ঢাবির ১২৮ জন বহিষ্কারের তালিকায় জবি ও বাঙলা কলেজ শিক্ষার্থীর নাম!

২০২৪ সালের ১৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাসে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় অভিযুক্ত ১২৮ জনকে বহিষ্কার করে ঢাবি কর্তৃপক্ষ। গতকাল সোমবার (১৭ মার্চ) সিন্ডিকেট সভায় বহিষ্কারের এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
আজ মঙ্গলবার (১৮ জুলাই) তদন্ত কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে ১২৮ জনকে বহিষ্কারের তালিকা প্রকাশ করা হয়। তালিকাটি প্রকাশের পরই এ নিয়ে শিক্ষার্থী ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা আলোচনা ও সমালোচনার দেখা দিয়েছে।
বহিষ্কারের তালিকায় আলোচিত বেশ কিছু নাম বাদ পড়ার দাবি করেছেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের দাবি সরাসরি ভিডিও ফুটেজ ও প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও কয়েকজন ছাত্রলীগনেতার নাম তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়নি। তদন্ত কমিটির তালিকায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্ভুক্ত নয় এমন কিছু ব্যক্তির নাম থাকায় তদন্ত প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
বহিষ্কৃত ১২৮ জনের তালিকায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) ছাত্রলীগের সহসভাপতি ইব্রাহিম হোসেন সানিম, জবির মার্কেটিং বিভাগের ছাত্রলীগের সভাপতি মাহমুদুল হাসান আকাশ, সরকারি বাঙলা কলেজের মো. আক্তার হোসেন রুমন এবং কুয়াকাটা ছাত্রলীগের রুবেল খানের নাম রয়েছে, যারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নন।
অন্যদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত এবং বিজয় একাত্তর হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইউনুস আলীর মতো অভিযুক্ত নেতাদের নাম তালিকায় নেই। সেই সঙ্গে নেই কোনো ছাত্রলীগের নেত্রীর নামও।
এই বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী রিয়াদ হোসাইন বলেন, হামলার স্পষ্ট ভিডিও ফুটেজ থাকা সত্ত্বেও বহু অভিযুক্তকে ছাড় দেওয়া হয়েছে। এই তালিকা অসম্পূর্ণ ও ত্রুটিপূর্ণ। অবিলম্বে সংশোধন করে প্রকৃত অপরাধীদের নাম প্রকাশ করতে হবে। এ তালিকা প্রস্তুত করতে যারা জড়িত তাদেরও তদন্তের আওতায় আনা উচিত।
উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মনোয়ার হোসেন প্রান্ত বলেন, ১৫ ও ১৬ জুলাইয়ের হামলায় নেতৃত্বদানকারী ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতাদের নাম এই তালিকায় নেই। অথচ তাদের বিরুদ্ধে একাধিক প্রমাণ রয়েছে। প্রশাসনের সিন্ডিকেটে দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের সমর্থকরা থাকায় স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী এই তদন্তে প্রভাব ফেলেছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে হবে।
শিক্ষার্থীদের দাবি, হামলার ঘটনায় জড়িত ছাত্রলীগের সবাইকে শাস্তির আওতায় আনতে হবে।
এ বিষয়ে ঢাবির ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মুনসী শামস উদ্দিন আহম্মদ বলেন, ‘হামলায় জড়িত শিক্ষার্থীদের সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্তে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার কার্যকর করা হয়েছে। এ তালিকায় অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নাম তালিকাভুক্ত রয়েছে। তাদের বহিষ্কারের আনুষ্ঠানিক অনুরোধসহ সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে চিঠি পাঠানো হবে।
গত বছরের জুলাই মাসে সরকারবিরোধী বিক্ষোভের সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ও এর আশপাশে শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষের ওপর সশস্ত্র হামলা, নির্যাতন এবং উত্তেজনা সৃষ্টির ঘটনা ঘটে। এরপর ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতন এবং শেখ হাসিনা পালিয়ে গেলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এসব ঘটনা তদন্ত শুরু করে।