদক তদন্ত করছে। যদি কেউ অপরাধ করে থাকেন দুদক দেখবে৷ আমাদের উচিত দুদককে সহযোগিতা করা।
কলেজ প্রশাসন এ বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেবে কি-না এমন প্রশ্নে অধ্যক্ষ বলেন, কলেজ প্রশাসন থেকে আমরা এই বিল ভাউচারের বিষয়ে একটি কমিটি করব৷ কমিটি তদন্ত শেষে অনিয়মের সত্যতা পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।