উপদেষ্টা নাহিদের স্মারক গ্রহণ না করাকে ‘শিশুসুলভ’ বললেন অভিযুক্ত শিক্ষক
রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম। সেই অনুষ্ঠানের মঞ্চে উপদেষ্টার পাশাপাশি বঙ্গবন্ধু পরিষদ নেতা অধ্যাপক কমলেশ চন্দ্র দাস ও কলাম লেখক ড. শফিকুর রহমানকে সম্মাননা স্মারক দেওয়া হয়। পরে উন্মুক্ত প্রশ্নোত্তর পর্বে শিক্ষার্থীরা ওই দুই শিক্ষককে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানবিরোধী ও ফ্যাসিস্টদের দোসর হিসেবে তুলে ধরেন।
দুই শিক্ষার্থীর দেওয়া তথ্যে শনিবার (১২ সেপ্টেম্বর) দুপুরে আয়োজিত অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি উপদেষ্টা নাহিদ সম্মাননা গ্রহণ না করার ঘোষণা দেন। উপদেষ্টার এই সিদ্ধান্তকে 'শিশু সুলভ কাজ' বলে দাবি করেছেন অভিযোগ ওঠা কলা অনুষদের ডিন ড. শফিকুর রহমান। এতে কলা অনুষদকে অপমানিত করা হয়েছে বলেও দাবি করেছেন তিনি। শফিক আশরাফ নামে নিজের ফেসবুক পোস্টে এই দাবি করেন ড. শফিক।
ফেসবুক পোস্টে ড. শফিক দাবি করেন, আবু সাঈদ শহীদ হওয়ার পর সর্বপ্রথম কলা অনুষদ শোক প্রস্তাব জানিয়েছিল। আবু সাঈদ শহীদ হওয়ার পর কলা অনুষদের ডিন জানাজায় ছুটে গিয়েছিলেন। তিনি আরও লেখেন, আজকে কলা অনুষদের ডিনের দিকে আঙুল তুলে অসম্মান করা হলো। ব্যক্তি আর অনুষদের ডিন দুইটা আলাদা বিষয়। অনুষদের ডিনকে অসম্মান করা মানেই গোটা অনুষদকে অসম্মানিত করা।
অধ্যাপক শফিক লেখেন, আজকে কলা অনুষদকে মঞ্চে তুলে অসম্মানিত করা হয়েছে। একজন শিক্ষার্থীর বক্তব্য শুনে কোনোরূপ যাচাই-বাছাই ছাড়াই উপদেষ্টা নাহিদের সম্মাননা স্মারক প্রত্যাখান করা অত্যন্ত শিশুসুলভ কাজ হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা অনুষদের এই অসম্মানে আমি ভীষণ মর্মাহত।
যে কারণে স্মারক গ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত
উন্মুক্ত প্রশ্নোত্তর পর্বে প্রধান অতিথি নাহিদ ইসলামকে উদ্দেশ করে শিক্ষার্থী রাইসুল ইসলাম বলেন, আপনার বক্তব্যের প্রেক্ষিতেই বলতে চাই, এখনও বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে আওয়ামী লীগের রাজনীতি এবং দোসর রয়েছে। সেই দোসররা এখনও বলবৎ আছে। আমাদের এই মঞ্চে বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ড. কমলেশ রায় আছেন। উনি বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি। ওই পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন মশিউর রহমান, যিনি ছাত্রদের বিরুদ্ধে সরাসরি হামলায় নেতৃত্ব দিয়েছেন। তিনি আজ মঞ্চে এবং তাকে সম্মাননা স্মারক দেওয়া হলো। মঞ্চে কলা অনুষদের ডিন ড. শফিকুর রহমান স্যার উপস্থিত আছেন। তিনি বিগত ১৩ আগস্ট দৈনিক কালেরকণ্ঠে একটি কলাম লেখেন। সেই কলামে তিনি লিখেছেন, আবু সাঈদ নিহত হওয়ার পরও পরিস্থিতি সামলানোর পর্যায়ে ছিল। আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা জানতে চাই—আবু সাঈদের প্রাণের বিনিময়ে আর কী সামলানোর মতো ছিল, সেটা আমরা জানতে চাই। ওনার কাছে আমরা ব্যাখ্যা চাই। ওনাকেও স্মারক সম্মাননা দেওয়া হলো। তখন আমরা আন্দোলন করে যদি আমরা আজ এই দিনটা দেখতে পাই—যারা স্বৈরাচারের দোসরগিরি করেছেন, তাদেরকে সম্মামনা স্মারক দেওয়া হচ্ছে, মঞ্চে বসানো হচ্ছে, আমরা এটা মেনে নিতে পারি না।
পরে প্রশ্নের উত্তর দিতে এসে উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেন, আমরা সরকারে থেকেও বিভিন্ন জায়গায় বলেছি, যারা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন তারাও একথাটি বলছেন—আমাদের অভ্যুত্থান শেষ হয়ে যায়নি। এই অভ্যুত্থানকে আরও বিপ্লবে নিয়ে যেতে হবে। প্রয়োজনে আরও একটি গণঅভ্যুত্থানও করতে হতে পারে। কারণ, আমরা মনে করছি, ফ্যাসিস্ট কাঠামো এখনও রয়েছে। আমাদের একদফা দাবি ছিল সেই ফ্যাসিবাদী শাসনব্যবস্থার বিলোপ ঘটনো। সেটি যেমন রাষ্ট্রে, সমাজে একইভাবে বিশ্ববিদ্যালয়েও।
নাহিদ ইসলাম বলেন, এই বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন ভিসি এসেছেন। তার কাছে আমার আবেদন থাকবে যাতে এসব বিষয়কে তিনি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখেন। আপনারা যে বিষয়ে অভিযোগ করলেন, সে বিষয়টি আমার জানা ছিল না। যেহেতু এই মঞ্চ থেকে যারা ক্যাম্পাসে আওয়ামী লীগ এবং স্বৈরাচারের দোসর তাদেরকে স্মারক সম্মাননা দেওয়া হয়েছে; ফলে একই মঞ্চ থেকে আমাকে যে সম্মাননাটি দেওয়া হয়েছে তা আমি গ্রহণ করছি না। হয়তো কোনো একদিন ফ্যাসিবাদমুক্ত এই বেরোবিতে আসব। আপনাদের সব দাবি-দাওয়া পূরণের সক্ষমতা নিয়ে সামনে এসে দাঁড়াব। সেদিনই আমি এই সম্মাননাটি গ্রহণ করব।
পরে যা ঘটেছিল
উপদেষ্টা নাহিদের বক্তব্যের পর মঞ্চে থাকা অভিযুক্ত কলা অনুষদের ডিন ড. শফিকুর রহমান নিজেই মাইকের সামনে আসেন। তিনি দাবি করেন, তার কলাম আন্দোলনের বিপক্ষ ছিল না। তবুও যেহেতু শিক্ষার্থীরা আমার কলামকে ভালোভাবে নেননি। সে কারণে আমি আজকের সম্মাননা স্মারক প্রত্যাহার করে নিলাম। এরপর তিনি মঞ্চে বসে থাকা অভিযুক্ত আরেক শিক্ষক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ও বঙ্গবন্ধু পরিষদ সভাপতি ড. কমলেশ রায়ের পাশে গিয়ে বসেন। নাহিদ ইসলাম মঞ্চ ছাড়ার পর তারা মঞ্চ ছাড়েন।