কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভুয়া সনদে পেশ ইমাম নিয়োগের অভিযোগ

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অভিজ্ঞতার ভুয়া সনদে এবং নিয়োগের শর্তপূরণ ছাড়াই পেশ ইমাম পদে নিয়োগ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
গতকাল বুধবার (১৯ মার্চ) এসব অভিযোগ তুলে মানববন্ধন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী।
গত বছরের ২৩ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মো. মিজানুর রহমান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে পেশ ইমাম পদে নিয়োগের জন্য আবেদন চাওয়া হয়। বিজ্ঞপ্তির দুটি শর্ত অনুযায়ী, বড় কোনো মসজিদ থেকে কমপক্ষে পাঁচ বছরের ইমামতির অভিজ্ঞতা থাকতে হবে এবং শিক্ষাজীবনের কোনো পর্যায়ে তৃতীয় শ্রেণি গ্রহণযোগ্য নয়। নিয়োগপ্রাপ্ত সেই ইমাম দুটি শর্তই ভঙ্গ করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
অভিজ্ঞতা সনদে ঢাকার আফতাব নগরের লেকভিউ অ্যাভিনিউতে অবস্থিত বায়তুল মামুর জামে মসজিদে খতিব হিসেবে পাঁচ বছরের অভিজ্ঞতার সনদ দেখিয়ে আবেদন করেন নিয়োগপ্রাপ্ত ইমাম আব্দুল হাকিম। মসজিদ কমিটির সভাপতি আবু সুফিয়ান স্বাক্ষরিত সনদটিতে ১ জানুয়ারি ২০১৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত খতিব হিসেবে দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতা দেখানো হলেও খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৯ সালে মসজিদটি প্রতিষ্ঠিতই হয়নি।
এ বিষয়ে বায়তুল মামুর জামে মসজিদ কমিটির সভাপতি আবু সুফিয়ান বলেন, ‘আমাদের মসজিদটি যেখানে ২০২১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, সেখানে ২০১৯ সাল থেকে খতিব হিসেবে দায়িত্ব পালনের সুযোগ নেই। অভিজ্ঞতার সনদে আমি কোনো স্বাক্ষর করিনি।’
অন্যদিকে এই ভুয়া অভিজ্ঞতার সনদটি সত্যায়ন করেছেন নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার ও আইন কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান। এ বিষয়ে আইন কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘অভিজ্ঞতা সনদের মূল কপি দেখিয়ে তিনি ফটোকপিতে সত্যায়নের জন্য বললে আমি করে দিই। অভিজ্ঞতা সনদের সত্যতা সম্পর্কে আমি অবগত ছিলাম না।’
এ ছাড়া নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির শর্তে উল্লেখ ছিল শিক্ষাজীবনের কোনো পর্যায়ে তৃতীয় শ্রেণি গ্রহণযোগ্য নয়। কিন্তু আব্দুল হাকিম জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০১৫ সালে তৃতীয় শ্রেণিতে এলএলবি সম্পন্ন করেছেন, যা নিয়মের লঙ্ঘন।
এই নিয়োগকে কেন্দ্র করে আরেক পেশ ইমাম প্রার্থী আনোয়ার হোসেন দুর্নীতি দমন কমিশনের বিভাগীয় কার্যালয়ে অভিযোগ দায়ের করেছেন। এ ছাড়া স্বচ্ছতার সঙ্গে ইমাম নিয়োগের জন্য নিয়োগ বোর্ডে একজন আলেম রাখাসহ বিভিন্ন দাবিতে মানববন্ধন, গণস্বাক্ষর কর্মসূচিসহ বিভিন্ন কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
এ ছাড়া নিয়োগের আগেই মসজিদে নামাজ পড়ানো নিয়েও হয় সমালোচনা। ১ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটে তাকে অনুমোদন দেওয়া হয়, কিন্তু পুলিশ ভেরিফিকেশন ও নিয়োগ পাওয়ার আগেই তিনি কেন্দ্রীয় মসজিদে ইমামতি করেন।
নিয়োগপ্রাপ্ত পেশ ইমাম আব্দুল হাকিম বলেন, ‘ঢাকার বিভিন্ন মসজিদে আমার ইমাম এবং খতিব হিসেবে ১২ বছরের অভিজ্ঞতা রয়েছে। অভিজ্ঞতা সনদ দিলে ১২ বছরের সনদ দেওয়া যাবে। তাই সেটা একটা মসজিদে পাঁচ বছর করে দিয়েছি। মসজিদ কমিটির সভাপতি তখন দুবাই থাকায় তার পক্ষে অন্য একজন সই করেছে। আর তৃতীয় শ্রেণির বিষয়টা উল্লেখ না করলেও পারতাম আমি। কারণ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগ থেকে আমার অনার্স-মাস্টার্স কমপ্লিট করা। এলএলবি আমার অতিরিক্ত অভিজ্ঞতা।’
নিয়োগের আগে নামাজ পড়ানোর বিষয়ে আব্দুল হাকিম বলেন, ‘আমি ওইদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের মসজিদে নামাজ পড়তে যাই। তখন কিছু মানুষের অনুরোধে আমি নামাজ পড়াই।’
এ ব্যাপারে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘সুস্পষ্ট নীতিমালার আলোকে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেওয়ার পর তার আবেদনটি এসেছে এবং সংশ্লিষ্ট দপ্তর যাচাই-বাছাই করে তার ইন্টারভিউ কার্ড ইস্যু করেছে। পরবর্তীতে তার লিখিত, মৌখিক ও ব্যবহারিক পরীক্ষা হয়। বাছাই বোর্ডে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগ এবং ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ছিলেন। সবকিছু বিবেচনা করে তাকে বাছাইবোর্ড কর্তৃক সুপারিশ করা হয়েছে। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ পর্ষদ সিন্ডিকেট থেকে এই সুপারিশ অনুমোদন করা হয়। পুলিশ ভেরিফিকেশনের পর তাকে নিয়োগ দেওয়া হয়। এখন যেসব কথাগুলো আসছে সেসব খতিয়ে দেখব।’
মানববন্ধনে ফিল্ম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী ইনাজমুল হক অভি বলেন, ‘ইমাম নিয়োগে কারচুপি হয়েছে এটা পরিষ্কার। ইমামের অভিজ্ঞতা সনদ ভুয়া, সার্টিফিকেট ও জাতীয় পরিচয়পত্রে জন্মসালের মিল নেই, তৃতীয় শ্রেণির রেজাল্ট এসবকিছু তার নিয়োগকে বিতর্কিত করেছে। আমরা ধর্ম নিয়ে কোনো হাসি-ঠাট্টা চাই না। আমরা চাই, অনতিবিলম্বে তার নিয়োগ বাতিল করে নতুন ইমাম নিয়োগের প্রস্তুতি নেওয়া হোক।’